সরকারের মদদে কুমিল্লায় হামলা : মির্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১
0

সরকারের মদদে কুমিল্লা পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সরকারের মদদে হামলা হয়েছে।
পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিত তাহলে একটি ঘটনাও ঘটতো না।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরঞ্জিত শক্তি প্রয়োগের কারণে জীবনহানী ও গুরুত্বর আহতসহ দেশের বিভিন্ন জনপদ রক্তরঞ্জিত হচ্ছে। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী জেলাধীন বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হামলা-ভাংচুরসহ ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় যতন সাহা নামে একজন ব্যক্তি গুরুত্বর অসুস্থ হলে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ঐদিন চৌমুহনির বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড-খন্ড মিছিল মূল সড়কের দিকে আসতে থাকলে সেটিকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রন না করে বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেপরোয়া আক্রমণ চালিয় অসংখ্য মানুষকে আহত করে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতা এবং তাদের নির্বিকার ভূমিকার কারণেই শহরের কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকার মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর হয়।

কুমিল্লার পূজা মন্ডপের ঘটনার জের ধরে চাঁদপুরের হজিগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, হামলার চেষ্টাসহ নানাবিধ সংঘাত-সংঘর্ষ ও পুলিশী আক্রমনে বিক্ষুব্ধ মানুষের ওপর লাঠি পেটা, গুলি, টিয়ারসেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ এবং বেধড়ক গ্রেফতারসহ বর্বরোচিত আক্রমণে হতাহতের ঘটনা শুধু নির্দয় আচরণই নয়, এটি কাপুরুষোচিত। এই অরাজকতা সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্যকে ম্লান করলো।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে, তাদের উপসনালয় ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারের রামু-উখিয়া, পাবনা, টাঙ্গাইল, বি-বাড়িয়া, ফরিদপুর, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপসনালয়ে আক্রমণ ও লুটপাট চালানো হয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ী, সহায়-সম্পত্তি আত্মসাত করা হয়েছে। এই দুস্কৃতিকারীরা প্রায় সকলেই ক্ষমতাসীন দলের লোক।

দূর্গা পূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআর অবমাননা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটলো। কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মতো আমরাও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘীর পাড়ের মন্ডপের ঘটনাটি নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াতো না।

এখন একটি প্রশ্ন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ পূজা মন্ডপে নিয়ে গেছে ? সরকারের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাসের পর কেবলমাত্র ক্ষমতা-সংশ্লিষ্ট দুষ্ট চক্র ছাড়া দেশের জণগোষ্ঠীর কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ই এই কদর্য কাজ করবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি এই ঘটনা জানার পরপরেই একটি বিবৃতিতে বলেছিলাম।

সরকারের মদদেই কুমিল্লার নানুয়ার দীঘীর পাড়ের পূজা মন্ডপে চক্রান্তমূলক কুৎসিত কাজটি করা হয়েছে। এর বড় প্রমান ঘটনার পরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অতিসত্বর পূজা মন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলো। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছে অনেক পরে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নীতি আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।