সরকার দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত করছে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ৬, ২০২২
0

সরকার দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে রোববার সকালে এক ছাত্র সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ একটা গভীর চক্রান্ত আছে। সেই চক্রান্ত হচ্ছে এদেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রেখে তারা(আওয়ামী লীগ সরকার) একটা রাজতন্ত্র চালাবে। সেই তথাকথিত মুজিববাদে দেশ এখানে তারা চালু করবে।”

‘‘ আমাদের কথা খুব পরিস্কার, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য, একটা মুক্ত সমাজের জন্য। আমাদেরকে সেই মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আজকে আবার সকল মানুষকে ওই ১৯৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আরো একটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশকে মুক্ত করতে হবে, জনগনকে মুক্ত করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের যুদ্ধ শুধুমাত্র বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসার জন্য নয়। আমাদের এই যুদ্ধ আমাদের অধিকারকে ফিরে পাওয়ার জন্য, এই যুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ এই দেশের মানুষ তাদের মালিকানা ফিরে দেওয়ার জন্য। আমরা ভোট দিতে চাই, ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাই।”

‘‘ আর তারা(আওয়ামী লীগ) কখনোই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পক্ষে নয়। আজকে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কেনো? জানে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কখনো নির্বাচিত হতে পারবে না।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে এই সরকারকে হটাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতির প্রতিবাদে এই ছাত্র সমাবেশ হয়। এতে ঢাকা উত্তর-দক্ষিন, পূর্ব-পশ্চিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তীতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, বাঙলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।

‘দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির পেছনে একটাই মাত্র কারণ, সেই কারণটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতাদের দুর্নীতি। আজকে তারা এই দুর্নীতি ফুলে-ফেপে উঠেছে। সোয়াবিনের তেলের দাম বাড়ছে কেনো? কারণ সোয়াবিন তেলের যারা ব্যবসা করে তার বেশিরভাগই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী।”

‘‘ আজকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে কেনো? এলপিজি গ্যাস বিদেশ থেক যে প্রতিষ্ঠানটি আমদানী করে নিয়ে আসছে তাদের বিনিয়োগ উপদেষ্টা তিনি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। ঔষধের দাম বাড়ছে। স্বাস্থ্যখাত শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রীর এলাকা চাঁদপুরে সেখানে জমি অধিগ্রহনের দুর্নীতি করে সেখানে ডিসি অভিযোগ করে.. এবং সেই দুর্নীতির কোনো বিচার হয় না। আজকে সবক্ষেত্রে সব জায়গায় সরকারের দুর্নীতি দুর্নীতি দুর্নীতি এবং সেই সঙ্গে তাদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতা।”

দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধবগতিতে মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের একেবারে অন্তরের কথা- আমরা আর পারছি না, আমাদের পক্ষে আর জীবন-যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না, আমাদেরকে চাল-ডাল-তেল-লবন এই সমস্ত পন্য.., আবার বিদ্যুতে দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে, পানির দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।”

‘‘ আজকে আসার সময়ে হাতির ঝিলের রাস্তার পাশে দেখলাম ট্রাকের পণ্য কিনতে লম্বা লাইন মানুষের। আজকে বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে,বাংলাদেশের মানুষ এখন বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। তার বেঁচে থাকার ন্যুনতম যে খাবার দরকার সেটা তারা পাচ্ছে না, তার বেঁচে থাকার যে নিরাপত্তা দরকার সেটা তারা পাচ্ছে না। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, তাদের বেতন বাড়ছেই। এরকম একটা অবস্থা চলছে।”

ছাত্র দল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই দেশে যা কিছু কল্যাণকর, যা কিছু মহত, যা কিছু সৃজনশীল কাজ হয়েছে সব কিছু এই ছাত্ররা করেছে।”

‘‘ এখানে ছাত্র নেতারা উপস্থিত হয়েছেন। আজকে জেগে উঠতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকারকে সরিয়ে জনগনের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সবাই সেই লক্ষ্যে কাজ করি।”

ছাত্র দলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের পরিচালনায় সমাবেশে ছাত্র দলের সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, আমিনুর রহমান আমিন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।