সার্চ কমিটি ‘ জনগনের সাথে ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয় —মীর্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২১
0

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ‘জনগনের সাথে ধোকাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হবে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বার বার করে বলে আসছি যে, নির্বাচন কমিশন গঠন যদি সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠনের যে অভিজ্ঞাতা আমাদের আছে, সেই অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে, এক নম্বর: একেবারেই তাদের(সরকার) নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে, প্রাধান্য দিয়ে গঠন করা হয়। দুই নম্বর হচ্ছে যে, এটা জনগনকে ধোঁকাবাজী ছাড়া কিছু নয়। সার্চ কমিটি করেছে আমরা তো করি নাই, আমরা তো দেই নাই।”

‘‘ কিন্তু পরিস্কারভাবে দেখা গেছে গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে, তারও আগের অভিজ্ঞতা থেকে যে, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার তার নিজের পছন্দমত লোকজনকে দিয়ে তৈরি করে এবং সেটাকে নির্বাচনে কাজে লাগায়। আমরা গতবার দেখলাম, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুদা(কেএম নুরুল হুদা) সাহেবের যে কমিশন সেই কমিশন পুরোভাবে সরকারের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে তাদের সেই দলীয় ভুমিকা পালন করেছে যেটা কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য না।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ যেকোনো নির্বাচন কমিশন গঠনের সময়ে যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনটা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহনযোগ্য হয় না। এটা আমার কথা নয়, আগে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত(সাখাওয়াত হোসেন) সাহেবরা যে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন তারা খুব সুস্পষ্ট করে বলেছেন, যে একটা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটা সবচেয়ে জরুরী।

‘‘ সেই দৃ্ষ্টিকোন থেকে বলছি যে, আসলে ওটাই হচ্ছে প্রথম সংকটটা। নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করলেন, একেবারে সমস্ত …, কিন্তু তারা কাজ করতে পারলো না। সরকার তাদের সাথে সহযোগিতা করলো না বা তাদেরকে কাজ করতে দিলো না। তখন তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।”

গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে বিএনপি মহাসচিবের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

‘ওদের থেকে বাঁচতে জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে’

বিএনপিকে মানুষ কেনো ভোট দেবে প্রধানমন্ত্রী এরকম প্রশ্নের জবাব দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘‘ ওনাদের(আওয়ামী লীগ সরকার) হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। ওনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নেই। এরফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।”

‘‘ওই কারণে বিএনপিকে ভোট দে্বে যে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলে আজকে ৭০ টাকা কেজি চাল। ৭০ টাকায় চাল খাওয়া সম্ভব নয় বলেই জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। বিনা পয়সায় সার দেবে কৃষকদের বলেছিলো সেখানে সারের দাম আকাশচুম্বি। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে চায় এবং যাকে খুশি তাকে দিতে চায়, সেজন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। কারণ আজকে গত দুই বছরের সরকারের ব্যর্থতার কারণে করোনার সময়ে অর্থনৈতিক প্যাকেজের মাধ্যমে জনগনকে রক্ষা করা যেতো সেটা না করার কারণে বেশির ভাগ কল-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, লোকজন ছাটাই হয়ে গেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টারগু্লো পূঁজি হারিয়েছে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান কমে গেছে। আজকে দুর্ভাগ্যক্রমে এই দেশটাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখান থেকে মানুষ এখন মুক্তি চায়, আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি চায়, এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়।”

বিএনপির বিগত সরকারের সফলতা তুলে ধরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ বিএনপি একমাত্র দল যারা জনগনকে কিছুটা শান্তি দিয়েছিলো। মাইক্রো ইকোনমিক্সকে স্টেবল পজিশনে নিয়ে এসেছিলো। সেজন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকার বলছে, অনেক উন্নয়ন করেছে। যদি এত উন্নয়ন করে থাকে তাহলে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিক না কেনো? তাহলে আজকে কেনো তারা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসছেন না, সমাধান করছেন না। সরকারকে বলব, এতো কথা বলেন, এতো দাম্ভিকতা দেখান। ভাই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করেন দেখেন। মানুষকে ভোট দেন।”

‘‘ আজকে যতগুলো ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি আছে, এমনকি জাতিসংঘের কাছ থেকে এমন কথা আসে যে, আমরা নির্বাচনে সহযোগিতা করতে রাজী আছি যদি বাংলাদেশ সরকার বলে। এরকম প্রশ্ন কেনো আছে। কারণ এই নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি কারো আস্থা নেই। না জাতির না আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর।”

