সেই জাপানি নারী ও বাংলাদেশি স্বামী সমঝোতায় রাজি

আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১
0

দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছেন জাপানি নাগরিক মা এরিকো ও বাবা ইমরান শরীফ। দুপুরে তেজগাঁওয়ে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের সামনে তারা সাংবাদিকদের একথা জানান। এরিকো বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সমঝোতায় রাজি হয়েছি। বাচ্চাদের দেখে এলাম, তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়েছি। আমি সত্যিই গর্বিত, এখানকার যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা অনেক আন্তরিক।

কী ধরনের সমঝোতা হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মধ্যে এখনো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি। যদিও এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন কিন্তু সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। এখনো নানা ধরনের সমঝোতা করার সুযোগ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে- যতই সমস্যা থাক না কেন বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্য উভয়পক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, মামলাটির শুনানি ৩১ তারিখের আগে পরস্পরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি সমঝোতায় আসার। এ সমঝোতার বিষয়ে উভয়পক্ষ ও আইনজীবীরা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন।

সন্তানদের কোনো অভিজাত হোটেলে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে বাবা ইমরান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে পারছে না। সন্তানদের ভবিষ্যত বিবেচনায় যে কোনো ভালো সিদ্ধান্তের জন্য সমঝোতায় বসতে রাজি আছি।

এদিকে বাবা-মা একমত হয়ে আদালতে আবেদন করলে দুই জাপানি শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন।

শিশুদের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতে বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুর কষ্ট হচ্ছে। শিশুদের বাবা হোটেলের সব খরচ বহন করবেন। আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার জন্য আবেদন করেছি। আমাদের আবেদন শুনুন। তখন আদালত বলেন, শিশুদের মা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নিয়ে কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা বলছেন, শিশুরা ভালো আছে। আপনারা উভয়পক্ষ যদি শিশুদের হোটেলে বা কোনো বাসায় রাখতে একমত হন, তবেই আমরা শিশুদের হোটেলে রাখার ব্যাপারে আদেশ দিতে পারি।

এর আগে ২৩ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা এবং বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। ৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্টে হাজির করতে হবে। ওই দিন আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।

২২ আগস্ট ১০ ও ১১ বছর বয়সি দুই মেয়েকে হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ১৯ আগস্ট দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুই মেয়েকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী।