সোনারগাঁয়ের সাবেক ওসি ও দারোগার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার (এসআই) সাধন বসাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসসামস জগলুল হোসেন এ পরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, দুইজনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলার বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর বলেন, ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর মধ্যরাতে যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম স্বপন, বাবুল ও আমাকে সোনারগাঁ থানার সাবেক ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাক বাসা থেকে তুলে নিয়ে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে তারা জাহিদুল ইসলাম স্বপনের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা।
তিনি আরও বলেন, পরে জাহিদুল ইসলাম স্বপন কোর্টে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিরা আমাকে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। আমার বাড়িতে গিয়েও হুমকি দেন তারা। পরে এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা করি। সেই তদন্তের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আদালতে শুনানি শেষে আদালত ওসি মোর্শেদ আলম ও সাধন বসাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দত্ত বাপ্পী বলেন, আমরা ২০২০ সালে একটি মামলা করি। মামলাটি দায়েরের পর আদালত জুডিসিয়াল তদন্তের জন্য পাঠায়। সেই তদন্ত রিপোর্ট আদালতে আসার পর আমাদের কাছ থেকে শুনে আদালত মামলাটি আমলে নেন। সেই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মামলাটি ছিল হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে। এ মামলায় আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন। আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এ ম্যাসেজটি যাওয়ার জন্য মামলাটি করেছিলাম।
জাহিদুল ইসলাম স্বপন জানান, সোনারগাঁ উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় তাঁর কেনা প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর মধ্যরাতে সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। পুলিশ তাঁর হাত-পা ও চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাক জমিটি ছেড়ে না দিলে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেন। ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে হলে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পুলিশের এই প্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে বেদম মারধর করা হয়। তাতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পুলিশ আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার থানায় এনে সারা রাত নির্যাতন করে। পরদিন ৮ অক্টোবর বিকেলে পুলিশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর জিম্মায় আমাকে ছেড়ে দেয়।
এদিকে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম ও উপপরিদর্শক (এসআই) সাধন বসাকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে মামলা করেন জাহিদুল ইসলাম স্বপন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার পদমযার্দার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করতে হবে।
এরপর জাহিদুল ইসলাম স্বপ্ন সোনারগাঁ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোরশেদ আলম পিপিএম ও সেকেন্ড অফিসার এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে সিকিউরিটি সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন সাবেক এমপির এপিএস ও যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম স্বপন।
পুলিশ হেডকোয়াটার্স স্বপনের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ ও পুলিশ হেডকোয়াটার্সের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তার সমন্বয়ে দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। এবং পুরো ঘটনাটির অডিও রেকর্ডও প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি প্রমানিত হওয়ায় সাধন বসাককে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।