‘আ্লাদিনের চেরাগ নেই’ জনগনের হাতে যে লকডাউন দিলেই মুহুর্তে সব ঠিক করে ফেলবে – মীর্জা ফখরুল

আপডেট: এপ্রিল ১৩, ২০২১
0

সরকারের কোনো সমন্বয় নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই, কোনো রোড ম্যাপ নেই। এই যে ৭ দিন দিয়েছে তার পরে কী হবে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ সরকারের কোনো রোডম্যাপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

‘‘ হাউ ডু দে প্ল্যান টু ফিট দেট কমন পিপলস, যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে খাওয়ার তারা কি ব্যবস্থা করছেন? এই লোকগুলোকে তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই তাকে লকডাউন দিয়ে কী করবে, করোনা দিয়ে কী করবে- সে তো চিন্তা করতে পারবে না। এই সংখ্যা কিন্তু অনেক।”

কীভাবে লকডাউন সফল কিভাবে করা যাবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ ব্যাপারটা তো সহজ নয়, অত্যন্ত কঠিন নিসন্দেহে- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরে আপনার এদেশটা ড্যান্সলি পপুলেটেড এরিয়া, ১৮ কোটি মানুষ এখানে। এখনো তো আলাউদ্দিন চেরাগ কারো হাতে নেই যে, মুহুর্তে ঠিক করে ফেলবেন।”

‘‘ আমরা একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং অতীতে আমরা সরকারে ছিলাম সেই হিসেবে বলতে চাই যে, এ্রখানে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আপনারা প্রত্যেকটা এলাকাতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেন-সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও, বিশেষজ্ঞ তাদেরকে নিয়ে কমিটি তৈরি করেন। দে উইল সুপারভাইজ যে ঠিকমতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা? বাংলাদেশে তো ইতিহাস আছে ভাই, আমরা বন্যার সময়ে কিভাবে দুযোর্গ মোকাবিলা করেছি, আমরা কিভাবে সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলা করেছি, সব সময় কিন্তু আমরা অতীতে এসব মোকাবিলা করেছি। সেই ভাবেই যদি আপনি জনগনকে সম্পৃক্ত না করেন তাহলে তো তারা সুফল পাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ এখানে কী হচ্ছে? জনগনকে সরকার সম্পৃক্ত করতে চায় না একটা মাত্র কারণে যে, তারা লুটপাট করবে, টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে।”

লকডাউনের আপনি বিরোধিতা করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, ‘‘ না আমরা লকডাউনের বিরোধিতা করছি না। তারা লকডাউন নাম হিসেবে ব্যবহার করছে।এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি যে, অকার্য্কর একটা শাটডাউন করছে। হাজার হাজার লোকজন বেরুচ্ছে, হাজার হাজার লোক বাজারে যাচ্ছে। দেখুন কতটা স্ববিরোধিতা। আবার শিল্পকলকারখানা খোলা রাখছে। কোনো পরিকল্পনাই নাই।”

তিনি বলেন, ‘‘সবাই সম্পৃক্ত করেন। লেট ইট বি পিপলস প্রোভলেম। ধরেন কমিশনারদের দায়িত্ব দেন, কথার কথা বলছি এরা তো সেভাবে নির্বাচিত নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে জড়িত করেন, তাদেরকে বলেন যে, এটা সুপারভাইস করতে। পরীক্ষার জন্য যেসব ইউনিট বা সেন্টার করেছে যেটা যেন তারা দেখেন-প্রোপার টেস্ট কিটস আছে কিনা।”

‘‘ আপনি তো এখানে গণস্বাস্থ্যকে টেস্ট কিটস তৈরি করতে দিলেন না। আপনি পুরোপুরিভাবে যেটা করেছেন সেটা হলো ব্যবসা করার জন্য, দুর্নীতি করার জন্য।দেশীয় ভাষায় একটা কথা আছে নিয়ত। নিয়ত যদি ঠিক থাকে সব ঠিক থাকবে। তাদের নিয়তই খারাপ। তাদের নিয়ত হচ্ছে কানাডাতে বাড়ি বানাবে, বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি বানাবে এখান থেকে দুর্নীতি করে।”

গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ বা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘‘ যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বর্তমান অবির্বাচিত গণবিচ্ছিন্ন সরকার লকডাউনের নামে একটা অকার্য্কর শাটডাউন জাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখান না লকডাউন না শাটডাউন। আপনি পত্রিকাতে দেখছেন নিউ মার্কেটের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ, ফেরিতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ- এগুলো হচ্ছে তাদের লকডাউনের নমুনা।”

‘‘এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দিন আনে দিন খায় মানুষজনে। এটা দায়িত্ব সরকারের যে এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। যেটা সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

‘দেশে করোনার কোনো টেস্ট নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এবার সম্ভবত দক্ষিন আফ্রিকার যে ভেরিয়েন্ট, সেই ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। এই ভাইরাস প্রচন্ডভাবে সংক্রামক, এটাতে মৃতের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তাই ঘটতে যাচ্ছে এখন। গতকাল ৮৩জন মারা গেছেন। টেস্ট তো হচ্ছে না। আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি, আমার বাসায় যারা কাজ করেন তাদের টেস্ট করানোর জন্য আামি গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি। তারা প্রত্যেকটি উত্তরায় একটা সেন্টারে যায়, প্রত্যেক দিন বলে যে, ফরম নাই করা যাবে না। শেষে আজকে ভোর ৬টায় পাঠিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, যে গেছে তার সিরিয়াল ৫০ নাম্বার। বাকিরা সিরিয়াল পাই নাই। ওই সেন্টারে দেড়‘শ বেশি হয় নাই টেস্ট।”

‘‘ অর্থাত এখানে বড় একটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সরকার। জনগনকে বিভ্রান্ত করছে, বুঝাচ্ছে। টেস্ট হচ্ছে না। টেস্টের সুবিধাও কিন্তু সারা দেশে নাই। ২০ টি জেলায় কোনো সুবিধাই নাই, তাদেরকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টেস্ট করতে হয়।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকের পত্রিকায় এসছে একটা খবর বিভিন্নভাবে যে, কী চরম উদাসীনতা, কী চরম দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা হতে পারে যে, দশ মাস আগে এসে এয়ারপোর্টের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্যে যে প্রকল্পগুলোর জন্য যেসব ইকুপমেন্টেসগুলো এসেছে সেসব ছাড় হয়নি। সেখানে তিন‘শটা ভেন্টিলেটর আছে, সেখানে অক্সিজেন সরবারহ করা সামগ্রি আছে… ।”

‘‘ প্রশ্ন হচ্ছে যে, প্রকল্প নেয়া হয়েছে, দশ মাস আগে ইকুপমেন্ট এসেছে কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কতটা ব্যর্থতা হতে পারে যে, এখন পর্যন্ত সেটা ছাড় করে হাসপাতালগুলোতে তা পৌঁছাতে পারেনি। এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধ নেই যার ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে তারা আজকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং জনগনকে তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।”

সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি’

চাল-সোয়াবিন তেল-চিনি-আটা-ময়দাসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের সময়ে যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে মূলত তারেই ধারাবাহিকতায় লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দুরীকরণের কোনো বিকল্প নাই।”

‘‘ এই সরকারের জনগনের কাছে কোনো দায়বন্ধতা নেই বিধায় তারা জনগনের কলাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণময় সরকার প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি জনগনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার।”

‘বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নের পরিকল্পনার অভিযোগ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার দিবসকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটালো সরকার আমি এটাকে পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে করি এবং স্বাধীনতা দিবসের এই অবস্থাটা তৈরি করে এখন তারা এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করবার আরেক বড় প্রজেক্ট তারা হাতে নিয়েছে। আমরা যেটা শুনতে পারছি, যেটা প্রকারান্তরে বুঝতেও পারছি যে, এই লকডাউনের মধ্যেও তারা আমাদের যারা বিরোধী দলে আছে তাদের এবং যারা কথা বলছেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের ওপর আবার তারা চড়াও হবে এবং গ্রেপ্তার করবে।”

