সরকার ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে’র ঘটনা ঘটিয়ে একে ‘বিএনপি দমনে অস্ত্র’হিসেবে ব্যবহার করছে–মির্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২১
0

সরকার ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে’র ঘটনা ঘটিয়ে একে ‘বিএনপি দমনে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার দুপুরে ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা বিনষ্ট করছে তারা অত্যন্ত সুচতুরভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধবংস করে একটি দলকে স্থায়ী ভাবে রাখার জন্য কাজ করছে। এই পর্যন্ত যতগু্লো ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটি ঘটনায় দেখবেন আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো সংগঠনের বা নেতৃবৃন্দ ওই সব ঘটনার সূত্রপাত করেছে। ”

‘‘ আজ পর্য্ন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। হবে না এই জন্য যে, অস্ত্রটা তাদের দরকার।এই অস্ত্র দিয়ে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে, ভোটের অধিকারের জন্য যারা লড়াই করছে তাদেরকে তারা রুখে দিতে চায়, তাদেরকে তারা স্তব্ধ করতে চায়।”

কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নানা ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটার একটিই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, বর্তমানে যারা বেআইনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা এবং সামনে আবার নির্বাচনী নির্বাচনী খেলা আসছে সেই খেলায় আবার জয়লাভ করা। এটা হচ্ছে মূল্য লক্ষ্য।”

‘‘ ঘটনাগুলো ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি যে, সরকার এই সব ঘটনার সাথে সম্পূর্ণভাবে দায়ী। এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তারা। উদ্দেশ্য বিএনপিকে আবার জড়িয়ে দিয়ে জনগনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার অধিকার আদায়ের জন্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, তার নিরাপত্তার জন্য দাবিতে তা থেকে জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন থেকে সরিয়ে দেয়া।”

এই অবস্থার পরিবর্তনে তরুন-যুবকদের এগিয়ে আসার আহবান রেখে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, এই মুহুর্তে পরিবর্তন চাই। এই পরিবর্তন ঘটাতে হলে সবার আগে যাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন সেই তরুন ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই তাদের ভুমিকা পালন করবে। সেই রাজনৈতিক দলগুলোতে যাদেরকে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে তারা হচ্ছে তরুন-যুবকদের।”

‘‘ আমরা আন্দোলনে আছি, আমরা আন্দোলন করছি। বহুদলীয় গণতন্ত্র, বহুদলীয় চিন্তা, বহুদলীয় সমাজ নির্মান, শত ফুল ফুঁটতে দাও- সেই লক্ষ্যে আমাদের এগুতে হবে। আমরা অত্যন্তক আশাবাদী।কারণ এদেশের মানুষ কখনো ব্যর্থ হয়নি। বার বার সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, বার বার মানুষ জয়ী হয়েছে। হয়ত কিছুদিনের জন্য আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি কিন্তু কখনোই আমরা পরাজিত হইনি, হব না। আমরা বিশ্বাস করি, যে আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, এদেশের মানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে লক্ষ্য ণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেটা অবশ্যই আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আজকের প্রেক্ষাপট, আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আজকে যেরকম এই আলোচনা সভায় বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখছি। আমরা যদি একটু এক সঙ্গে হই, যদি একবার একসঙ্গে হুংকার দেই এই সরকার কিন্তু থাকবে না।”

‘‘এই সরকার এখন কাগুজে বাঘ। ছোট একটা টোকা দিলে তারা পড়ে যাবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।”

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আমরা একটা খলের সাথে লড়াই করছি। সেই খলের ছলের অভাব নাই, তার দুর্বুদ্ধির অভাব নাই। এই সরকার যারা চালান তারা বুদ্ধিমান নয়, তারা চতুর, তারা ধূর্ত, তারা খল।”

‘‘ আমরা যারা লড়াই করতে চাই এটা বুঝেই লড়াই করতে হবে। তা নাহলে লড়াইটাতে জিততে পারবেন না। কোনো সন্দেহ নাই লড়াই একটাই- গণতন্ত্রের লড়াই।”

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে ঘরের মধ্যে পুষে রাখে। যখন দরকার তখন সেটাকে কাজে লাগায়, যখন যখন যেই কৌশল নিলে তাদের ক্ষমতাকে পোক্ত করবার মতো ব্যাপার হয় সেটা করে।”

‘‘ অত্এব তাকে… ওই যে বলে না যেমন কুকুর তেমন মুগুর। ওইভাবে লড়াই করতে হবে। সেই লড়াই করবার জন্যে বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপি ডাকলে সবাই আস্থাটা পাবে সেটা আমি বা আমার মতো দল ডাকলে…। তাতে আবার ফুলে যাবেন না।”

গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘ ঘটনার পরমপরায় আমরা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছি। পুরো দেশটা একটা ভন্ডামীর মধ্যে এসে গেছে প্রতিটা ক্ষেত্রে। আজকে যদি সত্যজিত রায় বেঁচে থাকতেন তাহলে আরেকটা নতুন ঐতিহাসিক ছবি পেতাম- সেটা হলো হীরক রানী দেশ।”

‘‘ বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, একযুগ ধরে রামু থেকে নাসিরনগর, নাসিরনগর থেকে গঙ্গাছড়া, গঙ্গাছড়া থেকে মুরাদনগর, আবার ঘুরে ফেরে কুমিল্লা, হাজীগনজ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম। কাল রাতে বগুড়ার ধুনট। এগুলো কী সরকারের ইন্ধন ছাড়া হচ্ছে? আর কাল পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেন সাহেব যা বলেছেন এর পরে এটা মনে করার কোনো কারণ আছে যে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া এরকম একটা স্টেটমেন্ট আসে। উনার তখতা চিপার মধ্যে পড়ে গেছি এবং ওখান থেকে বেরুনোর জন্য সব অপপ্রচার, অসত্য কথাগুলো জাতির সামনে বলছে।”

জাসদ(রব)এর সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘‘ দেশে যে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা এটা সরকারের হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে তারা ক্ষমতা থাকার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। একে রুখতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে।”

সংগঠনের আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য আজিজুল বারী হেলালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুকোমল বড়ুয়া, রুহুল কবির রিজভী, গৌতম চক্রবর্তী, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, খন্দকার আবু আশফাক, আফরোজা আব্বাস, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকুতি কুমার মন্ডল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের ইলিয়াস খান প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আ্উয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল হক, রবিউল ইসলাম রবি,মশিউর রহমান বিপ্লব, একরামুল হক বিপ্লব, রমেশ দত্ত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শেখ শামীম, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।