সার্চ কমিটি আ.লীগের ‘খাস কমিটি’ : রিজভী

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাকে আওয়ামী লীগের ‘খাস কমিটি’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার (৬ ফেব্রয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, আমরা মনে করি এই অনুসন্ধান কমিটির দ্বারা মনোনীত নির্বাচন কমিশন হবে একান্তভাবে সরকারের আস্থাভাজন। এগুলো দিয়ে জনগণের সঙ্গে নাটক, প্রহসন-প্রতারণা, রঙ তামাশা চলছে। নির্বাচন কমিশন নয়, জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। তাই সরকারকে বলব এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন। দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিবেন না।

সার্চ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া সদস্যদের প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি সার্চ কমিটি করেছেন। যার ভিত্তি হচ্ছে সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া তথাকথিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’। এই আইন জনগণকে ঠকানোর কৌশল মাত্র। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২২, আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ ও মুজিবকোট পরা লোকেরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন। সেই সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোট পরা লোকদের বের করে আনবে।’

তিনি বলেন, ‘নবগঠিত এই সার্চ কমিটি সেই অনুমানেরই নিরেট বাস্তবতা। এটাকে ‘সার্চ কমিটি’ না বলে বরং ‘আওয়ামী খাস কমিটি ‘বলাটাই যুক্তিযুক্ত মনে করি। এরা ভূপেন হাজারিকার সেই গানের মতো ‘মোরা যাত্রী একই তরণীর’। এরা একই ঝাঁকের কৈ’। এরা আওয়ামী লীগের কে কোন পজিশনে ছিলেন? আছেন তা নিয়ে দেশের সচেতন জনগণের মধ্যে চলছে যে আলোচনা চলছে তা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ তে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ পরিবার দ্বারা আরেকটি নীল-নকশার ভোট ডাকাতির নির্বাচন কমিশন গঠন করতে নিখাদ আওয়ামী লীগের চেতনার মানুষদের অনুসন্ধান করাই এই সার্চ কমিটির অভীষ্ট লক্ষ্য।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমান সার্চ কমিটির প্রধান আগের দুটি সার্চ কমিটিরও সদস্য ছিলেন। সার্চ কমিটির প্রধান ওবায়দুল হাসান ও তার পরিবার পরীক্ষিত আওয়ামী লীগার। তিনিও আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী ছিলেন। তার পরিচয় তিনি বাকশাল ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলেন। এদের সুপারিশেই নিয়োগ পেয়েছিলেন রকিব ও হুদা কমিশন। এরা নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর আরেক বিশেষজ্ঞ, এই সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন সাবেক বহু বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন। ২০১৮ সালে সিলেট-১ (সিলেট সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন।

রিজভী বলেন, ‘রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম হামিজ উদ্দিন শেখের পুত্র কুদ্দুস জামান। এই কুদ্দুস জামান এই সার্চ কমিটির সদস্য। তার ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আরেক সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক জন্মান্ধ আওয়ামী লীগার হিসাবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের একান্ত অনুরাগী ও দৃঢ় সমর্থক প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী তিনি। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মেডিকেল সেন্টারে চাকরি করেছেন।

রিজভী বলেন, ‘হাসিনা মার্কা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ এরা বিশেষজ্ঞ। সুতরাং এই সার্চ কমিটি অথবা নির্বাচন কমিশন নিয়ে দেশের জনগণ বা বিএনপির কোন আগ্রহ নেই। জনগণ বিশ্বাস করে-নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের দাবি নির্দলীয় সরকার গঠনের পর সেই সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। জনগণ ঘৃণা ভরে এই আওয়ামী সার্চ কমিটির নামে এই ‘খাস কমিটি’কে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সরকারের উদ্দেশে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করুন। তা না’হলে কোন কিছু করে লাভ হবে না। আপনাদের সাথে জনগণ নেই। এখন বিদায় নিতে হবেই। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের যে আহবান জানিয়েছেন তাতে ঐক্যবদ্ধ দেশবাসী। আপনাদের পতনের লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে ক্ষমতাসীন নিশিরাতের সরকার আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে দেশকে। বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে তারা র‌্যাব-পুলিশ তথা দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গুম-খুন, অপহরণে লিপ্ত করেছিল। দেশে-বিদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী গত একযুগে ক্ষমতাসীন মাফিয়া সরকার প্রায় দেড় সহস্র মানুষকে গুম করেছে। প্রায় ২০ হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে হত্যাসহ অসংখ্য মানুষকে খুন-ধর্ষণ-অপহরণ করেছে। এভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্ষমতাসীন অপশক্তি মানুষের ভোটাধিকার, বাক-ব্যক্তি-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা বিপুল পরিমান টাকা পাচার, হরিলুট ও সীমাহীন দুর্নীতির দ্বারা স্বকাল ও স্বসমাজকে এড়িয়ে বিলাসিতার এক সুখরাজ্য নির্মাণ করেছে। দেশে দেশে নির্মাণ করেছে বেগমপাড়া ও সেকেন্ড হোম। আর জনগণকে নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ করার জন্য জুলুমের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এটি ক্ষমতাসীন অপশক্তির বিনাভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখার পরিণাম-পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্প্রতি একটি উদ্বেগজনক খবর দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, খবরটি হলো, ‘আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞার পর নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে পোশাক খাতে। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবহার হওয়া ঋণপত্রে (এলসি) বিশেষ একটি ধারা যুক্ত করে দিচ্ছেন। এই কারণে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদানে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘শুধু এখানেই শেষ নয়, এতদিন যারা ক্ষমতাসীন সরকারের নানা অপকর্ম নাভাবে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন তারাও পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আশংকা করছেন। আমরা মনে করি, দেশের স্বার্থে এসব সংবাদকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। শুধুমাত্র বিএনপির বিরুদ্ধে রঙ চড়িয়ে ব্লেইম-গেইমে লিপ্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই নিশিরাতের সরকারের কাছে জনগণ সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব জানতে চায়।

১. ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কেন যুক্ত্ররাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগ করেছিল ?

২. শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তার সন্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি জোগাড় করতেও নাকি কষ্ট হয়েছিল তাহলে লবিষ্ট নিয়োগের জন্য বিপুল পরিমান ডলারের যোগান দিলো কে ?

৩. ঐসব ডলারের উৎস কি ?

৪. রাষ্ট্রের শত কোটি টাকা খরচ করে ২০১৪ সাল থেকে কি কারণে? কি উদ্দেশ্যে বিনাভোটের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগ করতে হয়েছে ?

৫. লবিষ্ট নিয়োগ করতে রাষ্ট্রের এ পর্যন্ত কত কোটি টাকা খরচ হয়েছে ?

৬. কোন খাত থেকে কিভাবে লবিস্টদেরকে টাকা দেয়া হয়েছে ?

৭. এতো বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগের কথা জনগণকে কেন জানানো হয়নি?

ক্ষমতার লোভে নিজেদের অপকর্ম ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে নিশিরাতের সরকার এখন প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।