লালকুঠির সামনে নদীর অববাহিকা দখলমুক্ত করতে বিআইডব্লিউটিএ-কে মেয়রের নির্দেশ

আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪
0

ঐতিহাসিক লালকুঠি তথা নর্থব্রুক হলের সামনে দীর্ঘদিন ধরে দখলকৃত অবস্থায় থাকা নদীর অববাহিকা দখলমুক্ত করতে বিআইডব্লিউটিএ-কে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে লালকুঠিতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শনকালে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ- এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই নির্দেশনা দেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার এ সময় গণমাধ্যমেকে বলেন, “এখানে বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান সাহেব আছেন। আমি ওনাকে লালকুঠির সামনের অববাহিকা থেকে এসব স্থাপনা সরাতে বলেছি। এ বিষয়ে আমি নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাথেও কথা বলেছি। ওনাদের কিছু খরচ আছে। কিন্তু আমরা বলেছি, ওনাদের খরচটা আমরা বহন করব। আসলে উদ্যোগের বিষয়ে ওনারা যদি উদ্যমী হন, তাহলে আমরা কাল থেকেই কাজ শুরু করতে পারব।”

লালকুঠির সামনের রাস্তায় পার্কিং দিয়েও দখল করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র বলেন, “আপনারা দেখেছেন, নদীর অববাহিকা দখল অবস্থায় আছে। আমরা আগে থেকেই বলেছি, তাদের এখানে যে সকল অবকাঠামো, পন্টুন ও লঞ্চঘাট আছে সেগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য। এছাড়াও আমাদের সামনের এই রাস্তাটা দখল করে সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই আপনাদের মাধ্যমে আমি আবারও বলব, অবিলম্বে এই জায়গাটা খালি করে দিতে। এ স্থাপনার দুই সীমানার কোণা থেকে ৪৫ ডিগ্রিতে নদীর সীমানা আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেটা হলে নদী থেকে সুন্দরভাবে স্থাপনাটা দেখা যাবে। রাতে প্রজ্জ্বলিত থাকবে। সবাই ঢাকাকে উপভোগ করবে।”

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পুরোনো আদলেই এটি সংস্কার করা হচ্ছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “লালকুঠি আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। যেটা লর্ড ব্রুকের সময় ১৮৭৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি মূলত টাউন হল ছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তখন ওনাকে বাংলাদেশে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেটা এই ভাবনেই দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং আমরা সেভাবেই গুরুত্ব দিয়ে লালকুঠিকে পূর্ণভাবেই আমরা সংস্কার করছি। এটি অত্যন্ত দুরুহ। আমরা এই স্থাপনার পুরনো ছবি দেখে সেই নকশা অনুযায়ী এটাকে সংস্কার করছি।”

এ সময় উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান গণমাধ্যমেকে বলেন, “এখানে যেহেতু একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে, সেহেতু সিটি করপোরেশন, বিআইডব্লিউটিএ এবং আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মিলে সামনের স্থাপনা সরাতে যৌথভাবে কাজ করব। আশা করি, পরিকল্পনা করেই আমরা এর একটি সুন্দর সমাধান করতে পারব।”

এর আগে আজ সকালে রাজধানীর খিলগাঁও-এ গোড়ান সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

এ সময় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এই সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র হবে পরিবেশ বান্ধব, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সম্বলিত ও ভূমিকম্প সহনশীল। এখানে পার্কিং, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, পানির পাম্প, কাউন্সিলর রুম, হেলথ কেয়ার, টয়লেট, ব্যায়ামাগর, ভোজন হলসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, “পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও উপাদান ব্যবহার করে সরকারি স্থাপনা নির্মিত হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিজমির মূল্যবান মাটির অপচয় বন্ধ করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা-সহ সরকারের নির্মাণ ও পূর্ত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরসমূহের নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে কাজ করবে।”

পরিবেশমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, “গোড়ান সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ফলে এলাকার মানুষের অনেক মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। এই কেন্দ্রটিতে তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়াও, এই কেন্দ্রটি এলাকার মানুষের জন্য একটি মিলনস্থল হিসেবেও কাজ করবে।”

উল্লেখ যে, সিঙ্গেল বেইজমেন্টসহ ৬-তলা বিশিষ্ট গোড়ান সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। ৭.৪৬ কাঠা জমির ওপর নির্মিত এ কাজ আগামী ৩০ জুন ২০২৫ খ্রি. তারিখে সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কাউন্সিলরদের মধ্যে করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আনিসুর রহমান, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আরিফ হোসেন ছোটন, সংরক্ষিত আসন ১ এর ফারজানা ইয়াসমিন বিপ্লবী ও সংরক্ষিত আসন ১৬ এর নাসিমা আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।