অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি অনতিবিলম্বে গঠন করা দরকার : আইপিডি

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
0

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের বর্ষপূর্তির সময়ই গুলশান এলাকার বহুতল আবাসিক ভবনের ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের নগর এলাকায় অগ্নিদূর্যোগে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শংকার বিপরীতে আমাদের ভবনসমূহের অভ্যন্তরীণ অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার সীমাহীন দূর্বলতা ও নগর সংস্থাসমুহের সার্বিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, নজরদারি ও আইনের প্রয়োগের দূর্বলতার বিষয়টি আবার ও সামনে নিয়ে এসেছে বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

তুরস্ক-সিরিয়ার সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্প দূর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির কারণে আমাদের নগরসমূহের ভূমিকম্পসহ সার্বিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির ব্যাপক ঘাটতির বিষয়গুলো সাম্প্রতিক সময়ে জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ড সহ অতীতের নগর দুর্যোগের ফলে গঠিত তদন্ত কমিটির সমূহের সুপারিশ সমূহ আমরা কেন বাস্তবায়ন করতে পারিনি, সেই বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্ববহ। নগরে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়ার নীতিমালা থাকলেও অদৃশ্য কারণে সেই প্রস্তাবনাসমূহের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না বলে মনে করে আইপিডি।।

তুরস্কের ভূমিকম্প দুর্যোগের পরে দেখা যাচ্ছে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ভংগ করে যে সকল ডেভেলপার, আবাসন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে জরিমানা দিয়ে সেগুলোকে বৈধ করে নিয়েছিলেন সে সকল ভবন গুলোই দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বহুতল ভবনের নির্মাণের ক্ষেত্রেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন সমূহ কে অবজ্ঞা করে বহুতল ভবনের নির্মাণ ও ব্যবহার চলছে। এ সকল ভবনসমূহ অগ্নিসহ বিভিন্ন দূর্যোগে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশের নগর এলাকায় ব্যবসায়িক লাভকে বাড়ানোর অসদুদ্দেশ্য বিকল্প সিড়ি ও নির্গমন পথ, ফায়ার লিফট, ফায়ার ডোর, ফায়ার ডিটেক্টর, ফায়ার স্প্রিংক্লার, ফায়ার সাপ্রেশন সিস্টেম প্রভৃতি অগ্নি নির্বাপণ সিস্টেমের যথাযথ ব্যবস্থা না করেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে কোন ধরনের অকুপেন্সি সনদ ছাড়াই এই ভবনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি রাজধানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকান্ডের পর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সরেজমিন তদন্তের পরে বহুতল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য ভবন মালিক ও ডেভেলপারদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করা হয়েছিল কিনা সেটা ও নিশ্চিত করা যায়নি।

ঢাকাসহ সারাদেশের নগর এলাকাতেই অত্যন্ত সরু রাস্তার পাশেই ১০-১২ তলা বা ততোধিক উচ্চতার বহুতল ভবন নির্মাণ মানদণ্ড বা অগ্নি নিরাপত্তা ব্যতিরেকেই গড়ে উঠছে। এমনকি সম্প্রতি ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়ন এর সময়েও ছোট রাস্তার পাশে, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশে অক্ষম, সেসব রাস্তায় বহুতল ভবনের নির্মাণ অনুমোদনের দাবীতে অনেক গোষ্ঠী ও মহলকে সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করতে দেখা গিয়েছে। এমনকি ফায়ার সংক্রান্ত দেশের বিদ্যমান আইনে সাততলা ভবনকে বহুতল ভবন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা,২০০৮ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ২০২০ এ ১০ তলা ভবনকে বহুতল হিসেবে বিবেচনা করবার ফলে সাততলার উপর অনেক ভবনেই অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

উপরোক্ত বাস্তবতায় ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) বিশ্বাস করে, মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে বহুতল ভবন সহ নগরে অগ্নি ও দূর্যোগজনিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডেভেলপার ও ভবন মালিকদের দায়বদ্ধতায় নিয়ে আসবার পাশাপাশি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সকল নগর সংস্থাসমুহকে জবাবদিহিতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি বহুতল ভবনের সংজ্ঞায়নে অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ইমারত ও নির্মাণ সংক্রান্ত বিধিমালাসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা দরকার।

আইপিডি মনে করে, পুরান ঢাকা হতে রাসায়নিক গুদামসমূহ সরানোর জন্য কেমিক্যাল পল্লি স্থাপনের প্রকল্পের আশু বাস্তবায়ন প্রয়োজন ; অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সরকারী কিংবা বেসরকারি প্রকল্পের উন্নয়নকৃত ভূমিতে অতি বিপদজনক রাসায়নিক গুদামসমূহ সরানোর ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। একইসাথে সারা দেশের ভবন নির্মানে যথাযথ মানদণ্ড ও অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি অনতিবিলম্বে গঠন করে তার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)