সোনারগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী ৩দিন ব্যাপী বউ মেলা শুরু

আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : প্রায় দুই’শ বছরের আদি বটবৃক্ষের নিচে সারীবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূঁজা অর্চনার জন্য দাড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে দু’তিন সস্তানের জননীরা। তাদের সঙ্গে টুকটুকে রঙ্গিন ফুলেল সাজে দাড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মালম্বীর অনুসারী আবাল, বৃদ্ধ, বনিতাদের কোলাহল।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার ভট্রপুর জয়রামপুর প্রামের আদি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে বউমেলার দৃশ্য এটি। এ মেলাকে সনাতন ধর্মালম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। পুরানো এ বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউ মেলা। বৈশাখের ২য় দিন থেকে এ বউমেলা শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর ঐতিহাসিক বউ মেলা বসে। উপজেলা পরিষদের পাশে ভট্রপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পহেলা বৈশাখের পরদিন এ মেলা বসে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পদতলে (সনাতন) হিন্দু সম্প্রাদায়ের শত শত নর-নারীরা পহেলা বৈশাখের এ পূজায় অংশগ্রহন করেন।
স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালী তলার এ বউ মেলার জন্য। এ বিশ্বাসেই এখানে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে এ বউ মেলার জন্য। রেকাবি ভরা বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হয় বউ মেলায়। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর উড়ানো ও পাঁঠা বলি দেয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর সুখ শান্তিতে যেন কাটে দাম্পত্য জীবন এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করে হিন্দু নারীরা।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অগনিত রমণীর কলহাস্য ও পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বটতলার বউমেলা। বউমেলায় অংশগ্রহনকারীদের অধিকাংশ নারী হলেও পুরুষরাও এ মেলায় অংশ গ্রহন করে তবে সংখ্যায় কম। রমণীরা হাতের রিকাবীতে তরমুজ, কাঁঠাল, কলা আম, শশা, বাঙ্গিসহ মৌসুমী ফল নিয়ে লাইন ধরে বটবৃক্ষ তলে ভোগ দিয়ে পুজা আর্চনা করেন। মৌসুমী ফলের স্তুপ পড়ে যায় বট তলায়। ফল দিয়ে পূজা-অর্চনা শেষে ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদরূপে বিতরণ করা হয়। পহেলা বৈশাখের পরদিন শুক্রবার পূজার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হয় ৩ দিনব্যাপী বউমেলা।
মেলায় আসা নববধূ রিতা রানী দাস, মনিকা সাহা ও সবিতা দত্ত জানান, সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী সস্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় এসে পুঁজা করতে এসেছি। বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পুজা আর্চনায় স্বামী সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনায় সফল হয়। তাই এসেছি এ মেলায়।
পুরোহীত চন্দন ভট্রাচার্য জানান, এ বউ মেলায় সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভীড় করে সিদ্ধেশ্বরী বটতলায়। এবারে সকালে আনুষ্টানিকতার মধ্য দিয়ে পুজা আর্চনা হয়ে মেলা শুরু হয়। এ মেলা পুজা আর্চনা মূলত একদিনে। কিন্তু মেলা জমে ৩ দিন। এ মেলাটি নারী কেন্দ্রীক হলেও এখানে আসেন হিন্দু, মুসলমান সকল ধর্মালম্বীর মানুষ। আসে বিদেশী পর্যটকরাও।
বউ মেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নিলোৎপল রায় জানান, নব রূপে এসো নববর্ষ ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো’ নতুন বছর সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারও বর্ষবরণ উৎসবে আমরা সিদ্ধেশ্বরী কলী পূজার আয়োজন করেছি। গত ২ বছরের তুলনায় এ বছর ভক্তদের উপস্থিতি একটু বেশি হবে বলে ধারনা করছি।
সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মানিক ঘোষ জানান, সকলের সহযোগিতায় এ বউ মেলায় পুজা অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নেন।