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই- সরকারের এরকম বক্তব্য খন্ডন করে তিনি বলেন, ‘‘ সংবিধান কী একটা বাইবেল যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। জনগনের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে। তারাও তো পরিবর্তন করেছে। দুর্ভাগ্যটা কোথায়? তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলো এবং ১৭৩দিন হরতাল করেছিলো। সেজন্য কী কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন।”

‘‘ আজকে তারা জেনে গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্য দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিধান রাখতে চায় তারা।”

‘আন্দোলন হবেই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এদেশের মানুষ আন্দোলন করবেই। আন্দোলন হবেই। কারণ আপনার দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে, এদেশের জনগন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আগে আন্দোলন করেছে, এবারো করবে।”

‘‘ আমাদের দাবি একটাই, আমরা কিচ্ছু চাই না। আমরা শুধুমাত্র নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।”

‘নির্বাচনে আমাদের নেতা খালেদা জিয়া”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দলের চেয়ারপারসন।”

উনি তো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এরকম প্রশ্রের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ উনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে নেতা থাকতে পারবেন না-এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ছিলো তিনি কারাগারে ছিলেন। তিনি কি নেতা ছিলেন না?”

‘অতীতের মতো নির্বাচন জনগন মানবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অতীতের মতো নির্বাচন কোনো মতেই আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। আমরা পরিস্কার করে বলছি যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের নির্বাচন নির্বাচন খেলায় জনগন আর গ্রহন করবে না। ২০১৪ তে কী করেছে? ওই সময়ে ১৫৪জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করল। কোনো বিরোধী দল নির্বাচন অংশগ্রহন করে নাই শুধু জাতীয় পার্টি ছাড়া। আর সবাই নির্বাচন বর্জন করেছিলো। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের বুথ দখল করে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।”

‘‘ আবার শুনতে পারছি যে, এবার ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এটা হলে তো হয়েই গেলো, আর নির্বাচন তো দরকার নেই। ইভিএম দিয়েই তো তারা নিয়ে চলে যাবেন।”

মির্জা সুতরাং তারা(সরকার) যদি সত্যিকার অর্থে তারা এতটা অর্থবহ নির্বাচন করতে চায় প্রথমে দায়িত্ব হচ্ছে যে, তাদেরকে আমি করি যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করার ব্যাপারে তাদেরকে একমত হতে হবে। তারপরে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তাদেরকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কনসেনসাসে আসতে হবে।”

‘‘ অন্যথায় এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে একটা প্রহসন হবে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্বের যে জনমত যারা ইন্টারন্যাশনাল কমি্উনিটি বিভিন্ন দেশগুলো তারা প্রত্যেকে বলেছেন যে, এই নির্বাচন নির্বাচন হয়নি। এমনকি তাদের পত্র-পত্রিকা বলেন, গার্ডিয়ান বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস বলেন,ইকোনোমিস্ট বলেন, তারা সকলে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।”

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিলো না বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই প্র্রশ্ন ছিলো। অবশ্যই ছিলো। ওই সময়ে সরকার ছিলো একটা অবৈধ সরকার। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে তাদেরকে দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কোথাও প্রভিশন নাই সংবিধানের মধ্যে ২ বছর থাকার কথা নেই। আছে ৯০ দিন থাকার।”

‘‘ আমরা তখনও বলেছিলাম যে, এটা গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশনেত্রী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা মনে করার কোনো কারণ নাই যে, ওই সময়ে ফেয়ার নির্বাচন হয়েছিলো।”

‘১৯৭২-৭৫ সালের কত হত্যা হয়েছিলো’

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের সশ্বস্ত্র বাহিনীর ভেতরের ঘটনা ক্যু-পাল্টা ক্যুতে বিভিন্ন মানুষজনকে ফাঁসি দেয়ায় জিয়াউর রহমানের বিচার হওয়া উচিত বলে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিক্রিয়া মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকান্ড হয়েছে সিরাজ শিকদার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী তাদের আত্বীয়স্বজনরা আহজারি করছেন। তারা বলছেন, আমরা স্বজন হারিয়েছি তার আমরা বিচার পাইনি।”

‘‘ আর জিয়াউর রহমানের সময়ের বিষয়ে যে কথা উনারা বলছেন যে, সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান। সামরিক আইনে মার্শাল কোর্টে তাদের বিচার হয়েছিলো। দ্য ওয়াজ… অভিযোগগুলো ছিলো ৭ নভেম্বরের সময়ে এবং পরে সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করার অভিযোগ। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা সেগুলো। মার্শাল কোট করে তার বিচার হয়েছে। এখানে জিয়াউর রহমানের ভুমিকা ছিলো না, থাকতেই পারে না।সার্চ কমিটি ‘ জনগনের সাথে ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয় —

