আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে–আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১
0

আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের দিকে যখন দেশ যায়, আন্দোলন যখন সফলতা পায়। সুতরাং সরকার পতনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য সীমাহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জেটেব এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

আমির খসরু বলেন, ‘এই মানববন্ধন থেকে সরকার পতনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। মানববন্ধনের পাশে নারীরা দাঁড়িয়ে আমাদের বক্তব্য শুনছেন। আন্দোলনের দিকে যখন দেশ যায়, সরকার পতনের সময় ঘনিয়ে আসে এটা কিন্তু একটা লক্ষণ। মানববন্ধনে আমি আজকে সেই লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। অত্যন্ত শুভ লক্ষণ সেটা আজকে আমি দেখতে পাচ্ছি।’

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের বাড়ানোর সাথে একটি স্বৈরাচারী সরকার সরাসরি জড়িত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ যেখানে একটি দল এবং সরকার একাকার হয়ে যায় সেখানে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কারণ তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারাই লুটপাট করছে। তারাই জনগণের ভোট কেড়ে নিচ্ছে । তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তারা একই ব্যক্তি। আজকে যাদের দায়িত্ব দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা তারাই লুটপাট করছে। তারা সরাসরি লুটপাটের সাথে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ব্যয়বহুল ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। দুর্নীতিতে যেমন শীর্ষে রয়েছে তেমনি শীর্ষে রয়েছে পরিবেশ দূষণেও। সবকিছুর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এই যে পকেট লুটপাট করছে এটা বন্ধ হবার নয়। আজকে আসার সময় আমি দেখলাম একটা বাস নাই লোকজনের কষ্টের শেষ নেই। ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই টাকা বাংলাদেশের মানুষের পকেট থেকে যাবে এবং এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাটের ব্যবস্থা করেছে তারা। কোন টাকা দেশে থাকছে না সব টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।’

আমির খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লুটেরারা ৫ লাখ ১০ লাখ ২০ লাখ টাকা চুরি করছে না। তারা চুরি করছে শত শত কোটি টাকা। হাজারো কোটি টাকা। লক্ষ কোটি টাকা চুরি করছে। এত টাকা তো বাংলাদেশে রাখা সম্ভব না। এই টাকা তো বিদেশে পাচার করতেই হবে। সুতরাং এখানে যে টাকা রাখবে না খুবই স্বাভাবিক। এত বড় অঙ্কের টাকা বাংলাদেশের রাখা কোনদিনও সম্ভব হবে না। এটা বাইরে যেতেই হবে এবং সারা বিশ্বের যত জায়গায় দেখবেন সব জায়গায় এদের টাকা আছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা। এমনকি সাধারণ আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করছে। বড় নেতারা তো আছেই।’

তিনি বলেন, এটার একটাই কারণ। যে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সরকার নেই। সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই জবাবদিহিতা নেই । তারা বারবার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। সেই ২০০৮ এ করেছে ১৪ তে করেছে ১৮ তে করেছে এবং চুরি করতে করতে একদম পাকা চোরের পরিণত হয়েছে চুরিতে পাকা হয়ে গেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ডাক দিয়েছিল সেই ডাকে পরিষ্কারভাবে আমরা বলেছি এই ভোট চোর ও দুর্নীতিবাজ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটাধিকার জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রার মান কেড়ে নিয়েছে। তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। কেউ বাকি নেই সবাইকে আন্দোলনে আসতে হবে। আন্দোলন বিএনপির একার দায়িত্ব না। কত সাংবাদিক দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। বিশ্বের যেখানে যাবেন সেখানে আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা পলাতক অবস্থান করছেন। তারা বাধ্য হয়েছে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। আর কত পালাবেন। আর পালাবেন না। এখন ঘুরে দাঁড়ান।’

খসরু আরও বলেন, এই ডিজেল তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুধু সাধারণ মানুষ বা যানবাহন মালিকরা নয়, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে সেটা আবার জনগণকে দিতে হবে। এতে সরকারের কোন দায় নেই। এরা অব্যাহতভাবে করতে থাকবে আর আমরা বলতে থাকবো। এর থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা।

এসময় তিনি আরও বলেন, বিএনপির ডাকে অপেক্ষা করবেন না। বিএনপি অবশ্যই আন্দোলনের ডাক দেবে আন্দোলনে যাবে। জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব আপনাদের মুক্ত করা। সেই দায়িত্বগুলো পালন করব। কিন্তু সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ বক্তব্য দেন।