১০টাকায় চাল দেয়ার কথা বলে আ’লীগ এখন গ্যাসও খেয়ে ফেলেছে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
0

ব্রাক্ষনবাড়ীয়া-২ আসনে উকিল আবদুস সাত্তারকে জেতাতে সরকার গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে নিরব পথযাত্রা কর্মসূচির শুরু প্রাক্কালে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আপনাদের হাতে ভোট নিরাপদ কেমন করে? এই যে, ব্রাক্ষনবাড়ীয়ায়(ব্রাক্ষনবাড়ীয়া-২) আমাদের এমপি সাত্তার সাহেব(উকিল আবদুস সাত্তার) ছিলেন, তিনি পদত্যাগ করলেন। তারপরে উনি নিজে ভুল করে যখন আবার নির্বাচন করতে গেলেন তাকে আমরা বহিস্কার করে দিয়েছি।”

‘‘ এখন তাকে জয়লাভ করানোর জন্য সমস্ত নীতিমালা নৈতিকতা বাদ দিয়ে আপনারা(ক্ষমতাসীন দল) আপনাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করেছেন, যে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো স্বতন্ত্র প্রার্থী, যার কোন দল নাই- হাসিব তাকে দুই ধরে পাওয়া যাচ্ছে না, গুম। অর্থাত সাত্তারকে জেতানোর জন্য এখন সমস্ত নির্বাচন ব্যবস্থাটে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। এই তো হচ্ছে আপনাদের(সরকার) নির্বাচনের ব্যবস্থা। এখন আপনারা মাগুরার কথা বলেন। ‘মাগুরার দাদা’ বানিয়েছেন আপনারা ব্রাক্ষবাড়ীয়াকে।”

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা কি গত দুইটা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন? ভোট কেউ দেয়নি। ওরা নিজেরা নিজেরা ঘোষণা করে দিয়েছে। একটা ভোটে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে, আরেকটা ভোট করেছে আগের রাত্রে …।”

‘‘ এই ভোট জনগন আর মানবে না। আপনাদের(সরকার) হাতে ভোট নিরাপদ নয়। সুতরাং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।”

‘নিরব’ পথযাত্রার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমাদের এই পথযাত্রা গণতন্ত্রের জয়যাত্রা, আমাদের এই পথযাত্রা সভ্যতার জয়যাত্রা, আমাদের এই পথযাত্রা মানুষের অধিকার আদায় করবার জয়যাত্রা, আমাদের এই পথযাত্রা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার জয়যাত্রা, আমাদের এই পথযাত্রা আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনার জয়যাত্রা।”

‘‘ আওয়ামী লীগ এখন প্রবাদ গুনছেন। তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। তারা প্রতিদিন জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।”

পথযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহাসচিব ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বক্তব্য রাখেন।

সোমবার দুপুর আড়াইটায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে যাত্রাবাড়ীর আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের কাছে গোল চত্বর থেকে জুরাইনের রেলগেইট পর্যন্ত আড়াই কিলো মিটার পথে দেড় ঘন্টার ‘নিরব পথযাত্রা’ করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

দুপুর আড়াইটায় পথযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে।

এই পথযাত্রায় বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, হাবিবুর রহমান হাবিব, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, মোহাম্মদ মোহন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবিন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, ইসহাক সরকার, গোলাম মওলা শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএস জিলানি, রাজিব আহসান, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের লিয়াকত আলী , ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ নেতারা অংশ নেন।

এই পথযাত্রায় মহানগর দক্ষিন বিএনপি, মহিলা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়। তাদের হাতে ছিলো ছোট ছোট জাতীয় পতাকা, সাদা পতাকা এবং ১০ দফা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

চারদিনের পথযাত্রার কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি হয়।

মঙ্গলবার হবে গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত এবং বুধবার হবে মুগদার থেকে মালিবাগ পর্যন্ত।

‘নিরব পথযাত্রাকে দূবর্লতা ভাববেন না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা ঢাকা শহরে পথযাত্রা করছি। আমরা প্রতিটি কর্মসূচি আমাদের শান্তিপূর্ণ। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেউ দূবর্লতা মনে করবেন না। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।”

‘‘ তাই পরিস্কার করে বলতে চাই, এখন এই পথযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগন সম্পৃক্ত হচ্ছে, ঢাকার মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে ।এই যাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করব। এই পথযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করেছি, নতুন অধ্যায় শুরু করেছি। আমাদের এই পথযাত্রা আমাদের মুক্তির লড়াই, এটা আমাদের জনগনের অধিকারকে পুনরুদ্ধার করবার লড়াই।”

‘ওরা গ্যাসও খেয়ে ফেলেছে’

বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে চালের দাম কত হয়েছে? জনগনের সামনে দাঁড়িয়ে তারা ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিলো না। আজকে চাল কত দামে খাচ্ছেন আপনারা? ডালের দাম কত? লবনের দাম কত? আটার দাম কত ? সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।”

‘‘ অন্যদিকে এই যে কিছুক্ষন আগে আবদুস সালাম সাহেব বললেন, পুরান ঢাকায় গ্যাস নাই। শুধু পুরান ঢাকা নয়, গোটা বাংলাদেশে এখন গ্যাস নাই। গ্যাসও খেয়ে ফেলেছে।”

‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। জনগনের পকেট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে আর সেই টাকা তারা লুট করে বিদেশে পাচার করছে।’ বলেন তিনি।

‘কারা পালায় জনগন জানে’

‘আওয়ামী লীগ পালায় না’- রাজশাহীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখানে দাদা(গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছেন ভালো বলতে পারবেন। এক এগারোতে গ্রেফতার হওয়ার পরে কারা কারা পালিয়েছেন দেশে ছেড়ে-এটা সবাই জানে। তাই না। কিন্তু পালায়নি একজন। তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ওই সময়ে পরিস্কার করে বলেছিলেন যে, বিদেশে আমার কোনো জায়গা নাই। এদেশ আমার, এই মাটি আমার।আমার জন্ম এখানে, মরলে আমি এখানেই মরব।”

‘‘ তাই বলব, এসব কথা বলে লাভ নাই। এদেশের মানুষ সব জানে- কে কোথায় পালায়, কবে পালায়, কেমন করে পালায় সবাই জানে। আমরা এজন্য কথাটা বলছি, এখনো সময় আছে আপনারা ১৪/১৫ বছর ধরে এদেশের মানুষের ওপরে যে অত্যাচার করেছেন, সেই অত্যাচারে এদেশের মানুষ এখন এমন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যে, আপনারা আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাবেন না।”

তিনি বলেন, ‘‘ ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, পালাবেন কোন দিকে? আমি বলতে চাই, নির্মলেন্দু গুনে একটা কবিতা আছে। কবিতাটা বলতে চাই- ‘কোন দিকে পালাবে তুমি, কোনো দিকে পালাবার পথ নাই।উত্তরে উত্তর পর্বতমালা, দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর। কোন দিকে পালাবে তুমি’।

তাই এখনো বলছি, সময় আছে আমাদের যে দাবি ১০ দফা দাবি তা মানে মানে মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন,সংসদ বাতিল করুন এবং তত্ত্বাধায়ক সরকারের বিধান আবার চালু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে এখানে নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটা নির্বাচন যে নির্বাচনে জনগন অংশগ্রহন করতে পারবে, ভোট দিতে পারবে।”

কারাগারে বন্দি দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীসহ সকল গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

যাত্রাবাড়ীর ব্যস্ততম এই সড়কে পথযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

পথযাত্রার এই কর্মসূচি উপলক্ষে যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।