স্বৈরতান্ত্রিকভাবে চলছে দেশ-জিএম কাদের

আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২২
0


সরকার ক্ষমতায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন, যারা ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক; সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, যারা ভাবছেন আগামীতে সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে দুটি জোট হবে। একটির নেতৃত্বে থাকবে সরকারি দল, সঙ্গে থাকবে তাদের মিত্ররা। অন্য জোটের নেতৃত্ব দেবে জাতীয় পার্টি।

মঙ্গলবার দুপুরে কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় জাপা চেয়ারম্যান আরো বলেন, সামনের দিনে দেশের বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষ জাতীয় পার্টির পতাকা তলে যোগ দেবেন। দেয়ালে মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে, তাদের বাঁচাতে হলে সামনে চলতে হবে। তারা জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে বিএনপি কোনো জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবে না। কারণ, বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে আছে, মানুষও বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র একই। আওয়ামী লীগ একবার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে, পরে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতিতে চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার বিএনপি গণতন্ত্র ধংসের কাজ শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র পুরোপুরি ধংস করেছে।

দেশে এখন আর গণতন্ত্র নেই দাবি কর৷ বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ-বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র শেষ করে দিয়েছে। এখন চলছে একনায়কতন্ত্র, চলছে স্বৈরতন্ত্র। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে গণতন্ত্র থাকে না, জবাবদিহিতা থাকে না। তাই দুর্নীতি ও দুঃশাসন বেড়ে গেছে।

জিএম কাদের আরো বলেন, ৯১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সে ধারায় স্বৈরতান্ত্রিকভাবে চলছে দেশ। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে মানুষ ভয় পায়, সরকারের সমালোচনা শুনতেও মানুষ ভয় পায়। মানুষের আতংক দেখেই বোঝা যায়, দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের মাঝে আতংকই গণতন্ত্র না থাকার প্রমাণ।

এ সময় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা শেষ করে দিয়েছে। স্বাধীনতার চেতনা ছিলো দেশের মালিক হবে জনগণ। তাই দেশের নাম দেয়া হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। মানুষে মানুষে থাকবে না বৈষম্য, থাকবে না কোনো বিভেদ। এখন স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি বলে মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। স্বাধীনতার আগে আমাদের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো, এখন বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে দেশের মূল্যবান অর্থ সম্পদ। যা বিদেশী বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘ হলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে টাকার দাম কমে যাচ্ছে। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের গণমাধ্যমগুলো বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে, কর্মীদের চালিয়ে রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, অনেকেই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলকে অবৈধ বলেন, কিন্তু কোর্টের রায় অনুযায়ী ৮৬ সাল থেকে পল্লীবন্ধুর দেশ পরিচালনা অবৈধ নয়।

জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তখনই জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট না করে নির্মমভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারো জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে। গেলো ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম আচরণ করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে থাকবে। জাতীয় পার্টির পতাকা তলে থেকে কেউ অন্য দলের দালালি করলে তাদের ক্ষমা করা হবে না বলে কড়া হুশিয়ারি দেন বিরোধী দলীয় উপনেতা।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, লে. জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীএমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, নাজমা আক্তার এমপি, এমরান হোসেন মিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল হক রবি, শাহারিয়ার ইকবাল। এতে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মো. আবু তৈয়ব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ স্বপন, আলমগীর হোসেন, জোছনা আক্তার, শারমিন শান্তাসহ প্রমুখ।