সরকারের, শাসকদের এবং শাসন ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য চলছে– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১
0

দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘চরম নৈরাজ্য’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে শনিবার এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকের খবর- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া গেছে। শাহবাগ থানায় ডায়েরি করা হয়েছে।”

‘‘ এই হচ্ছে বর্তমানে সরকারের, শাসকদের এবং শাসন ব্যবস্থার অবস্থা। একটা না, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি জায়গায় …। আপনি দেখবেন যে, চরম নৈরাজ্য চলছে। লক্ষ্য একটি, সেটি হচ্ছে যে, কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য ওয়েল ফেয়ার স্টেটের জন্য সেদিকে কারো চিন্তাই নেই।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা করোনার সময়ে দেখেছি কিভাবে ভয়াবহভাবে যথন মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষের আহজারি সেই সময়ে দেখেছি তখন তারা(সরকার) কি করে অর্থ উপার্জন করবেন তা নিয়ে ব্যস্ত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির ড্রাইভারের ৪‘শ কোটি টাকা। এই্ একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে এখন।”

‘‘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইস চ্যান্সলর ১৬৯ জন নিয়োগ দিলেন এক রাতে। পেছনের কাহিনী কী যে সেই অর্থ উপার্জন করা। এই যে আমরা একটা সমাজ তৈরি করেছি এই সমাজের কাছ থেকে আমরা ভালো কোনো কিছু পাওয়ার আশা করার খুব কঠিন।”

সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের ‘পদ্মা’ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর ওপর লেখা ‘আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী সংবর্ধনা গ্রন্থ’র প্রকাশনার এই অনুষ্ঠান হয়।

৫৯০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশক। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। গ্রন্থটির মূল্য ১৩‘শ টাকা।

‘হতাশা নয়, জেগে উঠতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা অনেকেই হতাশ। প্রায় হতাশার কথা শুনি। এই কিছুক্ষন আগে এই কক্ষ থেকে বেরিয়েছিলাম, আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার আর কত দিন। সত্য কথা। এটাই এখন মানুষের মধ্যে একটা বড় রকমের জিজ্ঞাসা হচ্ছে, পরিবর্তনটা কবে আসবে? যেভাবে চতুর্দিকে যে একটা শ্বাসরুদ্দ্রকর অবস্থা, এই অবস্থা থেকে আমরা কবে বেরুতে পারবো। স্বাভাবিকভাবে আমি রাজনীতি করি, বড় দলের সাথে সম্পৃক্ত আছি যে, আপনি আমাকেই জিজ্ঞাসা করবেন যে, কবে বেরুতে পারবো?”

‘‘ আমি আপনাদেরকে খুব সরাসরি উত্তর দিতে চাই, আমরা অবশ্যই বেরুতে পারবো। কারণ এই দেশের মানুষ কখনে্াই পরাজয় বরণ করেনি।দেখেন পাকিস্তান থেকে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে, ৭১ এর স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে শুরু করে, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী যে আন্দোলন সব কিছুর মধ্যে দেখবেন যে, মানুষ যখন জেগে উঠছে তখন কিন্তু অবশ্যই তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। সেজন্য মানুষকে আজকে জেগে উঠতে হবে।”

নিজের কষ্টের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নে সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যখন দেখি যে, আমার একজন বোন, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন ধর্ষিত হয় অথবা আমার গ্রামের মধ্যে মা-বোনেরা ধর্ষিতা হয় আমি দেখি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়ে এসছে। টিপাইমুখে যখন বাঁধ তৈরি করতে যায় সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করে কোনো মিছিল বের হয় না, আমার গণতন্ত্রকে যখন ধবংস করা হয়, ছাত্রদেরকে যখন পিটিয়ে শুইয়ে দেয়া হয়, রক্ত ঝরানো হয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না।”

‘‘ এটা দূঃখের কথা। আমাদের তরুনরা, আমাদের যুবকরা তারা যদি জেগে না উঠে তাহলে পরিবর্তনটা আসবে কোত্থেকে হবে। আ্পনাদের সকলের থেকে থেকে আমি বিশ্বাস করি যে পরিবর্তন আসবে এবং পরিবর্তন আসবে অবশ্যই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর কৃতিময় কর্মজীবন তুলে ধরে তিনি বলেন,‘‘ তিনি তার সারাটা জীবন ধরে পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন, এখনো করছেন।”

আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘জ্ঞানের শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই এবং জ্ঞানের জগতে কোনো সীমারেখা নাই। আজকে এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সাথে আমি একমত যে, আমরা দুর্ভাগা জাতি একারণে যে, আজো আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারিনি। আমাদের সমাজ জ্ঞান বিমুখ সমাজ। আমরা যদি এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের এতো সমস্যা থাকতো না।”

‘‘ শিক্ষাদানের পাশপাশি সমাজ বদলের একটা দায়িত্ব কিন্তু শিক্ষকদের থেকে যায়। সমাজ পরিবর্তনে শুধু রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব্ নয়, এই দায়িত্ব শিক্ষক সমাজ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবি, আমাদের জনগন সকলেরই। যে সমাজ বা যে দেশে আমরা বাস করি এদেশের প্রতি আমাদের নিশ্চয়ই একটা মর্মত্ববোধ আছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে, একটি শোষনহীন বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা ৫০ বছর পর তাঁকিয়ে দেখি আমাদের সেই স্বপ্ন বিফল হয়েছে। আজকেও আমাদেরকে সেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হয়, আজকে আমাদেরকে শোষন,নির্যাতন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। আমি আশাবাদী আমরা নিশ্চয়ই আবার গণতন্ত্র ফিরে পাবো, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।”

বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মতাদর্শের ‘পদলেহকারী রাবার স্ট্যাম্পধারী’ ব্যক্তিকে উপাচার্য্ নিযোগের কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক এই উপাচার্য।

বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা‘র সভাপতিত্বে ও কবি আবুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিনী লাকী নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য্ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক জাহেদুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রেজাউল করীম, অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হকের ছেলে বাবুস সালাম দূর্জয় বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, সা্বেক ছাত্র নেতা নজমুল হক নান্নু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আবদুর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক ইয়ারুল কবির, অধ্যাপক শের মুহাম্মদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সালেহ মাহমুদ রিয়াদ, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ প্রমূখ।