লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যায় ভাসছে আর সরকার প্রধান শত কোটি খরচা করে বিদেশীদের নিয়েভোসছে আনন্দে — রিজভী

আপডেট: জুন ১৯, ২০২২
0

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন , ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। এমন মহা দুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদূর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে।

প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বিভৎসতা! কি অমানবিকতা! অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানি বন্দি মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। ‘

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গনমাধ্যমকে ত্রাণ বরাদ্দের যে তথ্য দিয়েছেন তার বাস্তবতা পর্যালোচনা করে রিজভী বলেন ,” এর মধ্যে সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রান প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্ধ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত: ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্ধ পায়নি বন্যার্তরা। ”

আজ দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ সব কথা বলেন।

করোনা মোকাবেলায় যেমন এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার একবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতিতে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এই ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি দুর্যোগের সময়ে, জনগণের কষ্টের সময়ে, সরকার ব্যস্ত হয়ে যায় উৎসব নিয়ে আনন্দে। করোনায় যখন মানুষের জীবন-মরণ লড়াই চলছিল তখন জন্ম শত বার্ষিকীর উৎসবে মত্ত ছিল তারা।

এখন মৌজ মাস্তি করছে পদ্মা সেতু নিয়ে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। নাচ গান করতে হবে।

আতশবাজী ফুটাতে হবে। বর্ণাঢ্য লেজার শোর আয়োজন করতে হবে। সারাদেশে একসঙ্গে বেলুন উড়াতে হবে। পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বিগ স্ক্রীনে দেখাতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে সারাদেশের মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন আনন্দ উৎসব করতে। দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে।

জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মান করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনিহা দেখাবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এসব দেখে জনগণ মনে করে ফেরাউনের শাসনও শেখ হাসিনার শাসনের কাছে হার মানবে।
এখানেই থেমে নেই। দেশের সংবাদপত্র এবং সকল মিডিয়াকে সরকার লিখিতভাবে ফরমান জারি করেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

মৌখিকভাবে বলা হয়েছে কেউ নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।কয়েকদিন আগে ভারত থেকে একদল সাংবাদিক ভাড়া করে এনে পদ্মা সেতু দেখানো হয়েছে। তাদেরকে এই সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার স্তুুতি বন্দনা করে রিপোর্ট লেখার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।