সৈয়দপুরের নালা খাল বিল নিষিদ্ধ জালের দখলে, হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার দেশী মাছের আশ্রয় ও বংশ বিস্তারের অন্যতম আধার নালা, খাল, বিলগুলো অবৈধ জালের দখলে। ফলে সমূলে ধ্বংস হচ্ছে দেশী প্রজাতির মা মাছসহ ছোট বড় সব ধরনের মাছের বংশ। বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার নিষিদ্ধ জাল দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রকাশ্যে এ নিধনযজ্ঞ চালালেও উপজেলা মৎস্য বিভাগ নির্বিকার।

উপজেলার খাতামধুপুর, কাশিরাম বেলপুকুর ও কামারপুকুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশ কিছু নালা ও খাল বিদ্যমান। এগুলোই মূলতঃ দেশী মাছ উৎপাদনের নিরাপদস্থল। সরকারী এসব খাল ও বিলে মাছ মারার ফাঁদ বসিয়েছে কতিপয় মাছ শিকারি। যারা খড়া, বানা, দারকি, জোলেঙ্গা জাতীয় মাছ ধরার স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়মিত শিকার করছে মাছ।

স্বল্প দূরত্বেই ঘন ঘন এসব স্থাপনের কারনে ওই জলাধারগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ যেমন ব্যহত হয়েছে তেমনি দেশী মাছসহ অন্যান্য উপকারী জলচর প্রাণীর বংশ বিস্তার ও শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত দুইবছর যাবত একেবারে বাধাহীনভাবে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধন অব্যাহত থাকায় আশংকাজনকহারে কমে গেছে এসব স্থানের মাছের উৎপাদন।

রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের খিয়ারজুম্মা থেকে কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের খালিশা পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে প্রায় অর্ধ শতাধিক খড়াজাল বসানো হয়েছে। একারণে জাল বসানোর স্থানে খাল ও নালায় বানা লাগিয়ে মাছের চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রবাহমান খাল ও নালা ছোট ছোট আবদ্ধ ডোবায় পরিনত হয়েছে।

স্বাভাবিক গতিরোধ করায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাসিত হতে না পারায় আশেপাশের ফসলের ক্ষেত দিনের পর দিন জলমগ্ন থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হচ্ছে পচন। এতে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। বিষাক্ত হয়ে উঠেছে পানি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেশী মাছের আস্তানা।

কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মী মোঃ মিলন ইসলাম জানান, মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণ বা জলাশয়গুলোর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহনে কোন উদ্যোগই নেই কারো। উপজেলা মৎস্য বিভাগ কৃত্রিমভাবে পুকুরে মাছ চাষীদেরও কোন প্রকার সহযোগীতা করেনা।

তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের মাছ চাষীদের দেখভালের জন্য আমাদের নিয়োগ দিলেও আমাদের যৎ সামান্য ভাতা দেয় তাও নিয়মিত নয়। আমাদের পরামর্শ বা চাষীদের চাহিদা মত সেবা প্রদানেও কোন তৎপরতা নেই। প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নেও কোন ভুমিকা নেই। অবৈধ জালে খাল বিল ছেয়ে গেলেও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়না। বিগত ২ বছরে উপজেলার কোথাও কোন অভিযান চালানো হয়নি এসব বন্ধে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানী খান মজলিস এর সাথে তার অফিসিয়াল মুঠোফোন ০১৭৬৯৪৫৯৭৭৭ নম্বরে বার বার যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। একারনে এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম হুসাইন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অবৈধ জাল ব্যবহার এমনিতেই অপরাধ। তার উপর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দেশী মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে এসব স্থায়ীভাবে বসানো গুরুতর বেআইনি কাজ। এমন হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এখনই মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিচ্ছি।