সরকারের ভুলের কারণে মানুষ মরছে: ডা. জাফরুল্লাহ

আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১
0

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ভুলের কারণে মানুষ মরছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, সরকারের ভুলের কারণে মানুষ মরছে। সরকারের ভুলের কারণে শিক্ষা ধ্বংস হচ্ছে। সরকার ভুল পথ হাঁটছেন। ভুল পথে হাঁটলেও সংশোধ করা যায় কিন্তু সরকারের সংশোধন করার কোনো ইচ্ছ নাই। সরকার জনসাধারণকে তার প্রজা মনে করেন। প্রজার কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না।

রোববার (১ আগষ্ট) দুপুরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। “করোনা মোকাবেলা, শ্রমিকদের হয়রানি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ নাগরিক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়”।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণস্বাস্থ্যের মিডিয়া উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর ।এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেএসডির কার্যকারি সভাপতি সা কা ম আনিছুর রহমান খান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব এড. শাহ আহমেদ বাদল, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদ উল্লাহ কায়সার, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলকে ছোট করা ছাড়া সরকারের আর কোনো কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রধানন্ত্রীর কথা আর কাজের মিল নেই। ওনি সব সময় বলছে আমরা যুদ্ধে আছি, কিন্তু ওনিতো যুদ্ধ দেখেন নাই।

দেশে কোনো রাজনীতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমলারা, ব্যবসায়িরা প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ শাসন করছে। সরকার আজ যেটা বলছে কাল সেটা মানছেন না। সরকার লকডাউন করছেন নিজেই লকডাউন মানছেন না। লকডাউন মানার জন্য গরীব মানুষের উপর অত্যাচার করছে। প্রতিদিন যত জরিমানা হয়েছে সব সাধারণ মানুষ, রিকসাওয়ালা, শ্রমিক, দোকানদাদে হয়েছে।

কলকারখানা খোলার ব্যাপারে দ্বিমত নেই উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কলকারখানা খোলার ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম আছে। শ্রমিকদের টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়া কঠিন কোনো কাজ না। গার্মেন্টস মালিকদেরও দ্বায়িত্ব আছে। তারা যে এত দিন এত লুটপাট করেছে, বেগমপাড়া করেছেন, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করেছেন, টাকা পাচার করেছেন। যে শ্রমিকদের কাঁধে ভর করে এত কিছু করেছেন, সেই শ্রমিকদের তো টিকা দিয়েই কারখানা চালাতে পারেন। ঠিকার টাকা তারাই জোগার করে দিতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, এখন যেভাবে ঘটনা প্রবাহ চলতে তাতে আমাদের ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপান করা দরকার। অক্সিজেন উৎপাদনের সব চেয়ে উন্নত টেকনোলজি হচ্ছে জার্মান টেকনোলজি। মাসে ৫০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম টেকনোলজির দাম মাত্র ৬ কোটি টাকা। বহু ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান আছে যারা এটা করতে পারে। ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র করতে পারলে আমাদের কেউ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে না।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনারা দেখছেন গতকাল থেকে কি একটা তুঘলকি কান্ড ঘটছে। হাজার হাজার লোক আসছে। কোন একটা রেসপন্সেবল গভর্নমেন্ট এটা করতে পারে। এদিকে থেকে বলা হয়েছে আপনারা যদি না আসতে পারেন কোন সমস্যা নাই। আপনাদের চাকরি যাবে না। অন্যদিকে মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের টেলিফোনে করা হয়েছে। তাদের বলছে, কালকের (আজকের) মধ্যেই কাজে চাকরিতে যোগ দিতে হবে নইলে চাকরি থাকবে না। এটাকে তুঘলকি কান্ড বলবেন না তো কি বলবেন। সরকার কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। সরকার রফতানিমুখী গার্মেন্টস মালিকদের চাপ সহ্য করতে পারেনা।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “ডিসেম্বর পর সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে।” বাই এনি মিনস এটা কি সম্ভব। আমাদের ১৩ কোটি মানুষকে ২৬ কোটি ডোজ দিতে হবে। লাগবে ২৬ কোটি টিকা, কিন্তু কত জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। কত টিকা আছে, এটা সঠিক হিসাব সরকার দিতে পারে না। কত টিকা আসবে এটা তাদের জানা নেই।

কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমি এখানো ছোট ছোট তিনটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই; ১. সরকারের অদূরদর্শিতা, ২. জনগণকে সরকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করে, ৩. সরকারের বাণিজ্যিক স্বার্থ। এই তিনটি কারণে বাংলাদেশ অবস্থা আজ বিপদগ্রস্ত। টিকা দেয়ার কোনো প্রস্তুতি নাই। সরকারের কথার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নাই।

তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আপনি যদি ইচ্ছা করেন যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবেন না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখবেন তাহলে উপায় কিন্তু বের করা যায়।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা নাগরিক সমাজ করোনাকালে জনগনের পক্ষে কথা বলে যাবো। অগণতান্ত্রিক সরকারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারনে করোনা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে অমানবিক নির্যাতন করে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশুনা বন্ধ করে দেশকে ধ্বংশ করে দিয়েছে।

ডা, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লিখিত বক্তব্যে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারি জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তজাতিকসাপ্লাই চেইন হওয়ায় প্রতিযোগিতার কারণে যদি পোষাক শিল্প খুলতেই হয় সেক্ষেত্রে পোষাক কারখানা শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দিয়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা করে সরকারের কারখানা সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের ভোট ছাড়া আমলানির্ভর এই সরকার যে জনগণ এবং বিশেষভাবে শ্রমিকদের প্রতি কি পরিমাণ দায়িত্বহীন, শ্রমিকদের এরা কি পরিমাণে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার আরেক বিভসৎ দৃশ্যায়ন ঘটেছে গতকাল।

সাকি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলার ব্যাপারে লাগাতা টালবাহানা করে যাচ্ছে। সরকারের বিবেচনাহীন এই সিদ্ধান্ত কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জীবনই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমরা অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার দাবি জানাই। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সময়সীমা এবং কর্মদিন কমিয়ে এনে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি ভ্যাকসিন সংগ্রহ এই মূহুর্তে সরকারের প্রধান কাজ। ক্রয়ের স্বচ্ছতা আমরা চাই, কিন্তু যে দামেই ভ্যাকসিন পাওয়া যাক, তাতেই আমাদের ভ্যাকসিন ক্রয় করা উচিত, কেননা লকডাউনের আর্থিক ক্ষতি ভ্যাকসিনের আপাত উচ্চ দামের চেয়ে অনেক বহুগুণ বেশি। তবে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তক ভ্যাকসিন প্রদানের খরচের যে হিসেব ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসছে তাতে এক্ষত্রেও যে ভয়াবহ দুর্নীতি নতুন করে হচ্ছে তা
অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাই। দুনীতি এবং সামগ্রিক ব্যর্থতার দায়ে এই স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণেরও আমরা দাবি জানাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হোক নূর বলেন, মানুষ তীব্র ভোগান্তি নিয়ে ঢাকায় আসায় আমরা যখন সমালোচনা করেছি তখন ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় সরকার সিদ্ধান্ত নেন যে গণপরিবহন রোববার ১২টা পর্যন্ত চলবে। এটা স্পষ্ট যে সরকারের কাজের সমন্বয়হীনতা এবং এ সমন্বয়হীনতা শুধু এখন না। গতবছরের শুরু থেকে লকডাউন দেয়া, গার্মেন্টস খোলা, শ্রমিকদের ঢাকা আনা-নেয়া নিয়ে অন্তত ৫বার এমন সীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কোনো শ্রমিক দযি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে সেই শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যয় মালিককে নিতে হবে।