‘‘ ইতিমধ্যে হেফাজতের বিভিন্ন নেতা এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছে এবং কিছু লোককে গ্রেপ্তারও করেছে। আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমরা হেফাজতের পক্ষে কথা বলছি না। আজকে কথা বলার অধিকার সকলে আছে। কথা বলার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এটাকে বন্ধ করে সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। ২৬ মার্চ তাদের(সরকার) প্রোভোকেশন ছিলো সবচেয়ে বেশি, সেই প্রোভোকেশন সব জায়গায়, ব্রাক্ষনবাড়ীয়াতে তাদের প্রোভেকেশন ছিলো… তারা তৈরি করেছে সিচুয়েশনটা, সেই সিচুয়েশনটা তৈরি করে এখন তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সালথায় বিএনপির নেতাক-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা একথা বলতে চাই, এভাবে পরিকল্পিতভাবে জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোনো দিন কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার হোক, একনায়োকতান্ত্রিক সরকার হোক বা ফ্যাসীবাদী সরকার হোক তারা কোনো দিন টিকে থাকতে পারে নাই-এটা ইতিহাসে নেই। আমি আবারো আহবান জানাতে চাই, এখান থেকে বেরিয়ে আসুন।”

‘‘ শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আপনাদের এবং জনগনের চোখের দৃষ্টিটা বুঝে নিন, ভাষাটা বুঝে নিন। আপনারা জনগনের অধিকার ফিরিয়ে দেন। দেশে একটা প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করবার জন্য একটা নিরপেক্ষ সরকা্রের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”

‘খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকেও আমি এখানে আসার আগে খবর নিয়েছি- একই অবস্থা তিনি স্টেবেল আছেন।ইতিমধ্যে তার চিকিতসাও শুরু হয়েছে।”

‘‘ আমরা দোয়া করছি আল্লাহ‘তালার কাছে, সারাদেশের মানুষ দোয়া করছে তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন। আমি আবারো দেশবাসীর কাছে সেই দোয়া চাই যে, আল্লাহ‘তালা যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সবসময় দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে আসছি। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবকে যে তিনি তার দুই একদিনের কথার মধ্যে একটা জরুরী কথা বলেছে যে,এই করোনার মধ্যে অবিলম্বে তার পূর্ণাঙ্গ জামিন দেয়া প্রয়োজন। আমি তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এজন্য আামি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

‘‘ হাউ ডু দে প্ল্যান টু ফিট দেট কমন পিপলস, যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে খাওয়ার তারা কি ব্যবস্থা করছেন? এই লোকগুলোকে তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই তাকে লকডাউন দিয়ে কী করবে, করোনা দিয়ে কী করবে- সে তো চিন্তা করতে পারবে না। এই সংখ্যা কিন্তু অনেক।”

কীভাবে লকডাউন সফল কিভাবে করা যাবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ ব্যাপারটা তো সহজ নয়, অত্যন্ত কঠিন নিসন্দেহে- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরে আপনার এদেশটা ড্যান্সলি পপুলেটেড এরিয়া, ১৮ কোটি মানুষ এখানে। এখনো তো আলাউদ্দিন চেরাগ কারো হাতে নেই যে, মুহুর্তে ঠিক করে ফেলবেন।”

‘‘ আমরা একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং অতীতে আমরা সরকারে ছিলাম সেই হিসেবে বলতে চাই যে, এ্রখানে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আপনারা প্রত্যেকটা এলাকাতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেন-সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও, বিশেষজ্ঞ তাদেরকে নিয়ে কমিটি তৈরি করেন। দে উইল সুপারভাইজ যে ঠিকমতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা? বাংলাদেশে তো ইতিহাস আছে ভাই, আমরা বন্যার সময়ে কিভাবে দুযোর্গ মোকাবিলা করেছি, আমরা কিভাবে সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলা করেছি, সব সময় কিন্তু আমরা অতীতে এসব মোকাবিলা করেছি। সেই ভাবেই যদি আপনি জনগনকে সম্পৃক্ত না করেন তাহলে তো তারা সুফল পাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ এখানে কী হচ্ছে? জনগনকে সরকার সম্পৃক্ত করতে চায় না একটা মাত্র কারণে যে, তারা লুটপাট করবে, টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে।”

