সন্তপ্ত বিরহ টানে ভাদ্রের বর্ষা কখনো সাদা মেঘ কখনো কালো মেঘের ছায়া

আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২৩
0
autanm
pic desh janta .com

চলছে ভাদ্র মাসের ভরা ভাদর । কখনো সাদা মেঘের ঘনঘটা। আবার কখনো কালো মেঘপুঞ্জের এদিক সেদিক ছোটাছুটি। আবার কখনোবা গুমুর গুমুর মেঘের গর্জন। হঠাৎ আঁধারে ছেয়ে যায় চারদিক। এরপর নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি। ভাদ্রের বর্ষা চিরবিরহী সত্তা হয়ে নিদ্রাহারা রাতে হৃদয়ব্যাথার আর্ত হয়ে নামে। নিবিড় মেঘপুঞ্জ সন্তপ্ত বিরহকে টানে আবার জাগিয়ে তোলে হৃদয়মাঝের সুপ্ত পাগলকে।

চারিদিকে থেকে ঘিরে আসছে বৃষ্টি। বৃষ্টির অঝোর ধারা পড়ছে।বিদ্যুৎ এর ঝলক, প্রকৃতি পরিপূর্ণ , প্রকৃতি র আনন্দ উপচে পড়ছে।

এরকমই চিত্র দেখা যায় ভাদ্র মাসে। আষাঢ় শ্রাবণ দুইমাস বর্ষাকাল হলেও ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাস পর্যন্ত বর্ষা স্থায়িত্ব লাভ করে। বাংলার ষড়ঋতুর অন্যতম এক অনুষঙ্গ হল এই বর্ষা।

শরতের আকাশে বর্ষার মেঘদূতেরা পালা করে দখল নিয়েছে। ছন্দ পতন ঘটিয়েছে শরতের মেঘবৃষ্টির ধারাপাতে। টিনের চালায় বৃষ্টির নূপুর নিক্কনকে মনে হবে আষাঢ়ের নামতা পাঠ করছে।

এই সময়টায় আকাশে সাদা কালো মেঘেদের ছুটোছুটি দেখে মনে হবে মেঘেদের যুদ্ধ চলছে। রবীন্দ্রনাথের সুর ভেসে আসে “মেঘ বলেছে যাবো যাবো রাত বলেছে যাই/সাগর বলে কূল পেয়েছি আমি তো আর নাই…”। শরতের মধ্যভাগে মেঘমঞ্জরি বৃষ্টির ক্লাসিক্যাল সুরকে সঙ্গে নিয়ে বর্ষার কাছে শরত হেরে গিয়ে হেমন্তকে স্বাগত জানাতে বরণ ডালা সাজাবার পালা শুরু করেছে।

cloud in dhaka

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঢেউ বঙ্গোপসাগরে নাচন তুলেছে তারই রেশ গিয়ে পড়েছে ঋতুর পালাবদলে। ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনের’ সুর মালা শরতের গলে পরাতে এগিয়ে এসেছে প্রকৃতি। দুই ঋতুর ভাবের বদলে মধুর আড়ির এমন ছন্দ ধরাধামে লুকোচুরি খেলছে। যেখানে উদাসী মেঘলা মন ভেসে বেড়াচ্ছে সুদূর নীলিমায়।

যুগে যুগে শিল্পী কবি সাহিত্যিক মানব মনের হৃদয়নাভূতিকে মেঘের জলধারায় বৃষ্টিতে সঞ্চারিত করেছেন। যেখানে কখনও সখনও কোন ভালোলাগাও বিরহ কাতর যন্ত্রণায় বুক ভারি করে তোলে। ভালোবাসার গভীরে তলিয়ে যেতে থাকে। এমনই ধারায় শিল্প সাহিত্য ও সঙ্গীতে বর্ষা ও শরত পেয়েছে ধ্রুপদ লয়ের চিরন্তন মর্যাদা। মৃদু সুরের এমন ব্যঞ্জনা রাজধানী ঢাকায় কংক্রিটের বনে ধরা দেয় না।

the atunm

যেখানে বিকেলের সোনা রোদ ঢেকে গিয়েছে কালো মেঘের বৃষ্টির ধারায়। গ্রামের পথে পা বাড়ালে চোখে পড়বে : শরতে বর্ষার জল জমিতে থিতু হয়ে আছে। প্রতিচ্ছায়া পড়েছে নীল আকাশের মেঘের ভেলা। তারই ধারে গাঁয়ের লোক জাল ফেলেছে। কিছু দূরে খেয়াজাল ফেলেছে মাঝি।

শ্রাবণের গোধূলি বেলায় মনে হবে বর্ষা কবিগুরুর ভাষায় কথা বলছে ‘গোধূলি লগনে মেঘে ঢেকে ছিল তারা/ আমার যা কথা ছিল হয়ে গেল সাড়া/ হয়তো সে তুমি শোন নাই/ সহজে বিদায় দিলে তাই/আকাশ মুখর ছিল যে তখন ঝরঝর বারিধারায়…..।’ এমন দিনগুলোতে মানব মনও উদাসী হয়ে ওঠে।

মেঘের সঙ্গে মানুষের মনের তুলনা করা হয়। মেঘের মতোই মানুষের মনও কত বিচিত্র। মানব মনের অনেক কিছুই মেঘ ও বৃষ্টিকে ঘিরে হৃদয়ে দোলা দেয়। মেঘের পরে মেঘ জমে ঋতু কতই না খেলা খেলছে। বৃষ্টির মধ্যেই শরতের কাশবনের ফুল ফোটা শুরু হয়ে গেছে।