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ‘জনগনের সাথে ধোকাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হবে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বার বার করে বলে আসছি যে, নির্বাচন কমিশন গঠন যদি সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠনের যে অভিজ্ঞাতা আমাদের আছে, সেই অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে, এক নম্বর: একেবারেই তাদের(সরকার) নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে, প্রাধান্য দিয়ে গঠন করা হয়। দুই নম্বর হচ্ছে যে, এটা জনগনকে ধোঁকাবাজী ছাড়া কিছু নয়। সার্চ কমিটি করেছে আমরা তো করি নাই, আমরা তো দেই নাই।”

‘‘ কিন্তু পরিস্কারভাবে দেখা গেছে গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে, তারও আগের অভিজ্ঞতা থেকে যে, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার তার নিজের পছন্দমত লোকজনকে দিয়ে তৈরি করে এবং সেটাকে নির্বাচনে কাজে লাগায়। আমরা গতবার দেখলাম, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুদা(কেএম নুরুল হুদা) সাহেবের যে কমিশন সেই কমিশন পুরোভাবে সরকারের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে তাদের সেই দলীয় ভুমিকা পালন করেছে যেটা কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য না।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ যেকোনো নির্বাচন কমিশন গঠনের সময়ে যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনটা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহনযোগ্য হয় না। এটা আমার কথা নয়, আগে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত(সাখাওয়াত হোসেন) সাহেবরা যে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন তারা খুব সুস্পষ্ট করে বলেছেন, যে একটা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটা সবচেয়ে জরুরী।

‘‘ সেই দৃ্ষ্টিকোন থেকে বলছি যে, আসলে ওটাই হচ্ছে প্রথম সংকটটা। নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করলেন, একেবারে সমস্ত …, কিন্তু তারা কাজ করতে পারলো না। সরকার তাদের সাথে সহযোগিতা করলো না বা তাদেরকে কাজ করতে দিলো না। তখন তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।”

গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে বিএনপি মহাসচিবের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

‘ওদের থেকে বাঁচতে জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে’

বিএনপিকে মানুষ কেনো ভোট দেবে প্রধানমন্ত্রী এরকম প্রশ্নের জবাব দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘‘ ওনাদের(আওয়ামী লীগ সরকার) হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। ওনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নেই। এরফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।”

‘‘ওই কারণে বিএনপিকে ভোট দে্বে যে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলে আজকে ৭০ টাকা কেজি চাল। ৭০ টাকায় চাল খাওয়া সম্ভব নয় বলেই জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। বিনা পয়সায় সার দেবে কৃষকদের বলেছিলো সেখানে সারের দাম আকাশচুম্বি। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে চায় এবং যাকে খুশি তাকে দিতে চায়, সেজন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে। কারণ আজকে গত দুই বছরের সরকারের ব্যর্থতার কারণে করোনার সময়ে অর্থনৈতিক প্যাকেজের মাধ্যমে জনগনকে রক্ষা করা যেতো সেটা না করার কারণে বেশির ভাগ কল-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, লোকজন ছাটাই হয়ে গেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টারগু্লো পূঁজি হারিয়েছে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান কমে গেছে। আজকে দুর্ভাগ্যক্রমে এই দেশটাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখান থেকে মানুষ এখন মুক্তি চায়, আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি চায়, এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়।”

বিএনপির বিগত সরকারের সফলতা তুলে ধরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ বিএনপি একমাত্র দল যারা জনগনকে কিছুটা শান্তি দিয়েছিলো। মাইক্রো ইকোনমিক্সকে স্টেবল পজিশনে নিয়ে এসেছিলো। সেজন্য জনগন বিএনপিকে ভোট দেবে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকার বলছে, অনেক উন্নয়ন করেছে। যদি এত উন্নয়ন করে থাকে তাহলে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিক না কেনো? তাহলে আজকে কেনো তারা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসছেন না, সমাধান করছেন না। সরকারকে বলব, এতো কথা বলেন, এতো দাম্ভিকতা দেখান। ভাই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করেন দেখেন। মানুষকে ভোট দেন।”

‘‘ আজকে যতগুলো ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি আছে, এমনকি জাতিসংঘের কাছ থেকে এমন কথা আসে যে, আমরা নির্বাচনে সহযোগিতা করতে রাজী আছি যদি বাংলাদেশ সরকার বলে। এরকম প্রশ্ন কেনো আছে। কারণ এই নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি কারো আস্থা নেই। না জাতির না আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর।”

