‌’অচলাবস্থা’ থেকে দেশকে রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: জুন ৬, ২০২১
0

কোবিডকে নিয়েও সরকার ব্যবসা করছে বলে অ্ভিযোগ করে্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) কোবিডকে নিয়ে ব্যবসা করতে চায়। এই কোবিডকে নিয়ে তারা প্রথম থেকেই ব্যবসা শুরু করেছে। তাদের উপদেষ্টা সাহেবের কথায় অগ্রিম টাকা দিয়ে অক্সেফোর্ড এ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা প্রায় ৭ শ কোটি দিয়ে তিন কোটি টিকা এনে…। এখন আপনার দেড় কোটি টিকাও পায়নি।”

‘‘ এটা তারা করছে, জেনেশুনেই তারা এটা করছে।”

রাশিয়া ও চীনের টিকার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখুন কী রকম কাজ করছে। কিছু জন্তু আছে পানি খায় ঘোলা করে খায়। চীন যখন এসে বললো যে, আমার সাথে চুক্তি করো, তারা করলো না।রাশিয়া এসে বললো যে, আমি দেবো, চুক্তি করো। করলো না।”

‘‘ এখন চীন আর রাশিয়ার কাছে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে। চীন বলছে, মিথ্যা কথা বলেন কেনো? আপনাদের সাথে তো কোনো চুক্তিই হয়নি। এটাকে কী বলবে? ”

খালেদা জিয়াকে অনুপ্রেরণার উতস্য হিসেবে অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। তিনি সফল হয়েছেন এই দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। এটা সফলতা।”

‘‘সেই জন্যে এই সরকার জানে বেগম জিয়া হচ্ছেন সেই ব্যাবিলনের বংশীবাদক যিনি বাইরে রেরুলে বাঁশি বাজাতে শুরু করবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। দ্যাটস দ্য রিয়েলিটি। এজন্য তাকে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে, এ্খনো তিনি গৃহবন্দি।”

‘বাজেট নিয়ে গদগদ…”

২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ একটা বাজেট দি্য়েছে। আরে বাবা কী গদগদ সমস্ত বাজেট নিয়ে যে, ব্যবসায়ীদের জন্য এটা খুবই ভালো বাজেট হয়েছে। ৬কোটি মানুষ এখন দরিদ্র সীমার নিচে।কোথায় তাদের জন্য তো কিচ্ছু করেনি।”

‘‘ আমরা বার বার করে বলেছিলাম যে, ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের জন্য এই মানুষগুলোকে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। খুব বেশি কিছু হতো না কিন্তু। কত টাকা লাগতো। কেনো দিলেন না?প্রত্যেকটা দেশ আজকে তারা কিন্তু আগেই এই টাকাগুলোকে পৌঁছিছে, ক্যাশ ট্রান্সফার করেছে। অর্থনীতিকে যদি আপনি সচল করতে চান মানুষের পকেটে টাকা আসতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ কাকে টাকা দিচ্ছে? তেলামাথায় তেল দিচ্ছেন। ওই বড় বড় শিল্পপতি, গার্মেন্টস মালিককে দিচ্ছেন, যারা আপনাদের সাথে জড়িত তাদেরকে দিচ্ছেন। ”
‘‘ সাংবাদিকদের কোনো প্রণোদনা দিচ্ছে না। আমি জানি, অনেক সাংবাদিক ৩/৪ মাস যা্বত বেতন পাচ্ছেন না। রিকশা শ্রমিক ভাই, ছোট চাকুরিজীবী তারা কিন্তু কোনো প্রণোদনা পাচ্ছে না।”
দেশের বর্তমান এই ‘অচলাবস্থা’ থেকে দেশকে রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এগুতে হবে। আমরা জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ করছি। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে একখানে করে, জোট না হোক আমরা যুগপথ আন্দোলন করে বেরিয়ে আসতে পারি কিনা সেই চেষ্টা আমরা করছি।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন. ‘‘ আমাদেরকে কিন্তু ছিনিয়ে নিতে হবে। এই সাংবাদিকদের বলতে চাই, পাকিস্তান আমলে এই প্রেসক্লাবে আইয়ুব(আইয়ুব খান) কারফিউ জারি করেছিলো। তখন একটা কুকুর রাস্তা পার হইতেছে। প্রেসক্লাব থেকে একজন ফটোগ্রাফার জমু ল্যান্স দিয়ে ছবি তুলেছিলেন। পরেরদিন পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছিলো যার ক্যাপশন ছিলো-‘আইয়ুব তোমার কারফিউ কুত্তায়ও মানে না’।সেই কারণে প্রেসক্লাবে সেদিন হামলাও হয়নি, ওই সাংবাদিকের জেলও হয় নাই।”

‘‘ অর্থাত ওই স্বৈরাচারী সরকার, সামরিক সরকার তার মধ্যে যে মূল্যবোধ ছিলো আর আজকে যে সো-কল্ড গণতন্ত্রের স্বৈরাচার সরকারের সেই মানবিক মূল্যবোধ, মানবিক গুনাবলী নাই। ওরা একধরনের মানসিক বিকলাঙ্গ, যাকে বলা হয় ভেরিমাচ ভিনডেকটিভ। অর্থাত অন্যের কষ্ট দেখে যে হাসতে পারে তার নাম হলো শেখ হাসিনা, তার নাম হলো এই সরকার।”

তিনি বলেন, ‘‘কোবিড ব্ল্যাসিং ফর শেখ হাসিনা, কোবিড শেখ হাসিনাকে আর্শিবাদ দিচ্ছে। এই কোবিড দেখাইয়া তারা নানা অপকর্ম করছে, জনগনকে হয়রানি করছে। আজকে স্বাস্থ্য বিধির কথা বলে জনগনের আন্দোলন, প্রোগ্রাম-মিটিং-মিছিল সব কিছু বন্ধ রেখেছে তারা।”

‘‘ আপনাদের ভাববার কোনো কারণ নেই যে, করোনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে জনগনকে বাঁচানোর জন্য সরকার এই লকডাউন দিচ্ছে, এই বিধিনিষেধ দিচ্ছে। লকডাউন দিচ্ছে, সব কিছু তো চলছে, কোনো কিছু তো বন্ধ নেই, সব কিছু খোলা।”

জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলের ১৫দিনের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টির ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে বলব, জিয়ার জন্য ১৫দিনের কর্মসূচি বাদ দিয়ে ওই ১৫দিন আপনারা খালেদা জিয়ার জন্য আপনারা রাস্তায় থাকেন, আবার জামিনের দরখাস্ত করেন, হাইকোর্টে ১০ হাজার লোক যাইয়া ভরে থাবেন।”

‘‘ এখন খালেদা জিয়াই আপনাদের বাঁচাতে পারে, খালেদা জিয়াই আপনাদের ক্ষমতায় নিতে পারে, খালেদা জিয়াই তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারেন। আর কেউ পারবে না।ও্ইখান থেকে বইসা তারেক রহমান ওহি পাঠাইয়া লাভ হবে না। তার মায়ের মুক্তির কথা ছাড়া আর কেনো কথা তার মুখে আসা উচিত না।”

খালেদা জিয়াকে দ্রুত কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ বিচারকদের প্রতি উত্তার্ত আহবান জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।