শাওনকে পুলিশে গুলি করে হত্যা করেছে —-অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মীর্জা ফখরুল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
0

‘বিশ্বে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না’-এই কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে বড় বড় কথা বলছেন বিদেশে গিয়ে। মার্কিনদের ওখানে গেছেন ওখানে গিয়ে বলছেন, যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চাই না যুদ্ধ পৃথিবীতে, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা।”

‘‘ কিন্তু তার(প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটা মানায় না। তিনি নিজে এদেশে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। সরকার যখন এই হত্যাগুলো করছে, গুম হয়ে গেছে ৬‘শ ওপরে মানুষ … ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম…।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে শত শত মানুষ তারা থানায় নিয়ে গিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে, সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এই কারণে আজকে একটা অত্যন্ত এলিড ফোর্স র‌্যাব যারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছিলো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এই সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদেরকে আজকে নিষেধাজ্ঞা পড়তে হয়েছে, ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে।এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তারা এটা কিছু কোনো করতে পারে না।”

‘‘ তারাই নির্দেশদাতা। তাদের বিরুদ্ধে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে জনগন দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে যে, তোমাদেরকে আর দরকার নাই। বহু হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ।”

‘শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই আন্দোলন এই সংগ্রাম, এই আত্মদান, এই রক্তপাত –এটা বিএনপির জন্য নয়, এটা পুরো জাতির জন্যে। আজকে সমস্ত জাতি একটা মহাসংকটে পড়েছে। আজকে ওরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, পত্র-পত্রিকাগুলো কেউ সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারে না- এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। আজকে পত্র-পত্রিকায় আপনারা খেয়াল করে দেখবেন বেশ কতগুলো পত্রিকায় বলেছে যে, শহীদুল ইসলাম শাওন যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আওয়ামী পন্থি মিডিয়া বলছে যে, তাকে নাকী পেছন থেকে ইট মারাতে সে মারা গেছে।”

‘‘ অথচ শাওনের যে ডেথ সার্টিফিকেট তাতে পরিস্কার করে বলা হয়েছে যে, মেসিভ ব্রেইন ইজুরি ডিউ টু গান শট। ছবিটা আমি দেখাবো না। এখানে শিশুরা আছে। আমার কাছে সেই ছবিও আছে(মোবাইল দেখিয়ে)। মাথার খুলি পর্যন্ত উড়ে গেছে। এই দেশে, এই রাষ্ট্রে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে আমাদের সেই সমস্ত ভয়াবহ গণতন্ত্র হরণকারীরা তখন লজ্জ্বায় ধিক্কার দেয়া ছাড়া আর কিছু আসে না।”

‘ফখরুল আবেগাক্রান্ত’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সারাদেশে জুড়ে আমরা আন্দোলন করছি জনগনের সমস্যাগুলো নিয়ে। এই আন্দোলনে ইতিমধ্যে আমাদের চারজন তরুন যুবক প্রাণ দিয়েছেন। গত পরশু মুন্সিগঞ্জের একজন যুব দল কর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজে মারা গেছেন।তার (শহীদুল ইসলাম শাওন) ছোট্ট আট মাসের একটা বাচ্চা, স্ত্রী, বাবা-মা-এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের জীবন-ধারণের জন্য একটা অটো চার্জার চালাতেন।”

‘‘ সেই ছেলে যখন দলের কর্মসূচি ছিলো সে সকলের সঙ্গে গিয়ে যখন প্রতিবাদ করছিলেন সেই সময়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট গণতন্ত্র বিরোধী সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ইনজোরড হয়। তারপর তাকে হাসপাতাল নিলে গত পরশু্ রাতে সে মারা যায়। এজন্য আজকে ভারাক্রান্ত, আমরা এখানে যারা আছি সবাই।”

এই সময়ে বিএনপির মহাসচিব আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, ‘‘ এটা শুধু আজকের দিনে নয়, সারাদেশে গত ১৫ বছর ধরে এই কষ্ট, হতাশা এবং ভয়ংকর একটা ত্রাসের মধ্যে বাস করছি।”

‘মুক্তিযুদ্ধকে তারা পুরোপুরি বিকৃত করছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। শুধু আংশিক নয়, পুরোপুরিভাবে একটা ভিন্ন নেরেটিভ একটা ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলো একদিনে নয়, দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম হয়েছে তাদের স্বাধীনতার জন্যে, তাদের স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতা তাদের অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। ওই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় না।”

‘‘ এমনকি যারা যুদ্ধ করলেন, স্বাধীরনতার ঘোষণা দিলেন, রনাঙ্গনে যুদ্ধ করলেন তাদের কথা কখনো উচ্চারণ করা হয় না, এমনকি প্রবাসী সরকারে যারা প্রবাসে থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানির নাম একবারও উচ্চারণ করে না। যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে রিভোল্ড করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করলেন, নিজে যুদ্ধ করলেন সেই মহান নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম একবারও উল্লেখ করা হয় না। বরঞ্চ তাকে কি করে খাটো করা যাবে, কি করে তাকে নির্মূল করা যাবে সেজন্য বিভিন্ন রকমের যেটা উচ্চারণ করতে ইচ্ছা করে না এরকম সমস্ত ইতিহাস তারা(সরকার) রচনা করছে এবং বলছে।”

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘ উদ্দেশ্য একটাই যে, জাতিকে সত্যিকার অর্থে প্রকৃত ইতিহাস জানানো। আজকে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটা যে এখানে বক্তব্য রাখলো সে জিয়াউর রহমান সাহেবের নাম উচ্চারণ করলো। অর্থাত ওই শিশুর উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান কিন্তু বেঁচে গেলেন ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে।”

‘‘ এরা(সরকার) আহম্মকের স্বর্গে বাস করে। এরা মনে করে যে, তারা কথা বললেই, মিথ্যা প্রচার করলেই ইতিহাস সেটা নিয়ে নেবে। ইতিহাস তো নেয় না, ইতিহাস যেটা সত্য তাই নেয়। সবসময়ই ইতিহাসকে কেউ ইচ্ছা করলেই বিকৃত করতে পারে না। আজকে জিয়াউর রহমান না, লক্ষ শহীদের না, লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার নাম কেউ কখনো ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।”

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথাগুলো তুলে ধরে তাকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণীয় উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিজয়ী প্র্রতিযোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় স্মরক ক্রেস্ট ও সনদপত্র।

‘তারেকের সমঝোতার রাজনীতি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি তার রাজনীতির শুরুটা করেছিলেন ফুল দিয়ে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা যে, সজীব ওয়াজেদ জয়(প্রধানমন্ত্রীর পুত্র) যখন দেশে এসেছিলেন এবং যিনি আওয়ামী লীগের প্রথম সভায় যোগ দিয়েছিলেন তখন তার কাছে ফুল দিয়ে উপহার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাত এই যে সমঝোতার রাজনীতি, গণতন্ত্রের যে সহনশীলতা তার নতুন দৃষ্টান্ত তিনি শুরু করেছিলেন।”

‘‘ পরবর্তিকালে গণতন্ত্রকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, বিএনপির রাজনীতিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি(তারেক রহমান) কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন শুরু করেছিলেন। তাকেও তারা(১/১১ সরকার) রেহাই দেয়নি, তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে এবং এখন( আওয়ামী লীগ সরকার) তাকে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে তাকে নির্বাসিত করে রেখেছে।”

রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সোহরাব উদ্দিন, শামসুজ্জোহা মেহেদি, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।