সময় নেই ;রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন: নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
0

সময় নেই, রাজপথের আন্দোলনের জন্য ‘অতিদ্রুত’ প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ সময় খুব কম। আমাদেরকে অতি নিজেদেরকে সংগঠিত করতে হবে, আসাদেরকে অতি দ্রুত জনগনকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে এই ভয়াবহ সরকার যারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”

‘‘ আজকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্বরণ করে, আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে আজকে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি। দেশনেত্রীকে মুক্তি করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে নিয়ে আসি, দেশে সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।”

দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘‘ এখন যে অবস্থা বা সংকট এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দল ও মতকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ওমিক্রনের দীর্ঘ এক মাস পর এই প্রথম বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

‘ওরা ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধুলিসাত করেছে’

ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই ছিলো আমাদের জাতি সত্ত্বা নির্মাণের প্রথম ভিত্তি। কিন্তু আজকে খুব দুর্ভাগ্যের কথা, সেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা ছিলো, যে আশা-আকাংখা ছিলো যে একটা স্বাধীন, সুস্থ, একটা গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজ নির্মাণ করা এবং তারই ধারাবাহিতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা লড়া্ই করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্যে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজকে সেই আশা-আকাংখা, সেই চেতনা আমাদের ধূলিসাত হয়ে গেলো।”

‘‘ আমরা অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে ধিক্কারের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে চেতনা ও আকাংখা তাকে এই আওয়ামী লীগ নামের একটা দল,যে দলটি একেবারে সমস্ত মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরে শেষ করে দিয়েছে। আজকে ৭০ বছর পরেও সত্যিকার অর্থে আমরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে পারি নাই।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে যারা ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন তারা যা চেয়েছিলেন আমরা কী বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে চালু করতে পেরেছি? পারিনি।”

‘‘ উপরন্তু আমরা দেখছি, আামাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি যে, আমাদের বাংলা ভাষা আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে এবং আমাদের সন্তানেররা, আমাদের ছেলেরা তারা ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন ভাষায় লেখা পড়া করছে এবং সবাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতির জন্য আমরা কখনোই আশা করিনি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে এই আওয়ামী লীগ সরকার তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিতভাবে বাংলাদেশের যে আলাদা সত্ত্বা, বাংলাদেশের যে আলাদা পরিচিতি-অস্তিত্ব সেটাকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন সত্যিকার অর্থেই একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”

‘‘ দেখুন এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেটাকে ভেঙ্গে ফেলেছে, আমাদের যে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিলো সেই ব্যবস্থাকে তারা ভেঙে ফেলেছে, আমাদের জনগনের যে ভোটের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকবার যে অধিকার, তাদের ন্যুনতম কর্মসংস্থানের অধিকার তা তারা ধবংস করে দিচ্ছে। তারা সমস্ত দেশটাকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেছে। একে একে শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করেছে, একে একে স্বাস্থ্য খাত ধবংস করেছে, অর্থনীতিকে তারা একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।”

দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার আবারো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘দুর্নীতি দমন কমিশনেও দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেখেছেন দুর্নীতিতে দেশ এখন ভরে গেছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের যে কর্মকর্তা যিনি অনেকগুলো দুর্নীতি মামলার দেখেছেন তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাত দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ করে ফেলা হয়েছে।”

‘‘ পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা কথা বলছেন সেই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেছে। সেই ফোনালাপে বলা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় যিনি এই সরকারের অনেক বেতন পাওয়া একজন উপদেষ্টা তার একটা প্রজেক্ট, সেই প্রজেক্ট পাস করার জন্য মন্ত্রী কথা বলছেন উপদেষ্টার সঙ্গে এবং সেখানে দুই বিচারককেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সচিবালয় ফাইল মুভমেন্ট করার কথা বলা হয়। আমরা সুস্পষ্ট করে বলেছি, আমরা জানতে এই কথোপকথনের মধ্যে কি আছে। এই কথোপকথনের মধ্যে যে বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে সেই বিষয়ের তদন্ত চাই। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। নইলে জনগনের কাঠ গগায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ ভাষা আন্দোলন ছিলো সেই পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে যে সিদ্ধান্ত তাকে না মেনে সেই চাপে মাথা নত না করে বীরের মতো সেইদিন আমাদের সেই পূর্বপুরুষরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। তারা পাকিস্তানিদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেছিলো।”

‘‘ এই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা, এই ভাষা দিবসে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে আমাদের মাথা নত না করা, এই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে যদি রুখে দাঁড়ানো যায় সাহসের সাথে তাহলে সেই দাবিকে আদায় করার শিক্ষা।”

ভাষা আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সকলকে সংগঠিত হওয়ার আহবান জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে এবং দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।