সৈয়দপুরে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকি, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

আপডেট: মে ২৯, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রভাবশালী এক পরিবারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করায় বাদীনির পরিবার বিপাকে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত প্রভাবশালী মহল থেকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। মামলার তদন্ত কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চালানো হচ্ছে কুটচাল। এতে করে অসহায় হয়ে পড়েছে বাদীনির পরিবার।

শনিবার (২৯ মে) দুপুরে শহরের কয়া বাঁশবাড়ীর আল ফারুক একাডেমি সংলগ্ন নিজ বাসায় স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন ওই মামলার বাদীনির পিতা এজাজুল ইসলাম বাচ্চু। এ সময় মামলার বাদীনি নাভানা শারমীন অনন্যা ও তার মা নাসিমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এজাজুল ইসলাম বাচ্চু তার বক্তব্যে বলেন, গত ১৮ মে শহরের প্রভাবশালী পরিবার খেজুরবাগ মুন্সিপাড়া এলাকার অধিবাসি সৈয়দপুর প্রেসক্লাব’র একাংশের সভাপতি ও সাপ্তাহিক আলাপন সম্পাদক আমিনুল হক, তার স্ত্রী সৈয়দপুর সরকারী ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের উপাধ্যক্ষ নার্জিস বানু, ছেলে আমেরিকার ক্যার্লোফোনিয়া প্রদেশের অধিবাসী নাশীঈদ আরেফুল হক ও সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের প্রদর্শক নূরুন্নবী দুখুর বিরুদ্ধে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করা হয়। মামলার বাদীনি হলেন আমার মেয়ে নাভানা শারমীন অনন্যা।

মামলার কথা জানতে পেরে সাংবাদিক আমিনুল হক মামলা তুলে নিতে বাদীনি ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন। এ কাজে সরকারের সামরিক ও বেসামরিক কর্তা ব্যক্তিদেরও ব্যবহার করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। মামলার আসামীরা টাকার জোরে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহে সকল ধরনের কূটচাল অব্যাহত রেখেছেন।

এজাজুল ইসলাম বাচ্চু সাংবাদিকদের জানান, গত ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক আমিনুল হকের ছেলে নাশীঈদ আরেফুল হকের সঙ্গে তার মেয়ে নাভানা শারমীন অনন্যার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলের পরিবার তথ্য গোপন করে। এর আগেও ওই ছেলের দুটি বিয়ে হয়েছিলো। বিষয়টি জানার পর জামাতা ও তার পরিবারের লোকজন অনুতপ্ত হয়ে লজ্জিত বলে অভিমত প্রকাশ করলে তা মেনে নিয়েই সংসার করতে সম্মত হয় অনন্যা। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছিলো।

একসময় ছেলে আমেরিকা চলে যায়। আমার মেয়েকেও আমেরিকা নিয়ে যেতে কাগজপত্রের চালাচালি শুরু হয়। এরই মধ্যে মেয়ের শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি ও জামাই মেয়ের কাছে যৌতুক বাবদ ৭৫ লাখ টাকা দাবি করে বসে। তখন আমার মেয়ে তাদের সাফ জানিয়ে দেন যৌতুক বাবদ কোন টাকা আমার বাবা মা দিবেন না। এ কথা শুনে ছেলের বাবা ও মা মানসিক ও শারীরিক ভাবে আমার মেয়ের ওপর টর্চার চালাতে থাকে। মেয়ে সংসার করার চিন্তায় তাদের সমস্ত নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে আসছিলো।

গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছেলের বাবা সাংবাদিক আমিনুল হক ও মা উপাধ্যক্ষ নার্জিজ বানু আমার মেয়েকে তাদের বাসায় রেখে ছেলের কাছে আমেরিকার ক্যার্লোফোনিয়া প্রদেশে চলে যায়। এ সময় নাশীঈদ আরেফুল হক মোবাইল ফোনে আমাকে ও আমার মেয়েকে যৌতুক বাবদ ৭৫ লাখ টাকা দেয়ার জন্য উপুর্যপরি চাপ দিতে থাকে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ি আমেরিকা থেকে ফিরে আসলে আমার মেয়ে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে।

