হিজাবের পাশাপাশি নিষিদ্ধ গেরুয়া উত্তরীয়ও শিক্ষাঙ্গনে নিষিদ্ধ করলো ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
0

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র’ বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে পোশাক-নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে জানাল কর্নাটক সরকার। হিজাব-বিতর্ক সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছে, শুধু হিজাব নয়, কর্নাটকের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গেরুয়া উত্তরীয়ও।
বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে মঙ্গলবার কর্নাটক সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, ‘‘কট্টরপন্থী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-র মদতেই পোশাকবিধির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’ ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কর্নাটকে ‘হিজাব পরার অধিকার’ সংক্রান্ত কোনও দাবি ঘিরে অশান্তি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

হিজাব বিতর্কের আবহে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পোশাক-নির্দেশিকা জারি করেছিল কর্নাটকের বিজেপি সরকার। কর্নাটক শিক্ষা আইন ১৯৮৩-এর কথা উল্লেখ করে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পোশাক পরেই পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। তবে যে-সব কলেজে কোনও পোশাকবিধি নেই, সেখানে এমন পোশাক পরা যাবে না যাতে শিক্ষাঙ্গনের ভারসাম্য, ঐক্য এবং শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। তুষারের দাবি, ওই নির্দেশিকার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই।

প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে কর্নাটকের উদুপির একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে কয়েক জন হিজাব পরিহিত পড়ুয়াকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরিহিতরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসাবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এর পর কলেজে পোশাকবিধি স্থির করতে কর্নাটক সরকার একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানানো হয়, হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয়— কিছুই পরার অনুমতি নেই। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েক জন মুসলিম ছাত্রী কর্নাটক হাই কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। তাঁরা আদালতকে জানান, হিজাব পরা তাঁদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনও ভাবেই তা বাতিল করা যায় না। কিন্তু মার্চ মাসে কর্নাটক হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে সরকারি নির্দেশিকায় সিলমোহর দেয়। এর পর মুসলিম পক্ষের তরফে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।