সরকার নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে—-মির্জা ফখরুল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
0

সরকার নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভা বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার এমন এক সরকার যারা ন্যুনতম সন্মানবোধ করতে জানে না গুনি মানুষকে। ড. ইউনুস একজন নোবেল লরেট.. বাংলাদেশে একমাত্র ব্যক্তি যিনি একটা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখন উনার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে যে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে… একটা অবস্থান তারা তৈরি করেছে। কালকে একজন মন্ত্রী বলছেন যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যে কারণে জেলে যেতে হয় সেই কারণ ড. ইউনুসের না।”

‘‘ ড. ইউনুসকে আপনারা(সরকার) ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসার কারণে, শত্রুতার কারণে আপনারা তাকে এভাবে ভিকটিম করে তার বিরুদ্ধে এই মামলা-মোকাদ্দমা নিয়ে এসে এভাবে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আবার বলেকি যে, আমরা(বিএনপি) নাকি ড. ইউনুসের ওপর ভর করেছি। ড. ইউনুসের ওপর ভর করার আমাদের কোনো কারণ নাই। আমরা পুরোপুরিভাবে এদেশের জনগনের ওপর ভর করেছি।”

‘‘ আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের জনগন হচ্ছে সকল শক্তির উতস্য, এদেশের জনগনই এদেশের জনগনের সরকার তৈরি করবে এবং ভাগ্য পরিবর্তন করবে। সেই কারণে আমরা মানুষের কাছে গেছি। আপনারা কেনো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান না।কারণ আপনারা জানেন যে, ওইটা করলে আপনারা ১০টা আসনও পাবেন না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ বিএনপি নেতারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতেছে। এক এগারোর দুঃস্বপ্ন দেখছে তারা। বাংলার মাটিতে এই অশুভ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ‘নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে ‘নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।

নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান ‍উল্লাহ আমানের লেখা এই গ্রস্থটি প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।

‘বিরোধী নেতাদের ওরা দ্রুত জেলে দিতে চায়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তাদের(সরকার) উদ্দেশ্যটা পরিস্কার।যারা এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারা এই সরকারের পক্ষে নয়, যারা এই সরকারকে বলছে যে, তুমি অনেক খারাপ কাজ করেছো তুমি সরে যাও… তাদের সকলকে কারাগারে ঢুকিয়ে দিতে চায়। এবংকি তারা ওই উপলক্ষে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।”

‘‘ আইন মন্ত্রণালয় একটা সেল তৈরি করেছে সেই সেল নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, অতি দ্রুত সেই সমস্ত মামলাগু্লোকে চিহ্নিত করবে যেগুলো তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা এবং রাষ্ট্রবিরোধী মামলা… সেই সমস্ত মামলাগুলোকে অতি দ্রুত যেন রায় দেয়া যায় তার ব্যবস্থা করবে। কিছুদিন আগে আরেকটা আপনারা দেখেয়েন যে, আইন মন্ত্রণালয় একই ধরনের পাস করেছে। এভাবে তারা গোটা দেশের আশা-আকাংখা-স্বপ্ন এটাকে ধবংস করে দেয়ার জন্যে পুরোপুরি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের যে দায়িত্বটা এসে পড়েছে, যে দায়িত্বরা ৯০ সালে আমান উল্লাহ আমানরা স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওদের সাথে সামনে থেকে লড়াই করে স্বৈরাচার মুক্ত করেছেন। আজকে ফ্যাসিবাদ, এই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচারের বাবা, স্বৈরাচার থেকে আরও ১০ ডিগ্রি বেশি। এই ফ্যাসিবাদকে যদি দূর করতে হয় আজকে আপনাদেরকে তরুন যুবকদের বুকে অনেক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”

‘‘ আমি আহ্বান জানাব, আজকে তুরনদেরকে, ছাত্রদেরকে, যুবকদেরকে যে সাহস বুকে নিয়ে আমাদের আমান উল্লাহ আমানরা বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচার মুক্ত করেছিলেন সেই সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। মৃত্যুর পরোয়ান করলে চলবে না, জেলের পরোয়ান করলে চলবে না। আজকে আমাদের অবশ্যই এইভাবে শপথ নিয়ে ….. রাস্তায় নেমে পড়তে হবে।সবাই একবার অন্তত রাস্তায় নেমে পড়ুন দেখবেন ওরা পালাবার পথ পাবে না।”

আমান উল্লাহ আমানকে মিথ্যা মামলার সরকারে প্রতিহিংসার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে আমি কোটে গিয়েছিলাম। আমাদের এই অবস্থাই হয়েছে প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। আমান উল্লাহ আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে আছেন। আজ শুধু এই দৃশ্য নয়, প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপির নেতা-কর্মী কোটের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে।”

‘‘ এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দৃশ্য হতে পারে না, কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃশ্য হতে পারে না।”

নিজের একটি মিথ্যা মামলার বিচারের কার্য্ক্রমের তড়িগড়ি করে শেষ করার কথাও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

‘‘ গত কয়েকদিন আগে আমার একটি মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আমার ধারনা এক দুই মাসের মধ্যেই আমানের মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে। তাদের উদ্দেশ্যটা একদম পরিস্কার। কাউকে বাইরে রাখবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ডাকসুর সা্বেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্র নেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফজলুল হক মিলন, খন্দকার লুতফুর রহমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুর রহমান খান আসাদ ও কামরুজ্জামান রতন বক্তব্য রাখেন।