লার্ভা সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, ১৫ মিনিটে মশককর্মী পৌঁছে যাবে—- মেয়র তাপস

আপডেট: জুলাই ৫, ২০২৩
0

এডিস মশার প্রজননস্থল কিংবা লার্ভা পাওয়া যেতে পারে এমন স্থান ও স্থাপনার তথ্য দিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকাবাসীর দায়িত্বশীল সহযোগিতা চেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে ১৫ মিনিটেই করপোরেশনের মশককর্মী সংশ্লিষ্ট স্থানে পৌঁছে মশার লার্ভা ধ্বংসের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ বুধবার (৫ জুলাই) সকালে সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিল জল নিষ্কাশন যন্ত্র পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমি বারবার বলেছি, আবারও ঢাকাবাসীকে বিনীত অনুরোধ করছি — আপনারা যেখানে মনে করবেন যে লার্ভা পাওয়া যেতে পারে বা আশঙ্কা করবেন পানি জমে আছে তাই লার্ভা হতে পারে — তাহলে তা আমাদেরকে জানান। জানানো মাত্রই ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের মশককর্মী, মশক সুপারভাইজরসহ গিয়ে সেই লার্ভা ধ্বংস করে, পানির আধার বিনষ্ট করে সেই জায়গা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিতে পারবে। আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমাদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সহযোগিতা করুন। পানি কোথাও জমতে দেবেন না। পানির উৎস ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্ত হতে পারব।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এবার ডেঙ্গু আগেই চলে এসেছে। যে সময় তীব্র দাবদাহ ছিল সেই সময়েও ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। অথচ সেই সময় হওয়ার কথা নয়। সে বিষয়গুলো আমরা আমলে নিচ্ছি, আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করছি। ২০২১ সালে আমরা দুই মাসের কার্যক্রম নিয়েছি। সেটাকে বৃদ্ধি করে এখন আমরা চার মাসের কার্যক্রম নিয়েছি। আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। কার্যক্রমও বৃদ্ধি করছি। এমন কেউ বলতে পারবেনা — কোনো ঠিকানা, কোনো রোগী, কোনো স্থাপনায় লার্ভার তথ্য দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের মশককর্মী যায়নি।”

ডেঙ্গ রোগ নির্মূল করা যায় না বরং নিয়ন্ত্রণ করা যায় জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ডেঙ্গু রোগ নির্মূল করা যায় না। পৃথিবীর কোনো দেশ করতে পারেনি। কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা যদি উন্নত দেশের সাথে তথ্য ও পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন অন্যান্য দেশের তুলণায় এখন পর্যন্ত আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। যদিও আমাদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত্যু হার হ্রাস করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও নজর দিতে হবে। চিকিৎসা সেবার মান ও পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একজন রোগীও যেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় না যায়, এ জন্য প্রাক যে কার্যক্রম ও চিকিৎসাসেবা, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই মৃত্যুর হার কমাতে পারব।”

প্রতিকূল পরিবেশেও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়েছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এডিস মশার যে বিস্তৃতি তা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও আমাদের বৃষ্টির পরিমাণ অন্য দেশের তুলনায় বেশি হয়েছে। তারপরও আমরা সেটা করতে পেরেছি। বুঝতে হবে — এটা সামগ্রিক জলবায়ু পরিবর্তন, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ ও ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে এডিস মশা আমাদের দেশে বিস্তৃত হয়েছে, প্রজনন হার বৃদ্ধি করে চলেছে। সেটাকে রোধ করতে হলে সকলকে মিলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”

পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও এডিসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চলটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। সেখানকার বনানী-গুলশানের সঙ্গে আমাদের তারতম্য রয়েছে। ওদের সাথে আমাদের মেলালে হবে না। বারিধারার সঙ্গে যদি মেলান তাহলে হবে না। উত্তরা রয়েছে, মিরপুর রয়েছে — সেখানে পরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। আমাদের এখানে পরিকল্পিত নগরায়ণ কম হয়েছে। এখানে জনসংখ্যা বেশি, জনসংখ্যার ভার বেশি। আমাদের এখানে ছোটখাটো স্থাপনা বেশি। প্রতিকূলতা বেশি। সেই প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হচ্ছি। আমরা এসব প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করিনি। এ সকল প্রতিকূলতা নিয়েই সেভাবে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি। এ জন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন বিকেলে ছয়জন নিয়োজিত করেছি। এর জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োজন সে পরিমাণ কীটনাশক তাদের দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ যান-যন্ত্রপাতি দরকার সে পরিমাণ যন্ত্র তাদের দেওয়া হয়েছে। সে পরিমাণ নিবিড় তদারকি আমরা করছি।”

ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে চাই উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা ঢাকাবাসীকে জলামগ্নতা থেকে মুক্ত রাখতে চাই। এজন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল এবং নর্দমা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার পর ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা যেমন নিয়মিত বাৎসরিকভিত্তিতে সেগুলো পরিষ্কার করছি, তেমনি নিজস্ব অর্থায়নে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো ও নর্দমা নির্মাণ করেছি, জলাধারের আয়তন বৃদ্ধি করেছি। তারপরও আমরা লক্ষ্য করেছি, গত ঈদুল আজহার সময় যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা ও জলমগ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। যা দীর্ঘক্ষণ ছিল। এই সমস্যাকে সমাধান করার জন্য আমরা কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করবো। তার মধ্যে প্রথম আমরা আজকে সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে যে জলাধার রয়েছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজউক এবং ওয়াসার কর্তৃক নির্মিত ‘স্ট্রং সুয়ারেজ ডাইভার্সন স্ট্যাকচার’ (এসএসডিএস) পরিদর্শনে এসেছি।”

ঢাদসিক মেয়র আরো বলেন, “এই এসএসডিএসের কারণে পান্থপথ বক্স কালভার্ট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বা প্রবাহের যে গতিধারা, সেটি রোধ হয়ে গতি কমে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এজন্য আমরা সরেজমিনে এটি পরিদর্শনে এসেছি। কারণ পান্থপথ বক্স কালভার্ট দিয়ে একটি বৃহৎ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে তিনটি সুইস গেটের মতো রয়েছে। এর একটিও যদি বন্ধ থাকে, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে, তাহলে পানি প্রবাহের গতি হারায়। যার ফলে কাঁঠালবাগান, গ্রিন রোড এবং ধানমন্ডি ২৭ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হয়। এজন্য আমাদের সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনায় আসতে হবে।”

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরো বলেন, “আমরা দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র দুই বছর হয়েছে। এর মধ্যে আমরা ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প-মেয়াদী কার্যক্রম নিয়েছি। এখন আমরা মধ্য-মেয়াদী এবং দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনায় যাবো। এর জন্য এসব অবকাঠাগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে এর কোনো ক্ষতি না হয় এবং সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হয় সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।”

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।