লকডাউনের আপনি বিরোধিতা করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, ‘‘ না আমরা লকডাউনের বিরোধিতা করছি না। তারা লকডাউন নাম হিসেবে ব্যবহার করছে।এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি যে, অকার্য্কর একটা শাটডাউন করছে। হাজার হাজার লোকজন বেরুচ্ছে, হাজার হাজার লোক বাজারে যাচ্ছে। দেখুন কতটা স্ববিরোধিতা। আবার শিল্পকলকারখানা খোলা রাখছে। কোনো পরিকল্পনাই নাই।”

তিনি বলেন, ‘‘সবাই সম্পৃক্ত করেন। লেট ইট বি পিপলস প্রোভলেম। ধরেন কমিশনারদের দায়িত্ব দেন, কথার কথা বলছি এরা তো সেভাবে নির্বাচিত নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে জড়িত করেন, তাদেরকে বলেন যে, এটা সুপারভাইস করতে। পরীক্ষার জন্য যেসব ইউনিট বা সেন্টার করেছে যেটা যেন তারা দেখেন-প্রোপার টেস্ট কিটস আছে কিনা।”

‘‘ আপনি তো এখানে গণস্বাস্থ্যকে টেস্ট কিটস তৈরি করতে দিলেন না। আপনি পুরোপুরিভাবে যেটা করেছেন সেটা হলো ব্যবসা করার জন্য, দুর্নীতি করার জন্য।দেশীয় ভাষায় একটা কথা আছে নিয়ত। নিয়ত যদি ঠিক থাকে সব ঠিক থাকবে। তাদের নিয়তই খারাপ। তাদের নিয়ত হচ্ছে কানাডাতে বাড়ি বানাবে, বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি বানাবে এখান থেকে দুর্নীতি করে।”

গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ বা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘‘ যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বর্তমান অবির্বাচিত গণবিচ্ছিন্ন সরকার লকডাউনের নামে একটা অকার্য্কর শাটডাউন জাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখান না লকডাউন না শাটডাউন। আপনি পত্রিকাতে দেখছেন নিউ মার্কেটের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ, ফেরিতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ- এগুলো হচ্ছে তাদের লকডাউনের নমুনা।”

‘‘এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দিন আনে দিন খায় মানুষজনে। এটা দায়িত্ব সরকারের যে এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। যেটা সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

‘দেশে করোনার কোনো টেস্ট নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এবার সম্ভবত দক্ষিন আফ্রিকার যে ভেরিয়েন্ট, সেই ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। এই ভাইরাস প্রচন্ডভাবে সংক্রামক, এটাতে মৃতের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তাই ঘটতে যাচ্ছে এখন। গতকাল ৮৩জন মারা গেছেন। টেস্ট তো হচ্ছে না। আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি, আমার বাসায় যারা কাজ করেন তাদের টেস্ট করানোর জন্য আামি গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি। তারা প্রত্যেকটি উত্তরায় একটা সেন্টারে যায়, প্রত্যেক দিন বলে যে, ফরম নাই করা যাবে না। শেষে আজকে ভোর ৬টায় পাঠিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, যে গেছে তার সিরিয়াল ৫০ নাম্বার। বাকিরা সিরিয়াল পাই নাই। ওই সেন্টারে দেড়‘শ বেশি হয় নাই টেস্ট।”

‘‘ অর্থাত এখানে বড় একটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সরকার। জনগনকে বিভ্রান্ত করছে, বুঝাচ্ছে। টেস্ট হচ্ছে না। টেস্টের সুবিধাও কিন্তু সারা দেশে নাই। ২০ টি জেলায় কোনো সুবিধাই নাই, তাদেরকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টেস্ট করতে হয়।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকের পত্রিকায় এসছে একটা খবর বিভিন্নভাবে যে, কী চরম উদাসীনতা, কী চরম দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা হতে পারে যে, দশ মাস আগে এসে এয়ারপোর্টের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্যে যে প্রকল্পগুলোর জন্য যেসব ইকুপমেন্টেসগুলো এসেছে সেসব ছাড় হয়নি। সেখানে তিন‘শটা ভেন্টিলেটর আছে, সেখানে অক্সিজেন সরবারহ করা সামগ্রি আছে… ।”

‘‘ প্রশ্ন হচ্ছে যে, প্রকল্প নেয়া হয়েছে, দশ মাস আগে ইকুপমেন্ট এসেছে কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কতটা ব্যর্থতা হতে পারে যে, এখন পর্যন্ত সেটা ছাড় করে হাসপাতালগুলোতে তা পৌঁছাতে পারেনি। এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধ নেই যার ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে তারা আজকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং জনগনকে তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।”

সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি’

চাল-সোয়াবিন তেল-চিনি-আটা-ময়দাসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের সময়ে যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে মূলত তারেই ধারাবাহিকতায় লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দুরীকরণের কোনো বিকল্প নাই।”

‘‘ এই সরকারের জনগনের কাছে কোনো দায়বন্ধতা নেই বিধায় তারা জনগনের কলাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণময় সরকার প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি জনগনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার।”

‘বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নের পরিকল্পনার অভিযোগ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার দিবসকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটালো সরকার আমি এটাকে পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে করি এবং স্বাধীনতা দিবসের এই অবস্থাটা তৈরি করে এখন তারা এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করবার আরেক বড় প্রজেক্ট তারা হাতে নিয়েছে। আমরা যেটা শুনতে পারছি, যেটা প্রকারান্তরে বুঝতেও পারছি যে, এই লকডাউনের মধ্যেও তারা আমাদের যারা বিরোধী দলে আছে তাদের এবং যারা কথা বলছেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের ওপর আবার তারা চড়াও হবে এবং গ্রেপ্তার করবে।”

‘‘ ইতিমধ্যে হেফাজতের বিভিন্ন নেতা এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছে এবং কিছু লোককে গ্রেপ্তারও করেছে। আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমরা হেফাজতের পক্ষে কথা বলছি না। আজকে কথা বলার অধিকার সকলে আছে। কথা বলার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এটাকে বন্ধ করে সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। ২৬ মার্চ তাদের(সরকার) প্রোভোকেশন ছিলো সবচেয়ে বেশি, সেই প্রোভোকেশন সব জায়গায়, ব্রাক্ষনবাড়ীয়াতে তাদের প্রোভেকেশন ছিলো… তারা তৈরি করেছে সিচুয়েশনটা, সেই সিচুয়েশনটা তৈরি করে এখন তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সালথায় বিএনপির নেতাক-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা একথা বলতে চাই, এভাবে পরিকল্পিতভাবে জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোনো দিন কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার হোক, একনায়োকতান্ত্রিক সরকার হোক বা ফ্যাসীবাদী সরকার হোক তারা কোনো দিন টিকে থাকতে পারে নাই-এটা ইতিহাসে নেই। আমি আবারো আহবান জানাতে চাই, এখান থেকে বেরিয়ে আসুন।”

‘‘ শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আপনাদের এবং জনগনের চোখের দৃষ্টিটা বুঝে নিন, ভাষাটা বুঝে নিন। আপনারা জনগনের অধিকার ফিরিয়ে দেন। দেশে একটা প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করবার জন্য একটা নিরপেক্ষ সরকা্রের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”

‘খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকেও আমি এখানে আসার আগে খবর নিয়েছি- একই অবস্থা তিনি স্টেবেল আছেন।ইতিমধ্যে তার চিকিতসাও শুরু হয়েছে।”

‘‘ আমরা দোয়া করছি আল্লাহ‘তালার কাছে, সারাদেশের মানুষ দোয়া করছে তিনি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন। আমি আবারো দেশবাসীর কাছে সেই দোয়া চাই যে, আল্লাহ‘তালা যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সবসময় দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে আসছি। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবকে যে তিনি তার দুই একদিনের কথার মধ্যে একটা জরুরী কথা বলেছে যে,এই করোনার মধ্যে অবিলম্বে তার পূর্ণাঙ্গ জামিন দেয়া প্রয়োজন। আমি তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এজন্য আামি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”