আ’লীগের নির্দেশের বাইরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়

আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২২
0

দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার নির্দেশের বাইরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করলে মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি আ কথা বলতে চাই না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এখানে বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে এবং যেটা আমরা আগেই বলেছিলাম যে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ যেটা করেছে গত তিনটা টার্মে –এটাকে একটা নির্বাচনী গণতন্ত্র বলে তারা নাম দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং গণতন্ত্রের একটা মু্খোশ পড়ে রাখে, আরেক দিকে নির্বাচন মুখোশ দেখিয়ে ক্ষমতাটাকে ধরে রাখে। যেটা অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাইব্রিড রেজিম বলেছেন। এই হাইব্রিড রেজিমের ফলে জনগন তার ভোটাধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে।

‘‘ তার অর্থই হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন- নির্বাচন কমিশনের কোনো অধিকারই নেই, সম্ভব না, তার এ্রখতিয়ারই নেই যে এখানে তারা সরকারের যে নির্দেশ সেছাড়া তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।”

মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আ্উয়াল বলেন, ‘‘ ২০১৮ সালেল মতো নয়, আইন অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংসদ নির্বাচন হবে সময়মতো। বর্তমান কমিশন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এসেছে, ডিগবাজী নয়।”

‘‘ নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করতে চায় কমিশন।”

সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘উদপাদন না করেও রেন্টাল কেন্দ্রগুলো অর্থ গুনছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯ টি বিদ্যুত কেন্দ্র ২/৩ বছর বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেখে তা এখনো চলমান আছে। বেশি কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র উতপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুত ছাড়াই তিন বছর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।”

‘‘ সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতি পরায়ন ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।”

‘বিদ্যুত খাতে রাষ্ট্রীয় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ বিদেশী ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা জনগনের পকেট কেটে করা হবে।”

‘‘ সরকার লোডশেডিং শূণ্য কোঠায় নিয়ে আসায় উতসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে। এখন শহরে ২/৩ ঘন্টা আর গ্রামাঞ্চেল ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই সরকারের নীতি একটাই- তা হচ্ছে জনগনের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা। যারা এই ধরনে নীতি অনুসরণ করে দেশের সম্পদ লুট করেছে সেই রকম দেশের নজির আছে। অতি সম্প্রতি শ্রীলংকাতে সেইরকম ঘটনা ঘটেছে। জনগন রাস্তায় বেরিয়ে এসে তাদের উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারকে তারা সরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। একইভাবে নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলাতে একই অবস্থা আমরা দেখেছি।”

‘‘ সরকারের যখন উদ্দেশ্যই হয় জনগনের সম্পদ লুট করে তখন কিন্তু সেই অর্থনীতি টেকসই হয় না। সেকারণে আয়-বৈষ্যম বাড়তে থাকে। আজকে আমাদের দেশে এক শ্রেনীর মানুষ অনেক বড় লোক হয়ে গেছে তাদের সম্পদ পাহাড়ের মতো হয়েছে, আরেক শ্রেনীর মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে- এই শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা বেশি। ফলে অতি দ্রুত এই অর্থনীতি ভেঙে পড়ার সম্ভা্বনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।”

বিদ্যুতের এই পরিস্থিতির জন্য ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার কথা আবারো ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।

‘বিএসএফের ডিজির বক্তব্যেরে প্রতিবাদ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সম্প্রতি ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী- এই মন্তব্যে বাংলাদেশ বর্ডার গাড(বিজেবি) মহাপরিচালক নিরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করা হয়।”

‘‘ বিএনপি মনে করি, সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য আমরা দাবি করছি।”

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অপরাধের সাথে ছাত্রলীগ অভিযুক্তের ঘটনায় ক্ষোভ করে তিনি বলেন, ‘‘ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক, অসামাজিক কার্য্কলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘট্যেছ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্য্কলাপের অভ্যয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।”

‘‘ আমরা অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় দেশে দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতি এবং দেশে দারিদ্র্যতার হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ এবং এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক ৪জন গণতন্ত্র কর্মীকে মৃত্যুদন্ড কার্য্কর করায় নিন্দা জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘‘ লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন ও অন্যান্য মহানগর আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই এবং সকল জেলা পর্যায়ে আগামী ৩১ জুলাই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত দলের স্থায়ী বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।”

‘‘ ঢাকায় ২৯ জুলাই মহানগর উত্তর এবং ৩০ জুলাই দক্ষিন মহানগর বিক্ষোভ করবে।”

সোমবার তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি বিসর্জন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সুযোগ প্রদানের ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ফলে বর্তমানে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।এসব বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি আইন তৈরি করে নজিরবিহী দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। এখন শহরে ২/৩ ঘন্টা এবং গ্রামঞ্চলে ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্পে ও কৃষিতে উতপাদন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।”

‘‘ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। জ্বালানি সরবারহ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুত উতপাদনের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন সমস্যাকে জটিলতর করেছে। দেশে গ্যাস উতপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি এবং নিজস্ব দলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিজেদের দুর্নীতি ও অনৈতিক সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। নিয়ে শুধুমাত্র লোভের কারণে আজকে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গিয়েছে সরকার।”