শিশু সন্তানের সামনে বিধবা মা নুরচান বেগম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২২ বছরের পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
0

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শিশু সন্তানের সামনে বিধবা মা নুরচান বেগম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২২ বছরের পলাতক আসামী আদম খান @ রফিক’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ৩১ মে ১৯৯৯ সালে আর্থিক লেনদেন এর জের ধরে আদম খান ভিকটিম নুরচান বেগম (৪০)’কে তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিন এর সামনে পার্শ্ববর্তী জনৈক আছমত আলীর ঘরে অমানবিকভাবে ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এতে ভিকটিম নুরচান বেগম ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চুনারুঘাট থানায় নুরচান বেগম এর ছেলে শফিক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজ্জু করে। যার নম্বর-০১, তারিখ ০১ জুন ১৯৯৯, জিআর-৮৪১/৯৯, ধারা-৩০২ পেনাল কোড।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করে। উল্লেখ্য, বর্ণিত ঘটনার ৭/৮ মাস পূর্বে ভিকটিমের স্বামী স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। বিধবার মৃত্যুতে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে পিতামাতা হারা হয়ে পরে।

আর্থিক সংকটের কারণে ভিকটিমের নিকটাত্মীয় (ফুপা) এবং এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালনা করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০০২ তারিখে বিজ্ঞ আদালত আসামী আদম খান’কে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আদম খান @ রফিক দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর যাবত পলাতক রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব এই আসামীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৯ এর অভিযানে গতরাতে রাজধানীর বাইপাইল, আশুলিয়া এলাকা থেকে আদম খান @ রফিক (৪৫), পিতাঃ মৃত কুটি মিয়া, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আদম খান @ রফিক হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।


গ্রেফতারকৃত আদম খান জানায়, হত্যাকান্ডের ০১ বছর পূর্বে আসামী আদম খাঁন ভিকটিম নুরচান বেগমের ছেলে অত্র মামলার বাদী শফিকের নিকট হতে ২০০০/- (দুই হাজার) টাকা ধার নেন। ইহার চার পাঁচ মাস পর শফিকের পিতা অর্থাৎ ভিকটিম নুরচান বেগমের স্বামী আব্দুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুবরণের পর নুরচান বেগমের পরিবার আর্থিক অনটনের কারনে গত ৩১ মে ১৯৯৯ সালে ভিকটিম পাওনা টাকা চাইলে গ্রেফতারকৃত আদম খান টাকা না দেয়ার তালবাহানা করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করে।

এসময় ভিকটিম প্রতিবেশী আছমত উল্লাহর নিকট তার তিন বছরের কোলের শিশু তাজউদ্দিনকে নিয়ে ঘটনার বিচার চাইতে গেলে আদম খাঁন পুনরায় আছমত উল্লাহর বসতঘরে এসে নুরচান বেগমকে গালিগালাজ এবং তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাম পাশের্^ আঘাত করে। এতে ভিকটিম নুরচান বেগম ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।

গ্রেফতারকৃত আদম খান @ রফিক আরও জানায় যে, বর্ণিত হত্যাকান্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে সিলেট শহরে সপ্তাহখানিক অবস্থান করে। অতঃপর নিজেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গোপন রাখার জন্য ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসে। ২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে, রফিকুল ইসলাম, পিতাঃ নুর ইসলাম, বর্তমান ঠিকানা-বাইপাইল, আশুলিয়া, ঢাকা নাম ধারণ পূর্বক একটি ভূয়া জন্ম সনদ তৈরি করে। ভূয়া সনদপত্রের মাধ্যমে সে একটি এনআইডি’র জন্য আবেদন করে, যেখানে তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মাদবপুর, হবিগঞ্জ উল্লেখ করে। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে এসময় ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং তার আসল নাম আদম খান এর পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামেই আশুলিয়ায় পরিচিত করে।

পরবর্তীতে সে জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি এবং স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করে। অতঃপর ধীরে ধীরে সে আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর সে তার গ্রামের বাড়ীতে যায় নাই।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।