৬ বছরে শিল্প-করখানায় ৬০৮১টি অগ্নিকান্ড : জনগনের প্রতি অবহেলা করা সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কোন অধিকার নেই — নজরুল ইসলাম খান

আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২১
0

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন , গত ৬ বছরে দেশে শুধু শিল্প-করখানায় ৬০৮১টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সৌভাগ্যক্রমে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কেউ নিহত হয়নি। কিন্তু ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪০০ কোটি টাকা এবং বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়েছে হাজারো শ্রমিক। যে সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে কিম্বা ব্যর্থ হয় সেই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কোন নৈতিক অধিকার থাকেনা।”

হাসেম ফুড কোম্পানিতে অগ্নিকান্ডে নিহতদের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলামগেত ৬ বছরে বিভিন্ন অগ্নিকান্ডে জানমাল ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তুলে ধরে বলেন,”শুধু গত কয়েক বছরে বিভিন্ন শিল্পে সংঘটিত অগ্নিকান্ডে নিহতদের হিসাব নিলে আমরা দেখবো ২০১০ সালে গরীব এন্ড গরীব সুয়েটার ফ্যাক্টরীতে ২১ জন এবং স্পোর্টস ওয়ার ফ্যাক্টরীতে ২৯ জন; হামীম গ্রুপে ২৯ জন ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনস’এ ১১২ জন, ২০১৩ সালে স্মার্ট এক্সপোর্ট’এ ১২ জন, সুংহাই সুয়েটারে ৭ জন এবং আসওয়াক কম্পোজিটে ৭ জন; ২০১৫ সালে স্টাইরোফোম প্যাকেজ ফ্যাক্টরীতে ১৩ জন; ২০১৬ সালে টাম্পাকো ফয়েল’এ ৩৪ জন, ২০১৭ সালে মাল্টি ফ্যাবস গার্মেন্টস’এ ১৩ জন ২০১৯ সালে প্রাইম প্লেট এন্ড প্লাস্টিক ইন্ডা:লি:’এ ১৩ জন এবং ২০২১ সালে হাশেম ফুড কোম্পানী লিমিটেডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় ভবন ধ্বসে নিহত হয়েছেন ১১৩৬ জন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসংখ্যা শ্রমিক আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন অনেক। এর প্রধান কারন, বেশীর ভাগ কারখানায় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র কিম্বা পরিচিতি পত্র না দেয়ায় প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়না।”

এসব নিহতদের মধ্যে রয়েছেন অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরী শ্রমিকও। একমাত্র রানা প্লাজা হত্যাকান্ডে নিহত ও আহতগণ এবং তাজরীন ফ্যাসনের কিছু শ্রমিক ছাড়া পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেউ পায়নি। দেশে প্রচলিত আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমান বিশ^মানের করার জন্য দেশের শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহের দাবী এখনও উপেক্ষিত।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী গত ৬ বছরে দেশে শুধু শিল্প-করখানায় ৬০৮১টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সৌভাগ্যক্রমে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কেউ নিহত হয়নি। কিন্তু ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪০০ কোটি টাকা এবং বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়েছে হাজারো শ্রমিক।
এসব বাস্তবতা আমাদের শিল্পাঙ্গনে ভবন নির্মাণ, অগ্নিনিরাপত্তা এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশের ভঙ্গুরতা ও তা নিশ্চিতকরনে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের দূর্বলতা ও উদাসীনতা স্পষ্ট করে দেয়। ঘটনা পরস্পরা এটাও প্রমান করে যে, এত কিছুর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মস্থল নিরাপদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও বাস্তবে তা অর্জনে আন্তরিকতার অভাব প্রকট।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিবরণে দেখা যায় যে, কারখানার ভবন নির্মাণ ত্রুটি, পর্যায়াপ্ত সিঁড়ি না থাকা, অগ্নি নির্বাপনে অব্যবস্থা এবং ফায়ার ড্রিল না করা, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এবং কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ না করা এসব অগ্নিকান্ডে এত বিপুল সংখ্যাক প্রাণহানির অন্যতম কারন। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আগেই প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে, উপযুক্ত তদন্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়া হলে এবং ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক রীতির আলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণে বাধ্য করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো। কিন্তু এর কিছুই করা হয়নি করা হয় না। উল্লেখ্য যে, তাজরীন ফ্যাশন ও ট্যাম্পকো কয়েলসহ দেশের ৫টি আলোচিত অগ্নিকান্ড নিয়ে আদালতে ৯টি রিট করা হলেও এখনও সেসব চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।