আল্লাহ /রহমান যে নামেই ডাকো না কেন ,সব সুন্দর নামগুলো তাঁরই

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
0

মহান আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর অর্থের অতল গভীরতা পুরোপুরি উপলব্ধি করা কল্পনাতীত। তবুও এই অসীম জ্ঞান-সিন্ধুর বিন্দু বিন্দু জ্ঞানও আমাদের হৃদয়গুলোকে উজ্জ্বল এবং জীবনে বিপ্লব বয়ে আনার জন্য যথেষ্ট।

মহান আল্লাহকে জানার ও চেনার ইচ্ছা মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। প্রখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিসরা পবিত্র কুরআনের আয়াত ছাড়াও মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের বাণীর আলোকে এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা আরাফ-এর ১৮০ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘ আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।’ সুরা আসরা’র ১১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে নবী আপনি বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর বা সেরা নাম তাঁরই।

তাই আসুন আমরা সবাই মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা জানার মাধ্যমে মহান আল্লাহকে আরও ভালোভাবে চেনার, ডাকার এবং মান্য করার ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করি।

মহান আল্লাহর নামগুলো ত্রুটিহীন ও পুরোপুরি বাস্তব এবং পরিপূর্ণ অর্থবোধক। যেমন, মহান আল্লাহ হচ্ছেন আলিম বা সর্বজ্ঞানী তথা সব কিছুই জানেন। মহান আল্লাহ কখনও বিন্দুমাত্র অজ্ঞতা ধারণ করেননি এবং জ্ঞানের বিন্দু পরিমাণও তিনি ভুলবেন না। যে কোনো বিষয়ে জ্ঞানের খুঁটিনাটি, বিস্তারিত ও সামগ্রিক সবই জানেন মহান আল্লাহ। সুরা আনআ’মের ৫৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: তাঁর কাছেই রয়েছে অদৃশ্য জগতের চাবি ।

এ গুলো তিনি ছাড়া কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের কোনো পাতাও ঝরে না তাঁর অগোচরে। কোন শস্য-কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুষ্ক দ্রব্য পতিত হয় না তাঁর অগোচরে; এসবই তাঁর স্পষ্ট বা প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।

একইভাবে সুরা তাগাবুনের চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা আছে, তিনি তা জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর। আল্লাহ অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
উল্লেখ্য মহান আল্লাহর সত্তাগত বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলোকে পুরোপুরি বোঝা বা জানা মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়।

কারণ মানুষের জ্ঞান বা উপলব্ধির ক্ষমতা সীমিত। আল্লাহ শব্দটি মহান আল্লাহর অন্যতম নাম। মহান আল্লাহর অন্য নামগুলো তাঁকে জানার ক্ষেত্রে সহায়ক হয় মাত্র ও তাঁর অস্তিত্বের কিছু নিদর্শন তুলে ধরে মাত্র, কিন্তু তাঁকে পুরোপুরি জানার মাধ্যম হয় না। কারণ, মহান আল্লাহ হচ্ছেন তুলনাহীন।

কোনো কিছুই তাঁর সঙ্গে তুলনার যোগ্য নয়। মহান আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শনগুলোই হচ্ছে তাঁর নানা নাম। মহান আল্লাহ নিজেই এসব নামের মাধ্যমে নিজেকে কিছুটা প্রকাশ করেছেন। তাই আল্লাহর নামগুলোকেই স্বয়ং আল্লাহ বলা যায় না। ইমাম সাদিক্ব (আ) বলেছেন, আল্লাহ নামটি আল্লাহ থেকে ভিন্ন। এই নামটিও একটি সৃষ্ট বিষয়। তাই কোনো সৃষ্ট বিষয় ও কোনো নাম যা আল্লাহর সত্ত্বার ওপর আরোপ করা হয় তা স্বয়ং স্রস্টা হতে পারে না।

আল্লাহকে নানা নাম ধরে ডাকা হয়। কিন্তু তিনি ওইসব নামের চেয়ে ভিন্ন কিছু। ওই নামগুলোই স্বয়ং তাঁর অস্তিত্ব নয়। যা কিছু কোনো কিছুর বর্ণনা বা কোনো বৈশিষ্ট্য বা গুণের বর্ণনা তা একটি সীমিত বিষয় এবং তা আল্লাহর পরিচয়কে তুলে ধরতে পারে না। মহান আল্লাহ বর্ণনাতীত ও বর্ণনার ঊর্ধ্বে।

সুরা সাফফাতের ১৮০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
পবিত্র আপনার পরওয়ারদেগারের অদ্বিতীয় ও সর্বশক্তিমান সত্তা, তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সেসব থেকে যেসবকে তারা তথা মানুষেরা বর্ণনা করে অজ্ঞতাসুলভ বর্ণনার মাধ্যমে। মহান আল্লাহ’র অনেক নাম রয়েছে। মহানবী (সা) বলেছেন, আল্লাহর ৯৯টি এমন নাম রয়েছে যে সেসব নাম নিয়ে আল্লাহকে ডাকা হলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আসলে সব মহৎ গুণ ও বৈশিষ্ট্যই আল্লাহর রয়েছে। তাই মহান আল্লাহর গুণ ও নাম ৯৯টিরও বেশি। তবে মহানবীর উল্লেখিত ওই ৯৯টি নাম হচ্ছে বিশেষ কিছু নাম যা উচ্চারণ করে মানুষ বেহেশত ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করে।

আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা, মুখস্থ করা বা পড়াই কি যথেষ্ট? আমাদের আচার-আচরণে, স্বভাব-চরিত্রে ও মনে-প্রাণে সেসব নামের আলোর প্রতিফলন বা অনুসরণও থাকতে হবে।

যেমন, কোনো ব্যক্তি যদি এতটা দয়ালু ও দানশীল হন যে কোনো কিছুর আশা না করেই দান করেন এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি তার কাছে আবেদন বা অনুরোধ জানানোর আগেই তার চাহিদা মেটান ও তার সমস্যার সমাধান করেন ও বিনিময়ে কিছুই ও এমনকি ধন্যবাদও আশা না করেন তাহলে মহান আল্লাহর জাওয়াদ নামটির কিছু প্রতিফলন তার মধ্যে হয়েছে বলে বলা যায়। মহান আল্লাহ জীবন দানকারী ও মৃতকে জীবিত করেন। হযরত ঈসা (আ)ও মহান আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে নিজের মধ্যে ওই স্বভাবের প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছেন এবং ওই নাম ব্যবহার করে মৃতদের জীবিত করেছেন।

মহান আল্লাহ’র নামগুলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশক কিছু আলোক শিখা। অস্তিত্বগুলো সৃষ্টি হয় আল্লাহর খালিক্ব নামের মাধ্যমে, রিজিক পায় রাজ্জাক নামের মাধ্যমে, আরোগ্য লাভ করে শাফিই নামের মাধ্যমে, হেদায়াত বা সুপথ পায় হাদি নামের মাধ্যমে। এ জন্যই মানুষ রোগগ্রস্ত হলে বলে আল্লাহু শাফিই এবং জালিমের সাজা চায় আল্লাহু মুন্তাকিম বলে, কিংবা রুজির প্রাচুর্য চায় আল্লাহকে রাজ্জাক নামে ডেকে।

আল্লাহর এসব নাম ও গুণ আল্লাহর সত্ত্বা থেকেও পৃথক নয়। আমরা দুর থেকে সাগরকে প্রশান্ত দেখি। কিন্তু কাছে আসলে দেখি তাতে রয়েছে ছোট ও বড় অনেক ঢেউ। #