`আমাদের বেতন দেন নাহলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেন’

আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২৩
0


মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর \ এবার মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গাজীপুরের এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। তারা বকেয়া বেতন ভাতা, ঈদ বোনাস, অর্জিত ছুটি ও মাতৃত্বকালীন সুবিধার টাকা পরিশোধের এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবীতে সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেইটের সামনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। ওই দাবীতে তারা প্রায় ৬৩ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, আমাদের বেতন পরিশোধ করেন না হলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেন।

পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গেইটের সামনে লক্ষীপুরা এলাকার স্টাইল ক্র্যাফট লিঃ এবং ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা, ঈদুল আযহার আংশিক বোনাস, ৫ বছরের অর্জিত ছুটির টাকা ও ৫ বছর যাবত জমা রাখা নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধার টাকা সহ বিভিন্ন ভাতাদি পাওনা রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করেই কারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়ে দিন তারিখ নির্ধারণ করলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করে নি। এ নিয়ে শ্রমিকরা ইতোপূর্বে একাধিকবার বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। সর্বশেষ রবিবার শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু এদিন শ্রমিকরা দিনভর কারখানার সামনে অবস্থান করলেও পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকেলে কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়ক দীর্ঘসময় অবরোধ করে রাখে।

সোমবারেও সকাল হতে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি জন্য কারখানার সামনে অবস্থান করতে থাকে। কিন্তু পাওনাদি ও মালিক পক্ষের কাউকে না পেয়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে দুপুর একটার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঘেরাও করতে যায়। এসময় জেলা প্রশাসকের কার্যালের রাজবাড়ির প্রধান গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে শ্রমিকরা গেইটের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেবিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিকরা গাজীপুর জেলা পোশাসকের প্রতিনিধির সাথে কথা বলে কোন প্রতিকার পায়নি। এসময় তাদের সড়ক থেকে চলে যেতে বললে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকে, আমাদের বেতন ভাতার ব্যাস্থা করে দেন। নাহলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেন। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অবস্থান নেয় এতে শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে পরে বিক্ষোভ করতে থাকে।প্রায় সোয়া একঘন্টা সেখানে অবস্থানের পর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুনঃরায় কারখানার সামনে ফিরে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

আন্দোলনরত শফিকুল ইসলাম ও হারুন সরকারসহ কয়েক শ্রমিক বলেন, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করেই হঠাৎ কারখানা বন্ধ রেখেছে। এতে শ্রমিকরা অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা প্রায় ৬৬ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। অন্য কোথাও কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন মরা ছাড়া আর কোন পথ নেই। তাই শ্রমিকরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আন্দোলনে নেমেছে।

জিএমপি’র সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, এ কারখানায় তিন সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করেন। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই বকেয়া বেতন ভাতা ও ঈদবোনাস পরিশোধের দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।