সাখাওয়াত হোসেনকে সিইসি করার প্রস্তাব দিলেন জাফরুল্লাহ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
0

সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা
কামালসহ নির্বাচন কমিশনের জন্য ৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছেন গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী
হলে আয়োজিতস্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানীর
ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা
বলেন।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন,—জাতীয় পার্টি ( কাজী
জাফর) সভাপতি ও ৬৯’ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক,ভাসানী অনুসারী পরিষদের
মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ
সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর,ভাসানী অনুসারী পরিষদের
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর,বাংলাদেশ বিপ্লবী
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিনাসাকী জামালী, মুক্তিযোদ্ধা
আক্তার হোসেন, সভা পরিচালনা করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবীবুর রহমান
রিজু ।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটির পকেটে কী কাগজ আছে, নির্বাচন
কমিশনার কারা হবে? আজকে যদি প্রকৃত নির্বাচন করতে হয়, গণতন্ত্র ফেরত
দিতে হয়, জনগণকে ভোটের অধিকার ফেরত দিতে হয় তাহলে শক্তিশালী নির্বাচন
কমিশন দরকার। বর্তমান আইনে সেই ব্যবস্থা নাই। এমন অবস্থায় অনেক রাজনৈতিক
দলই সার্চ কমিটির কাছে কারো নাম প্রস্তাব করেনি। তবে কয়েকটা নাম আপনারা
বিবেচনায় আনতে পারেন, সাখাওয়াত হোসেন আগে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তাকে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হলে তিনি পথ-ঘাট চেনেন, উনি শক্তভাবে
কাজগুলো করতে পারবেন। তার সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইকবাল করিম
ভূঁইয়া, তিনি আজিজ নয়, সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুনাম আছে। বদিউল আলম
মজুমদার ও বিচারপতি নাজমুন আরা, সুলতানা কামালের মত সত্যিকারে সজ্জন ও
সাহসী লোকজনদের কমিশনে‌ আনলে কমিশন কিছুটা বিতর্ক মুক্ত থাকবে।

সার্চ কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তারা তাদের সম্পদের হিসাব দেয়নি। তাদের
উপরে মানুষের আস্থা থাকবে কি করে? তাদের পকেটে কি কাগজ আছে? বক্তব্যে এমন
প্রশ্ন তোলেন ডা. জাফরুল্লাহ। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে ১৭ টি
প্রদেশে বিভক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সরকার, সর্বদলীয়
সরকার কিংবা নির্দলীয় সরকার যেটাই করুন না কেন, অন্ততপক্ষে তাদের দুবছর
সময় দিতে হবে। তাহলে সংবিধানের যেসব ত্রুটিগুলো আছে সেগুলোর পরিবর্তন
হবে। তবে মূল কথা হচ্ছে যে, এত কেন্দ্রিকতা দিয়ে আসলে দেশ চলতে পারে না।
১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ, এটাকে অন্তত ১৭টি প্রদেশে বিভক্ত করতে হবে।