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই- সরকারের এরকম বক্তব্য খন্ডন করে তিনি বলেন, ‘‘ সংবিধান কী একটা বাইবেল যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। জনগনের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে। তারাও তো পরিবর্তন করেছে। দুর্ভাগ্যটা কোথায়? তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলো এবং ১৭৩দিন হরতাল করেছিলো। সেজন্য কী কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন।”

‘‘ আজকে তারা জেনে গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্য দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিধান রাখতে চায় তারা।”

‘আন্দোলন হবেই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এদেশের মানুষ আন্দোলন করবেই। আন্দোলন হবেই। কারণ আপনার দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে, এদেশের জনগন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আগে আন্দোলন করেছে, এবারো করবে।”

‘‘ আমাদের দাবি একটাই, আমরা কিচ্ছু চাই না। আমরা শুধুমাত্র নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।”

‘নির্বাচনে আমাদের নেতা খালেদা জিয়া”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দলের চেয়ারপারসন।”

উনি তো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এরকম প্রশ্রের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ উনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে নেতা থাকতে পারবেন না-এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ছিলো তিনি কারাগারে ছিলেন। তিনি কি নেতা ছিলেন না?”

‘অতীতের মতো নির্বাচন জনগন মানবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অতীতের মতো নির্বাচন কোনো মতেই আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। আমরা পরিস্কার করে বলছি যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের নির্বাচন নির্বাচন খেলায় জনগন আর গ্রহন করবে না। ২০১৪ তে কী করেছে? ওই সময়ে ১৫৪জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করল। কোনো বিরোধী দল নির্বাচন অংশগ্রহন করে নাই শুধু জাতীয় পার্টি ছাড়া। আর সবাই নির্বাচন বর্জন করেছিলো। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের বুথ দখল করে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।”

‘‘ আবার শুনতে পারছি যে, এবার ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এটা হলে তো হয়েই গেলো, আর নির্বাচন তো দরকার নেই। ইভিএম দিয়েই তো তারা নিয়ে চলে যাবেন।”

মির্জা সুতরাং তারা(সরকার) যদি সত্যিকার অর্থে তারা এতটা অর্থবহ নির্বাচন করতে চায় প্রথমে দায়িত্ব হচ্ছে যে, তাদেরকে আমি করি যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করার ব্যাপারে তাদেরকে একমত হতে হবে। তারপরে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তাদেরকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কনসেনসাসে আসতে হবে।”

‘‘ অন্যথায় এই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে একটা প্রহসন হবে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্বের যে জনমত যারা ইন্টারন্যাশনাল কমি্উনিটি বিভিন্ন দেশগুলো তারা প্রত্যেকে বলেছেন যে, এই নির্বাচন নির্বাচন হয়নি। এমনকি তাদের পত্র-পত্রিকা বলেন, গার্ডিয়ান বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস বলেন,ইকোনোমিস্ট বলেন, তারা সকলে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।”

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিলো না বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই প্র্রশ্ন ছিলো। অবশ্যই ছিলো। ওই সময়ে সরকার ছিলো একটা অবৈধ সরকার। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে তাদেরকে দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কোথাও প্রভিশন নাই সংবিধানের মধ্যে ২ বছর থাকার কথা নেই। আছে ৯০ দিন থাকার।”

‘‘ আমরা তখনও বলেছিলাম যে, এটা গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশনেত্রী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা মনে করার কোনো কারণ নাই যে, ওই সময়ে ফেয়ার নির্বাচন হয়েছিলো।”

‘১৯৭২-৭৫ সালের কত হত্যা হয়েছিলো’

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের সশ্বস্ত্র বাহিনীর ভেতরের ঘটনা ক্যু-পাল্টা ক্যুতে বিভিন্ন মানুষজনকে ফাঁসি দেয়ায় জিয়াউর রহমানের বিচার হওয়া উচিত বলে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিক্রিয়া মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকান্ড হয়েছে সিরাজ শিকদার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী তাদের আত্বীয়স্বজনরা আহজারি করছেন। তারা বলছেন, আমরা স্বজন হারিয়েছি তার আমরা বিচার পাইনি।”

‘‘ আর জিয়াউর রহমানের সময়ের বিষয়ে যে কথা উনারা বলছেন যে, সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান। সামরিক আইনে মার্শাল কোর্টে তাদের বিচার হয়েছিলো। দ্য ওয়াজ… অভিযোগগুলো ছিলো ৭ নভেম্বরের সময়ে এবং পরে সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করার অভিযোগ। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা সেগুলো। মার্শাল কোট করে তার বিচার হয়েছে। এখানে জিয়াউর রহমানের ভুমিকা ছিলো না, থাকতেই পারে না।”