সৎনাতির দেওয়া পেট্রোলের আগুনে দগ্ধ নানীর মৃত্যু, স্কুল ছাত্রী নাতনীর অবস্থাও আশংকাজনক

আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুরে স্কুল থেকে নাতনীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শরীরে পেট্রোল ঢেলে সৎনাতির দেয়া আগুনে দগ্ধ নানী বেবী বেগম (৫৫) মারা গেছেন। তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একসপ্তাহ থাকার পর শনিবার রাতে মারা যান। একই ঘটনায় দগ্ধ নিহতের নাতনী সানজিদা আক্তারের (১৩) অবস্থাও আশংকাজনক। রবিবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত বেবী বেগম (৫৫) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কান্ডপাশা গ্রামের ইউনুস তালুকদারের স্ত্রী এবং সানজিদার নানী।

জয়দেবপুর থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বেবী বেগম। একই ঘটনায় দগ্ধ তার নাতনী সানজিদা আক্তার (১৩) আশঙ্কাজনক অবস্থায় একই হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ১৮ জুন নাতনী সানজিদাকে নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নানী-নাতনী দু’জনের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সানজিদার সৎভাই শুভ মিয়া ও ভগ্নিপতি সাব্বির আহমেদ। দগ্ধ নানী-নাতনীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার পর বেবী বেগম মারা যান। সানজিদা আক্তার গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার শফিকুল ইসলামের মেয়ে।

এঘটনায় ওই রাতেই সানজিদার বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মনিরা বেগম, মনিরার মা এবং তার (মনিরার) প্রথম পক্ষের ছেলে শুভ মিয়া ও জামাতা সাব্বির আহমেদকে আসামী করা হয়। পুলিশ মামলায় অভিযুক্ত সানজিদার সৎভাই শুভ মিয়া ও ভগ্নিপতি সাব্বির আহমেদকে গ্রেফতার করে। মামলার অপর দুই আসামী মনিরা বেগম ও তার মা (মনিরা বেগমের) বর্তমানে উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন।

সানজিদার সৎভাই শুভ মিয়া নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার অর্জনচর এলাকার সুলতান ফকিরের ছেলে এবং শুভ মিয়ার ভগ্নিপতি সাব্বির আহমেদ (২৬) ময়মনসিংহের ভালুকা থানার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. মো. তরিকুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর সাড়ে ৭টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বেবী বেগম। তার শরীরের ৬০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। তার নাতনী সানজিদা আক্তারের (১৩) অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনিও একই হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আগুনে সানজিদার শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার শফিকুল ইসলামের মেয়ে সানজিদা আক্তার (১৩) স্থানীয় হাজী নুরুল ইসলাম মডেল একাডেমী সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সানজিদার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা শফিকুল ইসলাম তিন সন্তানের জননী মনিরা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সম্প্রতি পারিবারিক বিরোধের জেরে বনিবনা না হওয়ায় মনিরা বেগম তার দ্বিতীয় স্বামী শফিকুল ইসলামকে ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে শফিকুল ইসলাম তার সন্তানদের দেখাশুনার জন্য তার প্রথম পক্ষের শাশুড়ি বেবী বেগমকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সানজিদার বাবা জানান, গত ১৮ জুন (রবিবার) দুপুরে স্কুল থেকে নাতনী সানজিদাকে নিয়ে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলেন বেবী বেগম। পথে শিরিরচালা মিনাপাড়া এলাকার একটি কাঁঠাল বাগানের পাশে পৌছতেই মনিরা বেগমের প্রথম সংসারের বখাটে ছেলে শুভ মিয়া (২০) ও জামাতা সাব্বির আহমেদ মোটরসাইকেলযোগে এসে তাদের পথরোধ করে। এসময় তারা সানজিদা ও তার নানী বেবী বেগমের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে তাদের ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার পর সানজিদার নানী বেবী বেগম মারা যান।

###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
২৫/০৬/২০২৩ ইং।