সূরা তাওবা’তে যে কারনে বিসমিল্লাহ লেখা নেই

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
0

ডেস্ক রিপোর্ট:
যেসব সূরা রাসুলুল্লাহ সা. এর জীবনের শেষ দিকে অবতীর্ণ হয়েছে, এটি সেগুলোর অন্যতম। তা ছাড়া এই সূরার বিধানগুলো অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘনীয়।

বিষয়বস্তুতে মিল থাকার কারণে সূরা আনআম ও সূরা তাওবাকে একসঙ্গে মিলিয়ে কোরআনের দীর্ঘতম সাতটি সূরার মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে।

সূরা তাওবা মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধবিগ্রহ, জিহাদের আহকাম, স্বরূপ ও প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত কাফিরদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, মক্কা বিজয়, তাবুক ও হুনাইনের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে এখানে। মুনাফিকদের চরিত্র ও পাপাচারের আলোচনা রয়েছে। মুহাজির ও আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে।

ইসলাম গ্রহণ ও মহানবী সা. এর হাতে ‘বাইআত’ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই সূরায়।

এর মধ্যে অন্যতম হলো সূরা তাওবা । ”সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো আল্লাহ ও তাঁর পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সঙ্গে, যাদের সঙ্গে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে।” (সূরা: তাওবা, আয়াত: ১)

এই আয়াতের মাধ্যমে সূরা তাওবা শুরু। এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। এতে ১২৯টি আয়াত ও ১৬টি রুকু রয়েছে। তাফসিরে কাশশাফে এ সূরার ১২টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দুটি নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাওবা ও বারাআত।

এই সূরাকে ‘তাওবা’ বলার কারণ, এতে মুসলমানদের তাওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা আছে। আর ‘বারাআত’ বলা হয় এ জন্য যে, এখানে কাফিরদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও দায়িত্ব মুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে সেই মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যারা চুক্তিভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। এই সূরার প্রথম অংশ মহানবী সা. তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর অবতীর্ণ হয়েছে।

সূরা তাওবার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এই সূরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয় না। অথচ অন্য সব সূরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়। এখানে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কয়েকটি কারণ পাওয়া যায় তাফসিরের কিতাবগুলোতে।

১. মহানবী সা. এর জীবনে ২৩ বছরের দীর্ঘ পরিসরে অল্প অল্প করে কোরআন অবতীর্ণ হয়। এমনকি একই সূরার বিভিন্ন আয়াত বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হয়। ওহি আসার পর কোন সূরা কোথায় স্থান পাবে তা রাসুলুল্লাহ সা. বলে দিতেন, ওহি লেখকরা তা সেভাবেই লিখে নিতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. এই সূরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার নির্দেশ দেননি। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হয়।

ফলে হজরত উসমান রা. এর আমলে নতুনভাবে কোরআন সংকলন করার সময়ও এই সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি। এর মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হয় যে কোরআন সব সংশয়, সন্দেহ, পরিবর্তন-পরিবর্ধনের ঊর্ধ্বে। অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি অবিকল ধারায় কোরআন বিদ্যমান।

২. হজরত ইবনে আব্বাস রা. আলী রা. থেকে বর্ণনা করেন যে ‘বিসমিল্লাহ’র মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা আছে। কিন্তু সূরা তাওবায় চুক্তিভঙ্গকারী কাফিরদের জন্য শাস্তি ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো নাকচ করা হয়েছে। তাই এই সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি (তাফসিরে কাবির)।

৩. জাহেলি যুগে আরবদের নিয়ম ছিল, চুক্তিভঙ্গের ঘোষণাপত্রে তারা ‘বিসমিল্লাহ’ লিখত না। তাই এখানেও তাদের সঙ্গে একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।

সূরা তাওবায় বিসমিল্লাহ পড়ার বিধান: ইসলামী ফিকাহবিদগণ বলেন, যে ব্যক্তি সূরা আনফালের তেলাওয়াত সমাপ্ত করে সূরা তাওবা শুরু করে, সে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রথমেই সূরা তাওবা থেকে তিলাওয়াত শুরু করে কিংবা এর মাঝখান থেকে শুরু করে, তাকে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করতে হবে। অনেকে মনে করেন, সূরা তাওবা পাঠ করার সময় কোনো অবস্থাতেই ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা যায় না, এ ধারণা সঠিক নয়।