সরকারের দুর্নীতির কারণেই নিত্যপ্রেয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে—-মির্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ১১, ২০২২
0

সরকারের দুর্নীতির কারণেই নিত্যপ্রেয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সারা দেশ চিতকার করছে, সারাদেশের মানুষ বলছে যে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে-আমি আর পারছি না। তাতে কিছু যায় আসে না, না ঠিক আছে। উন্নয়ন তো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বললেন কি? রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এটা আমাদেরকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আরেকটা মিথ্যা কথা না। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের আগের থেকেই তো দাম বাড়ছে।”

‘‘ চালের দাম, তেলের দাম তো বাড়তেই আছে, পেঁয়াজের দাম বাড়তেই আছে। কারণ একটাই আপনারা সব লুট করছেন, চুরি করছেন, ডাকাতি করছেন। আর যারা দাম বাড়াচ্ছে তারা সব আওয়ামী লীগের সদস্য, আওয়ামী লীগের লোক।”

টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের চরম দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ তারা বলছে, আমি যখন সোয়াবিন তেল কিনতে পারি না, আমি যখন চাল কিনতে পারি না, আমি যখন চিনি কিনতে পারি না, লবন কিনতে পারি না, পেঁয়াজ কিনতে পারি না। বাসায় ফিরে গিয়ে আমার বাচ্চাগুলোর মুখে কি দেবো সেই চিন্তায় যখন পাগল হয়ে যাই তখন এই আপনাদের পদ্মাসেতু, উড়াল সেতু আর উন্নয়ন দেখে কি কোনো লাভ আছে? এটাই হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনের কথা।”

‘‘ আজকে প্রত্যেকটি মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্য আয়ের মানুষ তারা আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই যে করুন অবস্থা সাধারণ মানুষের এই সরকারের কিচ্ছু গায়ে লাগে না। তাদের মন্ত্রীরা সুন্দর সুন্দর কাপড় গায়ে দিয়ে চমতকার চমতকার জায়গায় এদিকে ফুল ওদিকে ফুল নিয়ে বসে তারা বক্তৃতা দেয়, বিবৃতি দেয়। কী বলে? আরে দাম তো একটু সারা বিশ্বেই বাড়ছে, সেই সঙ্গে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে গেছে।”

‘ক্রয় ক্ষমতা কাকে বলে ভাই’ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘‘ ক্রয় ক্ষমতা মানে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, টরেন্টো, নিউইয়র্কে যারা কেনাকাটা করে অথবা বাড়ি কিনেছে তাদের ক্রয়ক্ষমতার কথা বলছেন নাকী আমাদের অসহায় নিরহ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি জনতার কথা বলছেন। আমার কৃষক ভাইয়ের তো ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি।”

‘মুদ্রা স্ফীতির প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তাদের মন্ত্রীরা বলেন, বিশেষ করে যারা অর্থনীতির দায়িত্বে আছেন। অর্থমন্ত্রী আছেন একজন, তিনি অতীতে আদম ব্যবসা করতেন এবং একজন পরিকল্পনা মন্ত্রী আছেন তিনি একজন আমলা ছিলেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ দাম বেড়েছে কিন্তু বিশ্বের তুলনায় কম বেড়েছে যেখানে মুদ্রা স্ফীতি অনেক কম। আমরা সাধারণ মানুষ কী মুদ্রাস্ফীতি বুঝি? সাধারণ ভাষায় হচ্ছে দাম বাড়া, দাম বাড়াটাই মুদ্রা স্ফীতি।”

‘‘ ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি- আমার কাছে হচ্ছে দাম বাড়া। আমার একদম সোজা কথা- এই দাম বাড়লো কেনো? কারণ আপনারা(সরকার) সব চুরি করতে শুরু করেছেন। চুরি বললে ভুল হবে ডাকাতি ডাকাতি। এসব্ সাধারণ ডাকাত নয়, বর্গীদের ডাকাতি…। এটা বর্গীর সরকার। এই সরকারের গায়ের চামড়া গন্ডারের চেয়েও মোটা। এই সরকার স্বাধীনতা বিরোধী সরকার, এই সরকার জনগনের বিরোধী সরকার, এই সরকার কৃষক বিরোধী সরকার, এই সরকার শ্রমিক বিরোধী সরকার, এই সরকার সাধারণ মানুষ বিরোধী সরকার। মানুষের জন্য এদের কোনো দায় বদ্ধতা নেই।”

