হরিণাকুন্ডুতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তালাক!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
0
talak

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকু-ু উপজেলার বিয়েবিচ্ছেদ বেড়েই চলেছে । গত ১৪ মাসে উপজেলায় ২১৯ টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। নানা কারণে ক্রমেই তালাকের সংখ্যায় ভারি হচ্ছে নিকাহ রেজিস্ট্রারের রেকর্ড খাতা। জানা গেছে , ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটেছে ২১৯ টি। এর মধ্যে স্ত্রীর ইচ্ছায় ৯৯ টি , স্বামীর ইচ্ছায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৭৮ টি। আর উভয়ের আপসের মাধ্যমে বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৪২ টি। নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. সাইদুর রহমান জানান, এসব বিচ্ছেদে নারীরা স্বামী ও শ্বশুর – শাশুড়ির শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক দাবি , স্বামীর বেপরোয়া জীবনযাপনসহ নানা কারণ উল্লেখ করেছেন।

আর পুরুষরা তাদের নোটিশে বনিবনা না হওয়া , স্বামী ও শ্বশুর – শাশুড়ির প্রতি স্ত্রীদের অবহেলার কথা জানিয়েছেন। তুচ্ছ ঘটনাতেও বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি শাহিদা বা খাতয়েছেন। জানতে চাইে (ছদ্মনাম) নামের এক নারী তার স্বামীকে বিয়েবিচ্ছেদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর স্বামীর বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া – বিবাদ হতো। এতে শ্বশুর – শাশুড়িও তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। শুধু শাহিদা নয় তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন বিচ্ছেদের ঘটনা। রিপন নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি তার স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ছয় মাস আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল।

বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হয় না। তিনি বহুবার তার স্ত্রীর পরিবারকে জানিয়েছেন তবুও কোনো ফল না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জেলাজুড়ে বিয়েবিচ্ছেদের আরও ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জেলায় বিচ্ছেদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৭৮ টিতে। প্রতি মাসে গড়ে ২৭১.৬১ টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

কারণ নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ছাড়াও আদালত, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেও ঘটছে এই তালাকের ঘটনা। জেলা কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবাইদুর রহমান জানান, করোনাকালে বিয়ে বন্ধনের চেয়ে বিচ্ছেদের ঘটনাই বেশি ঘটছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সী ফিরোজা সুলতানা বলেন, তালাকের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে নারীদের কর্মমুখী শিক্ষার দিকে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় ।