দেশের নতুন দরিদ্র ২ কোটি মানুষের জন্য বাজেটে কোন উদ্যোগ নেই — দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপডেট: জুন ৬, ২০২১
0

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, করোনার কারণে দেশে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব মানুষের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের চাহিদা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। একটি ক্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এই বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য কিছু বলা হয়নি।

যা বলা হয়েছে তার পুরোটাই প্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার ছিল, তা বাজেটে খুবই কম। আজ রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২; পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে?’ শীর্ষক ভার্চূয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

করোনায় নতুন গরিবের সংখ্যা কত বাড়ল? তা নিয়ে বাজেটে কোনো তথ্য নেই। এ নিয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যানও নেই। তাই এতে নতুন দরিদ্রদের জন্য কোনো নীতিও নেই। তিনি বলেন, এত দিন শুধু তথ্যউপাত্তের ঘাটতি ছিল। এখন তা তথ্যের নৈরাজ্যের দিকে যাচ্ছে। এই তথ্যঘাটতির কারণে বাজেটে জনগণের চাহিদা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেটে যেসব শুল্ক ও কর ছাড় দেয়া হয়েছে, তার বড় সুবিধাভোগী হবে দেশের প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। এটার ফলে অনেক বেশি রপ্তানি প্রক্রিয়া খাত লাভবান হবে। করপোরেট করের সুবিধা বড়রাই বেশি পাবে। রাজস্ব সুবিধা যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেগুলোও বড়রা বেশি পাবে। মাঝারিরাও পাবে। কিন্তু ছোটদের জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। পুরো বাজেটটাই প্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য নয়। সবগুলো বড় ও করপোরেট গ্রুপের জন্য নেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা শ্রেণি সম্পর্কে এত বেশি উদ্যোগ আছে, ভোক্তা শ্রেণির জন্য কিছু নেই। নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু নেই। আয়করে ছাড় দেয়ার সুযোগ ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে ছাড় দেয়ার সুযোগ ছিল। ব্যক্তিখাতে যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে না। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি অনিশ্চিত। বাজেটে উচ্ছ্বাস, চ্যালেঞ্জ, অসম্পূর্ণতা রয়েছে। অতিমারির প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি। দারিদ্র্য পরিস্থিতি গুরুতর হয়েছে। কর্মহীনতা বেড়েছে। বেড়েছে বৈষম্য। দারিদ্র্যবিমোচন বাবদ যে খরচ করার দাবি সরকার করছে, তা ঠিক না। কর ছাড়ের ফলে কী পরিমাণ মজুরি শ্রম হবে তার মূল্যায়ন নেই। গতানুগতিক যুব প্রশিক্ষণেই আটকে আছে সরকার। পাঁচ বছর ধরে কোনো শ্রম জরিপ নেই।

তিনি বলেন, বাজেটে নারীদের জন্য ভালো উদ্যোগ রয়েছে। কর ছাড়, ভ্যাট মওকুফ, ন্যাপকিনে কর ছাড় এগুলো ভালো পদক্ষেপ। আইসিটি ভালো। তৃতীয় লিঙ্গের জন্য প্রগতিশীল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা সমর্থনযোগ্য। স্বাস্থ্যের বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধা ভালো। কিন্তু মানুষ নতুন দরিদ্র হয়ে গেলে তাদের জন্য কিছু নেই। নব্য দরিদ্র, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, যুব সমাজ উপেক্ষিত। চর, হাওড়, উপকূলীয় অঞ্চল, যারা একাধিক ধাক্কা খেয়েছে, তাদের জন্য বিশেষ কিছু নেই। অন্যান্য মানসিক সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় করতে না পারাটা কলঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। সামাজিক সুরক্ষায় বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা পরিসংখ্যান সমর্থন করে না। বৃদ্ধি যেটা হয়েছে, তা পেনশনে হয়েছে।

দেবপ্রিয় বলেন, সরকার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কাকে বিবেচনায় নেয়নি। এমনকি প্রথম ধাক্কাও ঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি। সরকারিভাবে এর মূল্যায়ন হয়নি। বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ উদ্যোক্তাদের হাতে বাড়ানো, সেটা ঠিকভাবে হয়নি। ভোক্তা, গবির মানুষকে অর্থ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা বাড়েনি। অন্তর্ভুক্তি বাড়লেও নায্যতার দিকে বাজেট এগোয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। এতে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ হেলথওয়াচের আহ্বায়ক মুস্তাক রাজা চৌধুরী, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রধান রাশেদা কে চৌধুরী, নিউএজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান শাহীন আনাম।