এরপর ঈদুল ফিতরকে ঘিরে গত ৫ মে আমার মেয়েকে তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি বাসায় নিয়ে যায়। তারা জানায় ঈদে তাদের ছেলে আমেরিকা থেকে সৈয়দপুরে আসবে। এদিনেই আবার মামলার আসামী নাশীঈদ আরেফুল হক মেয়েকে মোবাইল ফোনে বলে যে যদি যৌতুক বাবদ ৭৫ লাখ টাকা দেয়া হয় তাহলেই সে নিজ দেশে ফিরবে, নচেৎ নয়। এ সময় নাশীঈদের কথার সঙ্গে সুর মেলান শ্বশুড় সাংবাদিক আমিনুল হক ও শ্বশাড়ি উপাধ্যক্ষ নার্জিজ বানু। যৌতুকের টাকার জন্য সমানে তারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে মেয়ের ওপর।

বিশেষ করে গত ১০ মে ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজের পর মেয়ের শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ি আমার মেয়ের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে যৌতুকের টাকার জন্য কঠিন চাপ দিতে থাকে। আমার মেয়ে তাদের কথার প্রতিবাদ করলে আমেরিকা থেকে নাশীঈদ মোবাইল ফোনে তার বাবা ও মাকে আমার মেয়েকে পারপিট করার হুকুম দেয়। ছেলের কথার সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার মেয়ের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের হাতে থাকা আনুমানিক দুই ফুটের বাঁশের লাঠি দিয়ে আমার মেয়েকে বেশুমার মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাসার মধ্যে আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা বহিরাগত নুরুন্নবী দুখুও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতারি মারতে থাকে আমার মেয়েকে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদীনি নাভানা শারমীন অনন্যা বলেন, এক পর্যায়ে আমার শ্বশুড় সাংবাদিক আমিনুল হক আমার তলপেটে লাথি মারে। আর বলে যে ও যাতে জীবনে মা হতে না পারে সেই জন্যই এই কৌশল নেয়া হয়েছে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলতে শ্বাশুড়ি নার্জিজ বানু আমার গলা চেপে ধরে। যাতে আমি শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যাই।

অনন্যা সাংবাদিকদের আরও জানান, তাদের মারপিটের শিকার হয়ে আমি প্রানে বাঁচতে আর্তচিৎকার শুরু করি। আমার চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং আমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু ওইসব প্রতিবেশিদেরকেও অপমান অপদস্ত করে বের করে দেয়া হয়। পরে প্রতিবেশি সামিউল হকের মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে আমার বাবা মা শ্বশুড়ালয়ে উপস্থিত হয়ে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আমি সুস্থ্য হওয়ার পর ১৬ মে থানায় মামলা করতে গেলে আসামী পক্ষের প্রভাবে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। পরে বাধ্য হয়ে ১৮ মে আদালতে মামলা দায়ের করি। বর্তমানে মামলাটি আাদালতের নির্দেশে পিবিআই’র তদন্তাধীন। এরপর থেকেই মামলা তুলে নেয়ার জন্য অনবরত চাপ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি ধামকি। ফলে আমরা সপরিবারে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারন তারা মানুষ না, তারা মানুষরুপি হিংস্র বন্য প্রাণী। যে কোন সময় তারা আমাদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।

উল্লেখ্য, ঘটনার পর উভয়পক্ষ সম্মানের কথা ভেবে মিডিয়া এড়িয়ে যায়। কিন্তু ‘৭৫ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় গৃহবধূ নির্যাতন, স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের’ শিরোনামে সাংবাদিক শাহজাহান আলীর একমাত্র সংবাদটি প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এহেন শিক্ষিত ও প্রভাবশালী পরিবারের জঘন্য অপকর্ম নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।