স্ত্রীকে উত্যাক্ত করায় মদপানের আসরে বন্ধুকে ৮ টুকরো করে খুনঃ শাহীনের স্বীকারোক্তি

আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :

গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্ত্রীকে উত্যাক্ত করায় মদপানের আসরে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গার্মেন্টস কর্মী সবুজ বার্নার্ড গোছালকে (৩২) হত্যার পর বটি দা’ দিয়ে লাশ কেটে ৮ টুকরো করেছিল বন্ধু শাহীনুর রহমান শাহীন (৩২)। লাশের টুকরোগুলো বস্তায় ভরে রাতে খাটের নীচে লুকিয়ে রেখে পরদিন সেগুলো প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছিল সে। পরে নিহতের পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে শাহীন। নিহতের ঘাতক বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শাহীন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মঙ্গলবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম- শাহীনুর রহমান শাহীন (৩২)। তিনি সাতক্ষীরার তালা থানার বালিয়া এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের ভাসানিয়া গ্রামের অমূল্য পিতা অমূল্য গনসালভেসের ছেলে সবুজ বার্নার্ড গোছাল (৩২) স্থানীয় পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল এ্যাপারেলস্ লিঃ নামের পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি চেকার (কিউ.সি) পদে চাকুরী করতেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর কারখানার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। নিখোঁজের তিন দিন পর শনিবার (১অক্টোবর) তার লাশের ৭টি টুকরো কালীগঞ্জের পানজোরা গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতের দেহের ডান পায়ের হাটুর নীচের অবশিষ্ট অংশ এদিন খুঁজে পাওয়া যায় নি। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের বন্ধু শাহীনুর রহমান শাহীনকে (৩২) রবিবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর পিবিআই এর সদস্যরা।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সবুজ বার্নার্ড গোছালকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে শাহীন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়ি থেকে বটি দা’, রক্ত মাখা কাপড় ও লাশের টুকরো বহনের জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে পিবিআই’র সদস্যরা। নিহতের ডান পায়ের হাটুর নীচের অবশিষ্ট অংশ পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল এ্যাপারেলস্ লিঃ এর ফ্যাক্টরীর পাশের ডোবা থেকে রবিবার উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, কালীগঞ্জের পানজোরা গ্রামের একই কারখানায় চাকুরীর কারণে সবুজ বার্নার্ড গোছালের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহীন ও শাহীনের স্ত্রী জেসমিন আক্তারের। স্থানীয় মানিক মেম্বারের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহীন। পরিচয়ের সূত্রধরে সবুজ ও শাহীনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সবুজ প্রায়শঃ শাহীনের বাসায় আসা যাওয়া করতেন এবং শাহীনের স্ত্রীকে প্রেম নিবেদন ও বিয়ের প্রস্তাব দিত এবং উত্যাক্ত করতো। স্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে বন্ধু সবুজের উপর ক্ষুব্ধ হয় শাহীন।

কয়েকদিন আগে উত্তরখান এলাকায় আফকো হাসান গার্মেন্টস লিঃ এ চাকুরী নেন শাহীন। ঘটনার দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) কালীগঞ্জ পানজোড়া এলাকায় ভিকটিমের সঙ্গে আসামীর দেখা হয়। সবুজ আসামী শাহীনুরকে নতুন চাকুরী পাওয়ায় তাকে পার্টি দেওয়ার কথা বলে। এতে সে রাজি হয়ে তার স্ত্রীর জমানো টাকা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে ভিকটিমকে মদ আনতে বলে। ভিকটিম মদ নিয়ে আসলে তারা দু’জন ঘরে বসে মদ সেবন শুরু করে। এসময় শাহীনের স্ত্রী তার কর্মস্থলে ছিল। মদ সেবনের একপর্যায়ে মুখে মদ তেঁতো লাগার কারনে সবুজকে শাহীন জিজ্ঞাসা করে এতো টাকা দিয়ে তেঁতো মদ এনেছো কেন? এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি হয়।

একপর্যায়ে ভিকটিমের বুকে আসামী স্বজোরে ঘুষি মারলে ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে মারা যান সবুজ। পরে শাহীন লাশ গুম করার জন্য ভিকটিমের লাশটি বটি দা’ দিয়ে নিজেই ৮ টুকরো করে সেগুলো বস্তায় ভরে খাটের নিচে রেখে দেয়। পরদিন তার স্ত্রী গার্মেন্টসে যাওয়ার পর লাশের এক একটি অংশ বস্তায় ও বাজারের ব্যাগে ভরে মানুষের অগোচরে পানজোড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিয়ে নিহতের মোবাইল নিয়ে সাতক্ষীরার গ্রামের বাড়ি গিয়ে আত্মগোপন করে শাহীন। এদিকে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে বলে জিজ্ঞাসাবাদকালে গ্রেফতারকৃত শাহীন জানিয়েছে।

###

মোঃ রেজাউল বারী বাবুল

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।

০৪/১০/২০২২ ইং।