লকডাউনে নারায়ণগঞ্জে চরম ভোগান্তিতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা

আপডেট: জুলাই ১, ২০২১
0
poshak

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন চলছে। এ সময় গার্মেন্টস সহ শিল্প কারখানা চালু রাখায় নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যানবাহন না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১ লা জুলাই) সকালে জেলা শহর ও শহরতলীর ফতুল্লার বিভিন্ন সড়কে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রিকশা ও ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে গার্মেন্টস কর্মীরা রিকশায় না চড়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লকডাউনের প্রথম দিনে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এদিকে পরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে কারখানামুখী শ্রমিকরা। সরকারঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। লকডউন কার্যকরে জেলায় জেলায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ডিসিও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সেনাবাহিনীর ৫টি দল ও ৩ প্ল্যাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ২০ টিম ও জেলা পুলিশের ৩১ টিম কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য রোভার স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সকালে সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের মন্ডলপাড়া, ২নং রেই গেইট, চাষাঢা চত্ত্বর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ সাইনবোর্ড সহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কগুলোতেও রয়েছে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল।
সকাল আটটার দিকে চাষাঢায় মডেল ডি ক্যাপিটাল, ফকির নিটওয়্যার, নিট কনসার্নসহ কয়েকটি রপ্তানীমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জটলা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শ্রমিক পরিবহন না করায় শ্রমিকবাহী বাস থেকে থামিয়ে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার সৈয়দপুরের ফকিরবাড়ি থাকেন জাকির হোসেন। চাকরি করেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলির পোশাক কারখানা নীট কর্নসানে তিনি বলেন, ফকিরবাড়ি থেকে দ্বিগুন ভাড়ায় শহরের ডিআইটি আসতে ইজিবাইকে ওঠেন। পুলিশি বাধায় অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতে হয়। বাকি পথ হেঁটে এসে ডিআইটি থেকে কারখানার বাসে ওঠেন। তবে সেই বাস থামিয়ে দেওয়া হয় চাষাঢায়। একই স্থানে সেন্সিবল গার্মেন্টসের যাত্রীবাহী তিনটি বাস থামিয়ে প্রায় দেড’শ শ্রমিককে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ক্ষুব্দ-বিরক্ত পোশাক শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরি খোলা রাখছে কিন্তু গাড়িগুলো কেন বন্ধ রাখলো?। সব যখন বন্ধ তাহলে ফ্যাক্টরিও বন্ধ দিক। আমাদের এইভাবে হয়রানি করার কোনো মানে নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, লকডাউনের নামে আমাগো মতো গরীবরে যেন কষ্ট না দেয়।’
মডেল ডি ক্যাপিটালের শ্রমিক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘কর্মস্থলে না গেলে চাকরি থাকবে না, না খেয়ে মরতে হবে। তখন মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে বড়লোকরা তাদের প্রাইভেট কার দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো প্রাইভেট করা নাই। এইযে আমরা পায়ে হেঁটে যাচ্ছি। এতে কি আমাদের হয়রানি হচ্ছে না, ভোগান্তি হচ্ছে না?। প্রতিটি শ্রমিককে কর্মস্থলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের।’
ফতুল্লার পাগলা এলাকায় বসবাসকারী বিসিক শিল্পনগরীর রপ্তানীমুখী একটি পোষাক তৈরী কারখানার নারী শ্রমিক রুপা আক্তার জানায়, কঠোর লকডাউনে যানবাহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস চালু রেখেছে। এতে করে চাকুরী বাঁচাতে বাধ্য হয়ে গাড়ী না পেয়ে পায়ে হেটে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। বিশ টাকার ভাড়া সত্তর টাকা চাওয়া হচ্ছে। এতো টাকা দিয়ে তার যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পায়ে হেটে যাচ্ছেন তিনি। তার মতো অনেককেই পায়ে হেটে নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে।
চাষাঢায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, সকাল ছয়টা থেকে আমরা দায়িত্বে আছে। জরুরি পরিশেবা, পণ্যবাহী গাড়িগুলো আমরা সহজে যেতে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ ও গাড়ি চেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।

এম আর কামাল