তাহলে শত ফুল ফুটবে। আপনাদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, মন্ত্রী হবেন।
কোন প্রদেশের মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বলবে আমরা শিক্ষার দিকে নজর দিব,
কেউ বলবে আমরা কৃষক ও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করব।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ
করে তিনি আরও বলেন, জালেম কখনো ক্ষমতা ছাড়ে না, তাদেরকে ক্ষমতা ছাড়াইতে
হয়। আজকে বিএনপি তাদের অফিসে কোনো সভা সমাবেশ করতে পারছে না। সেখান থেকে
তাদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাজেই তাদের (বিএনপির) উচিৎ যেদিন ধরে নিয়ে
যাবে তার পরের দিনে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের ডাক দেওয়া। কারণ যারা জালেম
তারা কখনো ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। জালেমদেরকে ক্ষমতা ছাড়াইতে হয়।
আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের পতন হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে অসুস্থ বোধ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি
মাহমুদুর রহমান মান্না। এ কারণে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা
যদি ভেবে কাজ করতাম, আমাদের ব্যক্তিতের সংকট বলি, দেশের জনগণের কথা বলি,
মানুষের কষ্টের কথা বলি সেরকম কিছু হত না। আজ কী করে বলছেন সমস্ত
রাজনৈতিক দল গুলোর ঐক্য চাই। উনারা দুইটি আলাদা জোট আপনারা তৃতীয় আলাদা
একটা জোট করেন। তাহলে বিরোধী দল আলাদা হয়ে যাবার কারণে শক্তি দূর্বল হয়ে
যাবে? বরং ভালো করে বোঝেন, আমরা সেইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যাতে মূল লড়াইটা
দূর্বল না হয়। মূল লড়াই যেন শক্তি পায়। এই সেই বিবেচনায় ঐক্য বদ্ধ হচ্ছি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন,বঙ্গবন্ধুকে
জাতীয় নেতা বানিয়েছেন মওলানা ভাসানী। সেদিন তিনি যদি আগরতলা ষড়যন্ত্রের
মামলার বিরুদ্ধে শেখ মজিবুর রহমানের পক্ষে আন্দোনের মাধ্যমে জেল মুক্ত না
করতেন তাহলে বাংলাদেশের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ইতিহাস
হতো ভিন্ন। অথছ আজ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় তারা মওলানা ভাসানীর স্মৃতি ও
ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকসহ সকল স্থান হতে মুছে শুধু একজনের ইতিহাস নিয়ে যত
প্রচারকরে যাচ্ছে। এ মিথ্যা ইতিহাস জাতি কোনদিন গ্রহন করবেনা। সত্য
ইতিহাস একদিন না একদিন প্রকাশিত হবেই।

আন্তর্জাতিক সমর্থনে ফাটল ধরায় আওয়ামী লীগ এখন কম্পমান। তাদের মাথা
খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক
জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পূর্বের ইতিহাস ষড়যন্ত্রে
রক্তাক্তের ইতিহাস। তারপরও তারা একইভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন
আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মাধ্যমে। এক সময় আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সবাই
একচেটিয়াভাবে তাদের সমর্থন করেছিল। সেই শক্তির জোরে তারা রাষ্ট্র,
জনগণের ট্যাক্সের টাকার চালিত প্রশাসনকে দলীয় শক্তিতে পরিণত করেছে।
মানুষের উপরে ত্রাস সৃষ্টি করে, দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক
শক্তির সমর্থনে ফাটল ধরেছে। আওয়ামী লীগ এখন কম্পমান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন খুন গুমতো হয় নাই।এরা সবাই ভূমধ্যসাগরে ঢুবে মারা
গেছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন গুম হওয়া লোকদেরকে আমরা পরিবারের কাছে
হাজির করবো। তাদেরকে কোথায় থেকে হাজির করবেন?পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছেন,
হয়তোবা সেই ছাই আমাদের সামনে হাজির করবেন। এদের যে মাথা খারাপ এটা
পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। সদ্য পাস হওয়া নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখান করে
পরিস্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই দেশে আমরা কী
কী করবো এটা আজ পরিষ্কারভাবে আমাদের সিদ্বান্ত নিতে হবে। এই যে সরকার
একটা ফ্যাসিস্ট শাসন। আবার যে দখলদারী একটা নির্বাচন হবে সেটাকে বৈধতা
দেয়ার জন্য একটা নির্বাচনি আইন করেছে, যেখানো জনগণের সম্মতি নেই।
পার্লামেন্টে একটা আইন হয়েছে, এই আইন আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। এই আইনের
মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন হবে এটা অসম্ভব খারাপ নির্বাচন কমিশন হবে। যা
বর্তমানের চেয়েও খারাপ হবে। এটা সার্চ কমিটির কথা শুনলেই বুঝা যায়।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তের দলে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে গণ
অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জনমানুষের
একটি দল আজ দুর্বৃত্তদের দলে পরিণত হয়েছে। গুম, খুন, হত্যার রাজনীতি
করছে। ৮৬ জনের অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘের গুম নিয়ে কাজ করা টিম এদেশে আসতে
চায়। ২০১৩ সাল থেকে তারা বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে, আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে ভিপি নুর বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিরা যদি
ভূমধ্যসাগরে চলেই যায়, তাহলেও জানান তারা মারা গেছেন না বেঁচে আছেন। নয়তো
আপনাদের অবস্থাও বাবরের (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) মতো হবে।
###