ক্লুলেস হত্যার রহস্য নিয়ে পিবিআই : স্বামী নিয়ে দুই বোনের বিরোধের জেরে ছোট বোন খুন

আপডেট: জুলাই ২৮, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে এক স্বামী নিয়ে দুই বোনের বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন ছোট বোন। হত্যার পর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় হত্যাকারীরা। ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় দুইবছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত নিহতের ননদের স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম খোকন (৪৫)। তিনি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার হারুলিয়া নোয়াপাড়া এলাকার মৃত আলতু মিয়ার ছেলে।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন মোগরখাল এলাকার ভাড়া বাসায় স্বামীকে নিয়ে থাকতেন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার খালপাড়া এলাকার রজব আলীর ছোট মেয়ে আছমা আক্তার ওরফে তাহমিনা (২০)। গত ২০২১ সালের ১৭ জুলাই রাতে তাহমিনার খোঁজ করতে গিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ দেখতে পায় প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার এবং তার স্বামী নবী হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন শরীফা আক্তার (২৭) থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভিকটিম তাহমিনাকে শ^াসরোধে হত্যা করা হয়েছে মর্মে মতামত পাওয়া যায়। এরপ্রেক্ষিতে বাসন থানার এসআই নাহিদ আল রেজা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালত স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপ্রেক্ষিতে পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খোকনকে গ্রেপ্তার করে। দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বৃহষ্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে সে আছমা আক্তার ওরফে তাহমিনা (২০) হত্যাকান্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রায় একযুগ আগে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার সুনুই কুষ্টিবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে নবী হোসেন (৩০) একই থানার খালপাড়া এলাকার রজব আলীর মেয়ে শরীফাকে বিয়ে করেন। নবী হোসেন ঘরজামাই হিসেবে স্ত্রীকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। শ^শুর বাড়ীতে বসবাসকালে নবী হোসেনের সঙ্গে তার শ্যালিকা আছমা আক্তার ওরফে তাহমিনার (২০) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে ভগ্নিপতি খোকনের পরামর্শে তাহমিনাকে নিয়ে গাজীপুরে পালিয়ে এসে বিয়ে করেন নবী হোসেন। তারা বাসন থানাধীন মোগরখাল এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। খোকনের সহযোগীতায় বিষয়টি জানতে পেরে নবী হোসেনের প্রথম স্ত্রী শরীফা আক্তার (তাহমিনার বড় বোন) গাজীপুরে চলে আসেন। তিনি একই থানার মালেকেরবাড়ি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। নবী হোসেন বিষয়টি জানার পর প্রথম স্ত্রী শরীফা আক্তারের বাসায়ও আসা যাওয়া করতে থাকেন। দুইবোন একে অপরের সতীন হওয়ায় তারা যেকোন একজনের সঙ্গে সংসার করার জন্য স্বামী নবী হোসেনের উপর চাপ প্রয়োগ করেন।

এও নিয়ে তাদের সংসারে মনোমালিন্য ও ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ২০২১ সালের ১৭ জুলাই রাত ১১টার দিকে তাহমিনার সঙ্গে নবী হোসেনের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এসময় নবী হোসেনের গোপন অঙ্গে আঘাত করে তাহমিনা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাহমিনার গলাটিপে ধরে নবী হোসেন। ঘটনার সময় উপস্থিত খোকন ভিকটিম তাহমিনার দুইহাত চেপে ধরে। এতে তাহমিনার শরীর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তার মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে খোকন। এরপর নিহতের লাশ আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে নবী হোসেনও পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত খোকন। ঘটনার প্রায় ৬ মাস আগে প্রথম স্ত্রীর ছোট বোন তাহমিনাকে বিয়ে করেন নবী হোসেন।