ধর্ষণের অভিযোগ সাড়ে ৩ মাস আগের : ডাক্তারি পরীক্ষায় ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা !!

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৩
0

নিজস্ব প্রতিবেদক
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগটি ভিন্নখাতে মোড় নিচ্ছে। মামলার এজাহারে প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করা হলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরী ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা বলে জানা গেছে। এদিকে ওই কিশোরীর আপন ভাই সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, তার বোন মাদকাসক্ত, বেপরোয়া। মামলার আসামী বলেছেন, তিনি এবং তার পরিবারকে হেয় করতেই ওই কিশোরীকে দিয়ে এই মামলা সাজানো হয়েছে।

মামলায় ওই কিশোরী উল্লেখ করেছেন, বড় মনি তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। হোয়াটস অ্যাপে তাদের কথা হতো। ওই কিশোরীর সাথে তার ভাইয়ের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। ওই কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে গত ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় বড় মনির নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্লাটে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে আটকে রাখেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনি ওই কক্ষে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য তাকে হুমকিও দেয়া হয়।
তারপর প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখি ধর্ষণ করতো। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, এই ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। এদিকে, এই মামলার পর গত বুধবার ওই কিশোরীর বড় ভাই টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, তার বোন মাদকাসক্ত। তার বোন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে একটি পরিবারকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার বাবা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। আমার ছোট বোন শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখার সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা পরিবার থেকে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দিতো। পরিবার বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিতো। এ সময় সে চারিত্রিকভাবেও খারাপ হয়ে যায়। উঠতি বয়সের ছেলেদের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতো। প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে মামলার হুমকি দিতো। এর আগেও শহরের থানা পাড়ার এক ছেলেকে বিয়ে করেছিল।
ওই কিশোরীর বড় ভাই আরও বলেন, সম্প্রতি সময়ে যার বিরুদ্ধে সে ধর্ষণের মামলা করেছে তিনি আমাদের ফুপা। টাকার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। পাঁচ মাস আগে মেডিকেল টেষ্টে আমার বোনের অন্ত:স্বত্ত্বার বিষয়টি জানা যায়। অপরদিকে, এই মামলার পর আদালত থেকে আমাদের ফুপু পরিচয়দানকারী এক মহিলার জিম্মায় আমার বোনকে দেয়া হয়েছে, সে আমাদের আসল ফুপু নয়। সে আমাদের প্রতিবেশি ফুপু। ওই ফুপুর বাসা ফাঁকা থাকে। সেখানে অনেক ছেলে মেয়ে অনৈতিক কার্যক্রম করে থাকে বলেও অভিযোগ আছে।
এদিকে ওই কিশোরীকে নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় ওই কিশোরী একটি হোটেলে নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে স্বামী বলে পরিচয় দেয়। তার ইয়াবা সেবনের ভিডিওও ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বলেন, মিথ্যা এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদের চরিত্র হরণ করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার দিন আমি টাঙ্গাইলের বাইরে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ভাই সংসদ সদস্য। তিনি যেনো মনোনয়ন না পায়, সে ব্যাপারেও একটি পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এসব ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ওই কিশোরীর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরীর ২৪ সপ্তাহের বেশি (ছয় মাস) অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। পরে রিপোর্টটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেডিকেল রিপোর্টটি হাসপাতাল থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসেছে।