সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
0

সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ দিনে সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং সরে গিয়ে নিরপেক্ষ একটা তত্ত্বাধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একই একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে- এই লক্ষ্যেই আমরা এগুচ্ছি।”

‘‘ আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি চলতেই থাকবে। ১০ তারিখ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি আছে সারা দেশে।এরপর আবার নতুন কর্মসূচি জানাবো আপনাদেরকে। এই আন্দোলন চলবে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।”

বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠন করে আন্দোলনকে বেগবান করার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের আলোচনা এখনো চলছে। আপনারা জানেন যে, সব জিনিসের একট্ টিটবিটস থাকে আরকি। দাবিগুলো, ন্যুনতম যে কর্মসূচি সেগুলো নিয়ে কথা বলছি।”

‘‘ আমরা আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে এটাকে চূড়ান্ত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”

৯ দিনে সরকারের দমনচিত্র’

গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ বিশেষ করে নারায়নগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী,ভোলা,বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা,চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল,মুন্সিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ,লক্ষীপুর, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও ময়মনসিংহে দলীয় কর্মসূচি পালনের সময়ে ক্ষমমতাসীন দল ও পুলিশি হামলার ঘটনায় হতাহত ও গ্রেফাতার তালিকা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ সারাদেশে নিহত হয়েছে তিনজন, আহত হয়েছে ২ হাজারের অধিক নেতা-কর্মী। গ্রেফতারের সংখ্যা ২শ জনের অধিক।”

‘‘ সারাদেশে নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮১ জনের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে েএবং অজ্ঞাত আসামী প্রায় ২০ হাজার।সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হঢেছে ২০/২৫টি স্থানে ও বাড়িঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে ৫০টি স্থানে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ কর্তৃত্ববাদী গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, গ্রেফতারের যে অপততপরতা অব্যাহত রেখেছে তা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। যারা নিহত হয়েছে তাদের নিরপেক্ষ তদন্ত করে হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানাচ্ছি। হতাহতদের ক্ষতিপুরন দিতে হবে।”

‘‘ সরকার যদি অশুভ ততপরতা বন্ধ না করে তাহলে জনগনের ঐক্যের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে গণবিস্ফোরণে পরিণত হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের তো.. একটা কথা আছে না দুরাত্মার ছলের অভাব নেই। আওয়ামী লীগের কোনো ছলের অভাব নেই্। ওরা প্রতিমুহুর্তে ছল তৈরি করে এবং ছল তৈরি করে আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে, গণতন্ত্রকে ধবংস করে….এগুলো তাদের একটা কমন ব্যাপার আরকি।”

‘‘ আমি সব সময় আপনাদের বলি, আওয়ামী লীগের বডি কেমেস্ট্রি একটা আছে। যে বডি কেমেস্ট্রিতে আছে সেটা হচ্ছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসে তাদের জন্ম, সন্ত্রাস দিয়ে তারা রাজনীতি করে এবং সন্ত্রাস দিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে।”

তিনি বলেন, ‘‘ সরকার মাঠে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যে প্রতিবাদ করছে এটাতে তাদের(সরকার) মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”

‘‘ আমি প্রতিবাদ করছি যেকোনো বিষয়ে। আপনি আমাকে গুলি করে দেবেন। এর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন কি হতে পারে।”

‘নারায়নগঞ্জে মামলা দায়ের’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শাওন হত্যা মামলা আমরা আজকে দায়ের করেছি। আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের নেতৃত্বে ২২ জনকে আসামী করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছি। আমরা প্রত্যেক খুন-জখম-হত্যার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। একদিকে রাজপথে আন্দোলন করছি। এটাকে আরো বেগবান করব। ”

‘‘ রাজপথের আন্দোলনকে অলরেডি জনগন সম্পৃক্ত হচ্ছে-এটাতেই আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। জনসমুদ্র দেখে তারা ঘাবড়ে গেছে, ভয় পেয়েছে। এজন্য তারা পাল্টা ভয় দেখাতে শুরু করেছে।”

‘মিয়ানমার সীমান্তে মটার প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আসল কথা হচ্ছে একটা অনির্বাচিত সরকার দিয়ে এসব হয় না। যারা নির্বাচিত না, যাদের পিপলস সাপোর্ট নেই তাদের তো শক্তি থাকে না। এই সরকারের তো কোনো শক্তি নেই। সে টিকে আছে অন্যদের শক্তিতে। যে কারণে তার নিজের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তার যে ভুমিকা নেওয়া প্রয়োজন সেই ভুমিকা সে নিতে পারে না।”

‘‘ ওই বিদেশীদের দ্বারা প্রভা্বিত হয়ে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেটা আমি সব সময় বলি একটা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি-এটা ছাড়া সে টিকেও থাকবে না। সেজন্য ওটাই সে করে। এই ঘটনার যেভাবে প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিলো, যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিলো…। এটা সেকেন্ড টাইম হলো। এখন তারা(সরকার) যেটা করবে অ্যাম্বেসেডরকে ডেকে বলবে। পরে বলবে যে শক্ত ভাষায় তাকে বলা হয়েছে। ঠিক আছে এটা ডিপ্লোমেটিক নর্মে..।”

তিনি বলেন, ‘‘ মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধান এমনিতে হবে না। মিয়ানমারের সাথে সমস্যার সমাধান করতে হলে তার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নেয়ার জন্য তাকে একটা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই আন্তর্জাতিক সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন হেড় অব গর্ভামেন্ট তাকেই বিভিন্ন দেশে যেতে হবে এবং যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পর্ক আছে ভারত ও চীন এই দুইটা দেশকে কনভিনস করতে হবে যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য। এটা প্রথম কথা।”

‘‘ দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, শক্তি অর্জন করতে হলে যে এদিকে মটার মারলে ওদিকেও যাতে মটার যায়। সে ব্যবস্থা অবশ্যেই তাকে করতে হবে।”