‘নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে ফখরুল’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আরেক নির্বাচনের তারা(সরকার) পায়তারা করতেছে। তারা আবার একটা নতুন নির্বাচন কমিশন করেছে-এই কমিশন ভালো হবে, ভোট করতে হবে। আমাদের আওয়ামী লীগের সন্মান্বিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব তিনি বলেছেন, বিএনপি যদি ভোটে না যায়, কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে কথা বলতে থাকে তাহলে অতল জলে ডুবে যাবে।”

‘‘ ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই- এতো ভয় কেনো নিরপেক্ষ সরকারে? এতো কেনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারে? নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার দিয়ে দেখেন না-আওয়ামী লীগ ডুবে না বিএনপি ডুবে। মানুষ আপনারা বুঝে গেছে আপনাদের চালাকি, ছক বুঝে গেছে। এজন্য যারা অতীতে আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছিলো তারা এখন বলতে শুরু করেছে আগে জানলে তোর ভাঙা নৌ্কায় উঠতাম না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মিথ্যাবাদী প্রতারক, জনগনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, এরা বিশ্বাসঘাতক দল।”

‘তথ্য সন্ত্রাস চলছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গতকালই আমাদের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভুট্টাচার্য্ বলেছেন যে, এখন বড় সমস্যা হচ্ছে যে, তথ্য সন্ত্রাস। এটা কী? যেটা আসল সেটা বলা হয় না, নকলটা বলা হয়। আজকে এই সরকারের যত তথ্য সমস্ত ভুয়া, সব ভুয়া। আপনার বলে যে, জিডিপি বেড়েছে.. যে সংখ্যা বলছে সমস্ত ভুয়া।”

‘‘ এদের হিসাব অনুযায়ী এই জিডিপির ৪২% হচ্ছে ঋণ। অর্থাত আপনাকে আমাকে, আমাদের সকলকে ঋণের জর্জরিত করে দিচ্ছে। আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে ওই সারচার্জ, অমুক চার্জ, তমুক চার্জ নিয়ে আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এই সরকার যদি বেশি চলে আমরা কি ঠিকতে পারবো ? আমাদের অস্তিত্ব থাকবে? থাকবে না।”

কৃষদের বর্তমান করুণ অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ বিএনপি যদি আবার সরকারে আসতে পারে আমরা কৃষকদের উন্নয়ন করতে কবর, সাধারণ মানুষের এই যে দুর্ভোগ তা দূর করব। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার, তারেক রহমানের সরকার যদি আবার আসতে পারে অবশ্যই আমরা কৃষিখাতে সমৃদ্ধি আনতে সক্ষম হবো।”

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন আর কোনো কথা নাই, একটাই কথা। এখন সরে দাঁড়াও, সরে যাও। অনেক হয়েছে, অনেক মানুষকে নির্যাতন করেছো হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছো, অনেক নেতা-কর্মীদের গুম করেছো, ৩৫ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছো।”

‘‘মানে মানে সরে যান। ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। তা না হলে জনগনই আপনাদের ঘাড় ধরে বের করে দেবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, কৃষক ভাইদের ঐক্যবদ্ধ করি, শ্রমিক ভাইদের ঐক্যবদ্ধ করি, সমস্ত জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করি। আমাদের একটাই লক্ষ্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।”

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও প্রচার সম্পাদক শামসুর রহমান শামস এর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কৃষক দলের নাসির হায়দার, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, আনম খলিলুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিন, সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী, টিএস আইয়ুব, ফজলে হুদা বাবুল, শাহ আবদুল্লাহ আল বাকী, শাহ মো. মনিরুর রহমান, মাহমুদা হাবিবা, মনিরুল ইসলাম রয়েল, ইউসুফ আলী মোল্লা, মো. ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, সাখাওয়াত হোসেন নান্নু, আসজাদুল আরিশ ডল, শফিকুর রহমান মিঠু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।