‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ কাপাসিয়ায় অনুষ্ঠিত : আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীরা বাকি সবকয়টি বই পেয়ে যাবে—-ড. দীপু মনি 

আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩
0

করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর পর ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ কাপাসিয়ায় অনুষ্ঠিত
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি  
—শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি 
** আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীরা বাকি সবকয়টি বই পেয়ে যাবে। 
** নতুন শিক্ষাক্রম হবে আনন্দময়, থাকবে না পরীক্ষাভীতি। শিক্ষাথর্ীদের পথপ্রদর্শকের ভ্থমিকায় থাকবেন শিক্ষকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : 
শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্বপ্ন দেখি স্মার্ট বাংলাদেশের। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট নাগরিক। সেই বাংলাদেশের সরকার হবে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ। এইসব স্মার্ট গড়বার জন্য যেটি দরকার সেটি হচ্ছে স্মার্ট শিক্ষা। আমরা নূতন শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে সেদিকেই আমরা এগিয়ে চলেছি।

রবিবার দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি এসব কথা বলেন।  

বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বইয়ের আমেজ ছড়িয়ে দিতে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উৎসবমূখর পরিবেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের এ ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ রবিবার কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হলো। এ উপলক্ষ্যে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। সকাল ১০টার আগেই নতুন বই পেতে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ লেখা লাল ক্যাপ পরিহিত শিক্ষাথর্ীরা বিশাল প্যান্ডেলে এসে অবস্থান নেন। তাদের কোলাহল আর উদ্দীপনা অনুষ্ঠানস্থলে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। বণার্ঢ্য এ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষাথর্ীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে এসে তিনি বেলুন উড়িয়ে ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০২৩’ এর উৎসবের উদ্বোধন করেন। 

শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে আজকে বই উৎসব হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ একটি অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যেখানে বছরের প্রথম দিন একটি বই উৎসব হয়। যেখানে আমাদের কোটি কোটি শিক্ষার্থী এই বই উৎসবে অংশগ্রহন করে। আজ প্রাথমিক মাধ্যমিক সকল শিক্ষার্থী বই পেয়েছে। কয়েকটি বই বাকি আছে। তবে আমরা অধিকাংশ বই পেয়ে গেছি। যেটুকু বাকি আছে, সেগুলো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাবো। আমরা ধাপে ধাপে সেগুলো সবাইকে দিয়ে দিব। তিনি বলেন, আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমরা ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করার মতো অবস্থায় যেতে পারবো কি-না। কারণ একটা সময় মাঝখানে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল, কাগজের বিরাট সংকট ছিল। তারপরও সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা বই উৎসবটি করতে পেরেছি- এজন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

মন্ত্রী আরো বলেন, বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনামূল্য যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি তার সংখ্যা হলো ৪৩৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৮০ হাজার ২১১ কপি। এটি পৃথিবীর যেকোনো জায়গার জন্য অচিন্তনীয় ব্যাপার। এরমধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার রোধ করতে পেরেছি। কারণ, সন্তানদের বই কেনার বোঝা এখন আর বাবা-মা’র ওপর থাকছে না। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পায়। নূতন বইয়ের ঘামের কথা সবাই বলেছেন। আমাদের সময় তিন, চার, ছয় মাসও অপেক্ষা করেছি নতুন বইয়ের জন্য। অনেক সময় পুরনো বই পড়ে আমাদের পার করতে হয়েছে। শিক্ষাথর্ী ভাই-বোনেরা তোমরা যেমন করে উৎসবের মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম দিন নূতন বই নিয়ে যাচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছিল যদি আজকে তোমাদের মতো হতে পারতাম। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কণ্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল এ পরিনত হয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীর যে বইগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো নূতন শিক্ষাক্রমের। নূতন শিক্ষাক্রম আমরা এমনভাবে তৈরি করেছি সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ সকলের পরামর্শ নিয়ে এমন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়, শিক্ষায় পরীক্ষাভীতিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সারাদিন ভীত থাকবে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হবে। প্রযুক্তিবান্ধব শুধু নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে ও উদ্ভাবনে দক্ষ হবে। তারা মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবে। আমাদের যে মূল্যবোধ আছে সে মূল্যবোধ নিয়ে বড় হতে হবে। আমরা দক্ষ, যোগ্য, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবো। আমরা সত্যিকারের সোনার মানুষ হবো যেন সোনার বাংলা গড়তে পারি। আজকে যদি তোমরা সচেতন হও তাহলে নিশ্চয় তোমাদের ভবিষ্যত আরো অনেক অনেক বেশি সুন্দর হবে। 

মন্ত্রী আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের এখন মূল দায়িত্ব হবে দায়িত্ব শুধু পড়িয়ে যাওয়া নয়, শিক্ষাথর্ীদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় নামা – তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে দঁাড়ানো, তাদের তত্ত্বাবধান করা যেন শিক্ষাথর্ীরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় হয়। আমরা বারবার সন্তাদের না না বলতে বলতে তদের মনের মধ্যে নেতিবাচকতা ঢুকিয়ে দিয়েছি। আসুন আমরা সন্তানদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গড়ে উঠবার সুযোগ করে দেই। যেন তারা অনেক অনেক ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারে। তাদের শুধু পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের দিকে নজর দিবেন তা নয় তারা যেন সুস্থ্য ভাবে গড়ে ওঠে এবং ভাল মানুষ হয়, আদর্শ মানুষ হয়- সে বিষয়টির দিকেও শিক্ষকদের নজর দিতে হবে। অভিভাবক বৃন্দের কাছেও একই নিবেদন, আপনাদের কাছে অনুরোধ- আপনারা সন্তানদের দেখবেন যেন তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা যেন শাররিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকে। তাদের কথা একটু গুরুত্ব দিয়ে আমাদের দেখতে হবে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য আছে আর্ত্নমর্যাদা আছে- তা নিয়ে তারা বড় হবে, তাদের যে সুপ্ত প্রতিভা আছে সেগুলো বিকশিত করতে পারবে। আমাদেরকে সমাজের যত ব্যাধি আছে – নারী নির্যাতন, বাল্য বিয়ে , মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এসব কিছুকে দূর করতে হবে এবং সেখানে শিক্ষাথর্ী, শিক্ষক অভিভাবক, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ আমরা সকলে এক যোগে কাজ করলে আমাদের এই দেশটা সত্যিই সোনার বাংলা হবে ইনশাল্লাহ। 

মন্ত্রী বলেন, কাপাসিয়া উপজেলায় অনেকগুলো অর্জন রয়েছে। শতভাগ সফল স্কাউটিং উপজেলা। সারা বিশ্ব তার মধ্যে মাতৃ মৃত্যুরোধে বাংলাদেশে সাফল্য দেখিয়েছে তা নয়, সারা বিশ্ব যে মডেল নিয়ে কথা বলছে মাতৃ মৃত্যুরোধে সেটিতে সবার আগে কাপাসিয়া মডেলের কথা বলছে। আমরা গর্বিত, সঠিক নেতৃত্ব থাকলে যে সব জায়গায় যেমন স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে যে সাফল্য অর্জন সম্ভব আজকে এটি তারা প্রমাণ করে। আমরা আজকে সারাদেষ একজন রাষ্ট্র নায়কের নেতৃত্বে এই দেশকে বিশ্বসভায় মাথা তুলে দঁাডিয়েছে। শিক্ষায়, স্বাস্থ্য, ডোযোগ ব্যবস্থায়, কৃষিতে, খাদ্য, শিল্প উৎপাদনে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে পাঠ্য পুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ইব্রাহিম ভূঁইয়া স্বপন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ ওমর ফারুক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিছুর রহমান, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম গোলাম মোরশেদ খান প্রমূখ। এনসিটিবি’র (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ফরহাদুল ইসলামস্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে নতুন বই হাতে পেয়ে কাপাসিয়া পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইলমা ইসলাম সিমি তার অনুভুতি ব্যাক্ত করে বক্তব্য দেন। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থীর হাতে ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৩৪টি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮৯টি পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করে। এর মধ্যে বই উৎসবের প্রথম দিনে কাপাসিয়া উপজেলার ৩১টি স্কুল এবং ৬টি মাদ্রাসার ৬ হাজার শিক্ষাথর্ীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়।