সৈয়দপুরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের ভোগান্তি, নেসকো’র ৩০ হাজার গ্রাহক নানামুখী হয়রানীর শিকার

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক। এমনকি বিল সংশোধন করতে গেলে পোহাতে হচ্ছে নানা হয়রানী। শহরের একাধিক গ্রাহক তাদের ভোগান্তির কথা জানান এবং দ্রত এই সমস্যা সমাধানের আকুতি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, নর্দান ইলেকটিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) এর আওতায় রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক। প্রতি মাসে এসব গ্রাহকের ব্যবহৃত বিদ্যুতের রিডিং লিখে বাড়ি বাড়ি পৌছে দেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ ব্যবহারের শুরুর পর থেকে বিগত বছর খানিক থেকে বিল বাড়ানো হচ্ছে। কেউ কেউ কয়েক বছর থেকে ভুতরে বিলের বোঝা টেনে বেড়াচ্ছেন। ভুতরে এমন বিল সংশোধন করতে গেলে নেসকো এর কর্মকর্তা, কর্মচারিদের দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। টেবিলের পর টেবিল ঘুরেও মিলছেনা ভুতরে বিলের সমাধান।

ছাত্তার ও ফুলটু নামের দুজন গ্রাহক জানান বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর থেকেই প্রতিমাসে সহনিয় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ কয়েক মাস থেকে এবং প্রতিটি ঈদের আগের মাসে ২-৩ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে। সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দূর্ব্যবহারে দ্বিতীয় বার সংশোধন করাতেও মন চায় না। তাছাড়া বিল সংশোধনের জন্য চাপ দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বাধ্য হয়েই ভুতরে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে অনেককেই।

কবির ও মনছুর নামের অপর দুই গ্রাহক জানান করোনাকালের শুরুর দিকে প্রতি মাসে ৬০০-৭০০ টাকা বিল এসেছিল। ২টি ফ্যান, ১টি টেলিভিশন ও ৪টি লাইট জ্বালিয়ে এখন বিল আসছে ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত।

শহরের বাঁশবাড়ী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ম্যান হাজী আব্দুল মতিন অভিযোগ করেন যে, তার বাসার বিল নিয়মিত ৫ থেকে ৮ টাকার মধ্যেই আসে। কিন্তু গত মে মাসে হঠাৎ করেই বিল আসে মাত্র ৩৫ টাকা। এতে একটু হতবাক হই। তাই বিষয়টা মিটার রিডার নাদিম কে মুঠোফোন জানাই। সে বলে এ বিল দেয়া লাগবেনা। আগামী মাসে সমন্বয় বিল দিবো। পরের মাসে বিল আসে ১ হাজার ৮ শ’ টাকা। দুইমাসের বিল একসাথে মনে করে ওই বিল পরিশোধ করি।

কিন্তু পরের মাসে অর্থাৎ গত জুলাই মাসে বিল আসে ২ হাজার ৬ শ’ টাকা। এতে চরম বিপাকে পড়ে যাই। অতিরিক্ত বিল দিতে গিয়ে পেনশনের টাকায় সংসার চালানো দূরহ হয়ে পড়েছে। অথচ বাসায় মাত্র ৪ টি লাইট, ২ টি ফ্যান, একটি টিভি পর্যায়ক্রমে এবং একটি ফ্রিজ সবসময় ব্যবহার হয়। এতে এত বিল আসার কথা নয়। তাই আবারও মিটার রিডারকে মুঠোফোনে জানালে সে পূর্বের মতই সমন্বয় করে দেয়ার কথা বলে। কিন্তু আগস্ট মাসের বিলও ২ হাজার টাকা এসেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মিটার রিডার নাদিম কখনই আমার বাসার মিটার দেখেন না। কারন তাকে মিটার দেখতে আসলে আমার বাসায় নক করতে বললেও কখনই সে তা করেনি। মিটার রিডিং না করেই ধারনায় বিল করায় এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। অফিসে গেলে প্রধান প্রকৌশলী কে না পেয়ে অন্যদের জানালে তারা এ ব্যাপারে সমাধান দিতে অনিহা প্রকাশ করে মিটার রিডারকেই জানাতে বলে। অথচ তাকে জানিয়ে কোন সুরাহাই পাইনা। এভাবে হয়রানী হতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিলের কাগজ পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও তারা দায়িত্বহীন। আরমান নামে যে বিল দিয়ে যায় তাকে বার বার বলা সত্বেও বাউন্ডারি ওয়ালের উপর দিয়ে বা দরজার নিচ দিয়ে খোলা বারান্দায় বিলের কাগজ ছুড়ে দিয়ে যায়। দরজায় নক না করায় আমরা টের না পেলে বিলের কাগজ বৃষ্টির পানিতে ভিজে বা অন্যভাবে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় হারিয়েও যেতে পারে। একারনে বিল সুন্দরভাবে গ্রাহককে হাতে হাতে দেয়ার কথা। এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন তদারকিই নাই।

শহরের কয়েকজন গ্রাহক জানান সৈয়দপুরে ২২টি বিহারি (অবাঙ্গালি) ক্যাম্প রয়েছে। সরকার এসব ক্যাম্পবাসিদের ফ্রি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দিলেও তারা ক্যাম্পের বাহিরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে অর্থ আদায় করে চলেছেন। উর্দুভাষিদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল বাহিরের গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া সৈয়দপুর শহরে প্রায় ২২টির মতো অটো বিক্সা ও চার্জার রিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। নেসকোর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ঐসব গ্যারেজে মাসিক চুক্তির বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল গছিয়ে দেয়া হচ্ছে সাধারন গ্রাহকের ঘাড়ে। এ নিয়ে নেসকো কর্তৃপক্ষ ও পৌর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েও সুফল না পাওয়ায় একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছেন সৈয়দপুরের সকল বিদ্যুৎ গ্রাহক।

এ বিষয়ে নেসকো সৈয়দপুর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া জানান, মিটার রিডাররা অনেক সময় মিটার না দেখেও বিল করে থাকেন। তবে কারো কোন অভিযোগ থাকলে সমাধান করা হচ্ছে।