আবারো লগি-বৈঠার ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের হুঙ্কার আওয়ামীদের

আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০২৩
0

অলিউল্লাহ নোমান

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আগামী শনিবার ২৮ অক্টোবরকে সামনে রেখে আবারো সেই সন্ত্রাসী হুঙ্কার আওয়ামী ও শেখ পরিবারের সদস্যদের মুখে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের আগে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন সন্ত্রাসের জন্য প্রস্তত থাকতে। চার দলীয় জোট সরকারের শেষ কার্যদিবস ছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। ওই দিনটিকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী বাম দল গুলো সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিয়েছিল। শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী লাঠিসোটা নিয়ে রাজপথে নেমেছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

পুলিশ ও জনতার সামনেই পল্টন মোড়ে ৬জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী সন্ত্রাস সেদিন ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। একদিনেই সারা দেশে ১৪ মানুষ খুন হয়েছিলেন লগি-বৈঠার সন্ত্রাসে। একই সন্ত্রাসের বয়ান তারা আবারো দিচ্ছেন। তাদের ভাষায়, গণতন্ত্রের ফ্যাসিবাদী স্টাইল প্রতিষ্ঠার দিন ছিল ২৮ অক্টোবর। এই ২৮ অক্টোবরের সন্ত্রাসের সিঁড়ি দিয়েই পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা।

আগামী শনিবার বিএনপিসহ বিরোধী দল গুলো ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। এদিনও ২৮ অক্টোবর ২০২৩। আর সেই দিনটি ছিল ২৮ অক্টোবর ২০০৬। ব্যবধান ১৭ বছর। এই ১৭ বছর ধরে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের ফ্যাসিবাদী স্টাইল দেখছে। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে শরীক রাজনৈতিক দল গুলোর মহাসমাবেশ নিয়েও একই হুঙ্কার দিচ্ছেন আওয়ামীরা। সেদিন তারা সন্ত্রাস করেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে। আর তারা সন্ত্রাসের হুঙ্কার দিচ্ছে “গণতন্ত্র” রক্ষার নামে। তাদের ভাষায় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আগামী শনিবার ২৮ অক্টোবর আবারো লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে নামতে হবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের।

শেখ ফজলে নূর তাপস দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রস্তুতি সভায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতই লাঠিসোটা নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। ২৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তরের এক প্রস্তুতি সভায় তিনি এমন ঘোষণা দেন। কিভাবে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের মহাসমাবেশ মোকাবিলা করবে তা নিয়ে ছিল এই প্রস্ততি সভা। এই প্রস্তুতি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘেরাও করার হুঙ্কার দিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুর ইসলাম।

এদিকে শুধু সন্ত্রাসী হুঙ্কার নয়। বিরোধী দলের সমাবেশ মোকাবিলা করতে মাঠে নামানো হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে। ঢাকায় বাড়ি বাড়ি তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলোর সদস্যরা। ঢাকার বাসাবাড়ি ও ব্যাচেলর ম্যাস গুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযান চালানো হচ্ছে হোটেল গুলোতে। চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। র‌্যাব চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করবে এমান ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখতেই একটি প্যানিক তৈরি করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বিএনপি’র কর্মী থেকে শুরু করে মাঝারি সারির নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের। জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ শারিরীকভাবে গুরুতর অসুস্থ। তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে। হাপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরের দিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশের এক কর্তা ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীকে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। যদিও সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া পুলিশের কাজের আওতায় পড়ে না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফল করতে নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে পুলিশের কর্তব্য। সভা-সমাবেশ করার প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। এই অধিকারের সুরক্ষা দেওয়াই হচ্ছে পুলিশ-র‌্যাবের দায়িত্ব। এই দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছে শাপলা চত্বরে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করবে দলটি।

এদিকে বিএনপিও নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের বিষয়ে অনঢ়। দলটি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যদিও এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সমাবেশের আগের দিন নয়াপল্টনে অভিযান চালিয়ে এলাকাটি দখলে নিয়েছিল পুলিশ। তবে এবার পুরিস্থিতি ভিন্ন। শেখ হাসিনাকে যারা ক্ষমতায় বসিয়ে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে এতদিন সহযোগীতা করেছিল সেই আমেরিকা এবার পিছুটান দিয়েছে। শেখ হসিনা পুত্রের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আমেরিকা কয়েক বিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিং মামলা শুরু করেছে। গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সমন দেওয়া য়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়কে। এনিয়ে অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। পুত্রকে রক্ষায় সমঝোতার সর্বশেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে গত মাসের আমেরিকা সফরের সময়।

এদিকে আমেরিকা থেকে ফিরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরণকামড় দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মারমুখি এই আচরণ সরকারের দুর্বল অবস্থারই বহি:প্রকাশ হিসাবে মনে করা হচ্ছে। নড়বড়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরনকামড় দিয়েছে, চলমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও আওয়ামী হুঙ্কার থেকেই স্পষ্ট। এই মরণকামড়ে বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে পারলেই বিরোধী জোট তথা গণতন্ত্রের বিজয় আসবে। আর এই কামড়ে বিষ ছড়িয়ে দিয়ে পার পেয়ে গেলে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস।

লেখক: যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক