আ’লীগ সত্য ইতিহাস বদলাচ্ছে সংবিধানের মাধ্যমে আর বিকৃত করছে নীতিমালা করে — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ১২, ২০২২
0

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , আওয়ামীলীগ ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে আদালত আর সংবিধানের মাধ্যমে বদলে দেন আর তারপর সে বিকৃত ইতিহাস রক্ষার জন্য এখন এই ধরনের নিবর্তনমূলক নীতিমালার পেছনে আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিমাণ ইতিহাস বিকৃতি করেছে সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্যও তারা এই নীতিমালা ব্যবহার করবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে, দেশের মানুষ সেই ঘোষণা শুনেছে, বিদেশী পত্র-পত্রিকায় সে ঘোষনার কথা প্রকাশ হয়েছে, তার পরেও উনারা কোর্টর আদেশ আর সংবিধান সংশোধন করে স্বাধীনতার ঘোষকের নাম বদলে দিয়েছেন।

আজ গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচি এসব কথা বলেন।

মীর্জা ফখরুল ইসলাম সমপ্রতি সরকারের ২টি নীতিমালার খসড়ার বিস্তারিত পর্যালোচনা করে বলেন,

২০১৩ সালে আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে ৫৭ ধারা যোগ করে এবং ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং মিডিয়ার বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত করার পর এখন অবশিষ্ট সামান্য যে বাকস্বাধীনতা টুকু রয়েছে সেটুকু পুরোপুরি কেড়ে নেয়ার জন্য সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি নতুন নীতিমালা বা রেগুলেশন জারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ তারিখে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দেওয়া ও ইংরেজিতে লেখা খসড়া নীতিমালাকে ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস ২০২১’ হিসেবে উল্লেখ করে ৫ মার্চ ২০২২ তারিখের মধ্যে পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ তারিখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১ (খসড়া)’ শিরোনামে আরেকটি খসড়া নীতিমালা দিয়ে সংশোধন/মতামত চাওয়া হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখের মধ্যে।

নিবর্তনমূল এই দু’টি নীতিমালা কার্যকর করা হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে, পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশনকে অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দুর্বল করে ফেলবে। এর ফলে মানবাধিকারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংষ্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্টী আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বিটিআরসির খসড়া নীতিমালার প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ‘মধ্যস্থতাকারী’ (ইন্টারমিডিয়ারি) হিসেবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংজ্ঞায়িত করে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে তার দায়িত্ব বর্ণনা করে লেখা হয়েছে- তিনি/বা তারা এটা নিশ্চিত করবেন যেন সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ১৫টি বিষয় নিয়ে লেখা, ছবি, ভিডিও বা তথ্য প্রচার করা না হয়। এর মধ্যে রয়েছে-

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ঐক্য, অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা অথবা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয়;

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয়;
ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিকে আঘাত করে এমন বিষয়;
সরকারের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এমন বিষয়;
বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয়;কোনো ব্যক্তির প্রতি আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, হুমকি বা ভীতি-প্রদর্শক ও অপমানজনক বা মানহানিকর এমন বিষয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সমস্যা হচ্ছে- তারা রাষ্ট্র এবং সরকারকে এক করে দেখে। সেই কারণে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেও তারা সেটাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার বলে মনে করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর আওতায় মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানির মধ্যে ফেলে।
স্মরণ করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখার কারণে ২০১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। অতিসম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম সেই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর ছোট ভাইকে ২০০০ কোটি টাকা পাচারের দায়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।