আ.লীগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না: রিজভী

আপডেট: জুন ১৬, ২০২২
0

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। এখন অনেক গণমাধ্যম দেখা যায় ঠিকই কিন্তু সরকার সেগুলোকে ভয় ভীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আজকের বাংলাদেশ” শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা মানুষের স্বাধীনতা হরণ করতে গিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে তারা তো ফ্যাসিস্ট। আজকে ফ্যাসিবাদ আবারো দেখছি। যেমনটি ছিলো ১৯৭৫ সালে। তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। ইটালীতে যে ফ্যাসিজম ও জার্মানির নাৎসীবাদের আরেক রূপ বাংলাদেশে আওয়ামী বাকশাল বা ফ্যাসিবাদ। তারা ১৪ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা মানুষের ভোট ডাকাতি করে নিশিরাতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ১৯৭৫ সালে বাকশাল করেছিল আওয়ামী লীগ। সেসময় ৪ টি বাদে অন্যসব গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিলো। সেই আওয়ামী লীগ আবারো ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইন করেছে। এই আইনে মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আদকে গণমাধ্যমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিএনপি হচ্ছে বাকস্বাধীনতার পক্ষে। বিএনপির শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার মিডিয়াকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একসাথে যায় না। এখন অনেক গণমাধ্যম দেখা যায় ঠিকই কিন্তু সরকার সেগুলোকে ভয় ভীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। যার উদাহরণ এখন পদ্মাসেতু নিয়ে সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত করা হচ্ছে। এটাই তো ফ্যাসিবাদ। কই খালেদা জিয়ার শাসনামলে তো অসংখ্য ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে সেসময় তো এমন ঢাকঢোল পেটানো হয় নি।

রিজভী বলেন, সরকার নাকি নিজের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বরং চীনের কাছ থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে পদ্মাসেতু করা হয়েছে। যার ঋণের বোঝা আমাদের সবাইকে শোধ করতে হবে। আসলে যে টাকা খরচ হওয়ার কথা তা হয়নি। বরং বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। মূলত এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে আশংকা করেছেন তা কেনো? সবই তো আপনার নিয়ন্ত্রণে। আপনার এতো বাহিনী, এতো গোয়েন্দা সংস্থা তাহলে তারা কী করে? এটাকেই বলে যে ঠাকুর ঘরে কে রে? আপনার হাতে সবকিছু আর আপনিই দুর্ঘটনার আশংকা করছেন! আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বিএনপির মৃত নেতার নামেও মিথ্যা মামলা দেয়। কিন্তু আমাদের আশংকা হয় যে আপনার লোকেরা কী এমন অঘটন ঘটিয়ে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে!

রিজভী বলেন, আপনার হিংসাশ্রয়ী আচরণ তো ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আপনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পদ্মাসেতু থেকে টুস করে ফেলে দিবেন? নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিকে চুবাবেন। এখন তো পদ্মাসেতুর নাম শুনলেই এখন ভয় হয়। কারণ শেখ হাসিনা এসব কথা বলে এবং পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছেন। তারা নাকি একেবারে স্বর্গে চলে যাবে।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর শুরু থেকেই সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। গোটা জাতিকে ঋণে জর্জরিত করেছে প্রধানমন্ত্রী। ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এখন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে। আর কতো হবে তা বলা যায় না। একটি শিশু জন্মের পর থেকেই ঋণে জর্জরিত। আমরা ভয়ংকর একদলীয় শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ফ্যাসিজমের নতুন রুপে আবির্ভূত হয়েছে। নব্য বাকশাল ’৭৫ সালের চেয়ে আরো ভয়াবহ। আজকে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন না । দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি এবং আমারদেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আসলে যেই গণমাধ্যম মানুষের পক্ষে স্বাধীনতার পক্ষে সেগুলোকে সরকার বন্ধ করেছে। তার ওপর নতুন নতুন কালাকানুন করেছে। এ ধরনের কঠোর আইন ব্রিটিশ সরকারও করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা করেছেন। এটা নাৎসীবাদ ও ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ রুপ।

সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও শাহাদাত হোসেন বিপ্লবের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষকদলের সহ সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ।