স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক এবং জীবনমানে প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে — প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর \ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজকের শিশু-কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। আজকের শিশুরাই আগামীদিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে পরিনত হবে। স্কাউটদের মধ্যেই সুপ্ত আছে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। তাই আমি চাই প্রতিটি শিশুকে দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। স্কাউটদের নৈতিক ও জীবনমুখী শিক্ষা দিয়ে, সেবা দেওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন করে দেশপ্রেমিক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজকের যে শিশুরা বড় হবে, তার উদার মন নিয়ে বড় হবে এবং দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হবে। তারা দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠণ করার জন্য কাজ করবে।

বুধবার গাজীপুরে কালিয়াকৈরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তরুণদের মাঝে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল গুণাবলী বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে। পরোপকারি হিসেবে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ও প্রশংসনীয় ভ্থমিকা রেখে যাচ্ছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিড-১৯ কালীন স্কাউট সদস্যদের সেই আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। কাজেই আমি চাই আমাদের দেশে এই স্কাউট আন্দোলন আরো ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদেরকে কেউ আর ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না, বরং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট গড়ে তোলা হবে। আমার লক্ষ্যটা থাকবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন প্রতিটা শিক্ষার্থী এই স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্কাউটের সঙ্গে জড়িতদের। আমি আশা করি ভব্যিষতে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি আমাদের বাংলাদেশেই একদিন আমরা অনুষ্ঠিত করতে পারবো। সেইভাবে আমাদের উদ্যোগ এখন থেকে নিতে হবে। যেখানে সারা বিশ্বের লোকেরা আসবে, কাজ করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্কাউট সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর-যুবাদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু’টি করে স্কাউট দল বা রোভার স্কাউট গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি গার্লস স্কাউট যেন গঠন করা হয় সে বিষয়ে সকলকে কাজ করতে হবে। এছাড়াও মাদ্রাসাগুলোতে যেন রোভার স্কাউট দল গঠন করা হয় সে বিষয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশ স্কাউটি শতাব্দি ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি টাকা ২৩ লাখ টাকা ব্যায়ে সিলেট অঞ্চলে মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষন কেন্দ্র লালমাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে কাব স্কাউট সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি গাজীপুরের মৌচাকের স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আওতায় বনভূমি বিনাশ না করার শর্তে আরো ৯৫ একর ভূমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশটা আরো চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এগুলো স্থান পাবে না। সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে।চট্টগ্রামের রোভার স্কাউটদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২১৭ জেলা ও উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে দেবো। আমাদের লক্ষ্য দেশে স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর যুবদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করে বলেন, ছোট্ট সোনামনিরা আমি যখনই তোমাদের মাঝে আসি তখনই আমার ১০ বছরের ছোট ভাই রাসেলকে খঁুজে পাই। ঘাতকের নির্মম বুলেটে আমার ছোট্ট শিশু ভাই মাত্র ১০ বছর বয়সে শহীদ হয়েছিল। ঘাতকরা সেদিন আমার বাবা, মা, ভাই ও ভাতৃবধূদের সঙ্গে তাকেও রেহাই দেয় নি। আমি চাই আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের জীবন নিরাপদ হোক, সুন্দর হোক, অর্থবহ হোক। কারণ, আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। আমাদের সকল শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক আমি তা-ই চাই।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কাব স্কাউটসদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ করেন এবং তাঁর নিজের স্বাক্ষরিত সনদপত্র ১২ জনের হাতে তুলে দেন। তিনি আঞ্চলিক ও জাতীয় স্কাউটদের জাম্বুরী চিহ্নিত করে একটি স্মারক ডাক টিকিটও অবমুক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং জাম্বুরী আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হারুনুর রশীদ, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিসুর রহমান আনিস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদসহ প্রশাসন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নয়দিন ব্যাপী এ জাম্বুরীতে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও কানাডা থেকে ৮ হাজার স্কাউট, ১ হাজার ইউনিট নেতা এবং আন্তর্জাতিক পরিষেবা দলের সদস্যসহ মোট ১১ হাজার জন অংশগ্রহণ করে।