ইউক্রেনে শত শত বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে রুশ বাহিনী : জাতিসঙ্ঘ

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
0

জাতিসঙ্ঘ বলছে, রুশ সৈন্যরা শত শত ইউক্রেনীয় বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, এমন লোককেও কোনো বিচার ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে, যারা স্পষ্টতই কোনো হুমকির কারণ ছিল না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের হাতও ওপর দিকে তোলা ছিল।

জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে উপস্থাপন করা তাদের রিপোর্টে চারশ’রও বেশি এ রকম ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এতে সতর্ক করা হয় যে এসব ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। এতে বলা হয়, তদন্তকারীরা এমন একটি ঘটনাও পাননি যেখানে এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনো রুশ সৈন্যকে জবাবদিহি করতে হয়েছে বা শাস্তি হয়েছে।

সম্প্রতি রুশ দখলমুক্ত হওয়া ইউক্রেনীয় শহর খেরসনে গোলাবর্ষণের সময় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলছেন, একটি প্রশাসনিক ভবনের ওপর যখন গোলা এসে পড়ে, তখন এ দুই ব্যক্তি তার কাছাকাছিই ছিলেন। এছাড়া রুশ দখলে থাকা দোনেৎস্ক শহরে আরো এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। রুশ-সমর্থক বাহিনী এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনীয় রকেট নিক্ষেপকে দায়ী করে।

রয়টার্স জানাচ্ছে, পুরো পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টলাইন জুড়েই রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে রুশ দখলে থাকা দোনেৎস্ক শহরে আরো এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। রুশ-সমর্থক বাহিনী এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনীয় রকেট নিক্ষেপকে দায়ী করে।

রয়টার্স জানাচ্ছে, দোনেৎস্কের মেয়র আলেক্সি কুলেমজিন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের কেন্দ্রে ৪০টি বিএম-গ্রাদ রকেট এসে পড়ে।

এর আগে বুধবার ভোরে রাজধানী কিয়েভে রুশ আক্রমণের সময় ১২টিরও বেশি ইরানে তৈরি শাহেদ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা।

রাশিয়া ও ইউক্রেন দু’পক্ষই বড় দিন উপলক্ষে কোনো যুদ্ধবিরতি করার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়।

ফলকার তুর্ক বলছেন, আরো আক্রমণ চালানো হলে ইউক্রেনের পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হতে পারে। তিনি বলেন, তিনি চাইছেন যেন এই অর্থহীন যুদ্ধ শেষ হয়।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট নামের বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে। নাম-প্রকাশ না করা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়, এ সপ্তাহেই কোনো এক সময় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ কথা ঘোষণা করতে পারেন।

রাশিয়া অক্টোবর মাস থেকেই ইউক্রেনের বিভিন্ন জ্বালানি অবকাঠামো উদ্দেশ করে আক্রমণ চালাচ্ছে এবং কিয়েভ থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই আরো বেশি বিমান প্রতিরক্ষা সহায়তা চাওয়া হচ্ছিল।

প্যাট্রিয়ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তবে ইউক্রেনে এর সরবরাহ হতে পারে সীমিত, এবং কতগুলো ব্যাটারি ইউক্রেনকে দেয়া হবে, তা জানা যায়নি। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৩০ লাখ ডলার।

বিবিসির প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা জোনাথন বিল বলছেন, ইউক্রেন চাইছে এমন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতে তার অবকাঠামোতে আঘাত হানার আগেই রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া যায়। তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি এলাকাগুলোয় রাশিয়া যেন বিমান আক্রমণের ক্ষেত্রে সুবিধা না পায়, এজন্যও তারা এটা চাইছে।

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন আগেও চেয়েছিল। কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্র সে অনুরোধ রাখেনি। কিন্তু ইরান রাশিয়াকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে, এমন হুমকির পর পরিস্থিতি বদলে গেছে, বলছেন জোনাথন বিল।

সূত্র : বিবিসি