১ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা চায় শিক্ষার্থীরা

আপডেট: মে ৩০, ২০২১
0

ডেস্ক রিপোর্ট:

১ জুন থেকে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়। এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা গণসাক্ষর গ্রহণ করছে। আজ বিকেল থেকে শাহবাগে তারা এই কর্মসূচী শুরু করেছে। শাহবাগে তারা সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশ ও গণ সাক্ষর কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছে।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী গতকাল বলছেন, অভিভাবকরা নাকি চায় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হোক। উনার কাছে নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বার্তাই আসে।

শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন সময়ে এ বিষয় নিয়ে জরিপে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া তথ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত পাওয়া যায়। যেমন:- পিপিআরসি এবং বিজিআইডি পরিচালিত জরিপ জানায়, প্রাথমিকের ৯৭.৭% এবং মাধ্যমিকের ৯৬% অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে। এছাড়া ‘এডুকেশন ওয়াচ’- পরিচালিত জরিপেও প্রায় একই তথ্য উঠে আসে, যেখানে ৭৬ শতাংশ অভিভাবক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে মতামত দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সেই সব সংখ্যাগুরু অভিভাবকের বার্তা কেন এসে পৌঁছায় না? কেন শুধু সংখ্যালঘু অভিভাববকদের বার্তাই পৌঁছায়, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, সংক্রমণের হার ৫% নিচে নামলে নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তাহলে বলতে হয় গত জানুয়ারিতেও তো সংক্রমণের হার ৫% এর নিচে নেমে যায়, তখন কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলো না?

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে সংক্রমণের হার ২% এরও নিচে তে নেমে আসে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে টিকা কার্যক্রম শুরু পর থেকেই সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়তে থকে। শিক্ষার্থীরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশেষজ্ঞ লুক মন্টাগনিয়ার বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “টিকা দেওয়ার সাথে করোনার বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে” সম্প্রতি বিশ্বকে জানিয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশেষজ্ঞ লুক মন্টাগনিয়ার। শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশে আবারও টিকা কার্যক্রম গতিশীল হচ্ছে। এখন যদি ফের করোনার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বছরও খোলার মুখ দেখতে পাবে না। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সাথে টিকা দান বা সংক্রমণ হারের হ্রাস-বৃদ্ধির কোন শর্ত আরোপ করা কখনই ঠিক হবে না। বরং বিনাশর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেছেন, “আন্দোলনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।” অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসায় বসে থাকলে বরং আরো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। কারণ দীর্ঘদিন ঘরে আবদ্ধ থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি করে, যা খুবই ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাসায় আবদ্ধ থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। জরিপে উঠে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৫২.৮৭ % শিক্ষার্থী মানসিক অসুস্থ হয়ে উঠেছে, ৪০.৯১ % এর মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে এবং ১২.৮% শিক্ষার্থীর মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পুরো একটি প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, যা করোনার ক্ষতি থেকে আরো বেশি ভয়ঙ্কর ও সুদূর প্রসারী। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সেই ক্ষতির কথা আমলেই আনছেন না।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে আটকে রেখে শতভাগ অনলাইন মুখী করে মারাত্মক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অনেকে অনলাইনে গেমে বুদ হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধ করে তাদের দায় সারতে চায়। কিন্তু ভিপিএন ডাউনলোড করে যে কেউ এ গেমগুলো খেলতে পারে, তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি করবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি তার ভিপিএন পাহারা দিবে? শিক্ষার্থীরা বলেন, গেম নিষিদ্ধ করার থেকে বেশি দরকার শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস থেকে বাস্তব ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, তাহলে অনেকেই এসব ভয়ঙ্কর গেমের নেশা থেকে বাঁচতে পারবে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, ‘অবিলম্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন’ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ শামসুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এম রাহাত সহ আরো অনেকে।